জবাবদিহি নেই বলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলো দায়িত্ব পালনের নামে বিচারবহিভূর্ত হত্যা, নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন কিংবা ক্রসফায়ার দেওয়ার হুমকি দিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অন্যায় চর্চা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। ৩১ জুলাই কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে সেনাবহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকান্ডে ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহির অনুপস্থিত পরিনাম।
পুলিশ হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনি নামে এক গাড়িচালককে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর পল্লবী থানার তিন পুলিশ সদস্যের যাবজ্জীবন ও কথিত দুই সোর্সকে সাত বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। সাত বছর আগে ২০১৩ সালে প্রণীত নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের আওতায় এই প্রথমবারের মতো আদালতে কোনো রায় দেওয়া হলো।
যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক জাহিদুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান মিন্টু। অন্য দুই আসামি পুলিশের কথিত সোর্স রাজধানীর মিরপুর সেকশন-১১-এর রাসেল ও সুমন। তাদের সাত বছর করে কারাদন্ড হয়েছে। দন্ডিত আসামিদের মধ্যে এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু ও রাসেল পলাতক। এ ছাড়া আগে থেকেই কারাগারে আছেন এসআই জাহিদুর রহমান ও সুমন। জামিনে ছিলেন এএসআই রাশেদুল ইসলাম।
রায়ের পর রাশেদুলকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে অর্থদন্ড, অনাদায়ে বিভিন্ন মেয়াদের বাড়তি কারাদন্ডে দন্ডিত করার রায় দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে।
২০১৪ সালের ৭ আগস্ট জনির ভাই রকি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারি যে প্রতিবেদন দেন তাতে তিন পুলিশ কর্মকর্তা ও দুই কথিত সোর্সের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলেছেন, এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তবে আসামিপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। পুলিশ হেফাজতে কাউকে নির্যাতন চালানো আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমাদের বিশ্বাস, এ রায়টি পুলিশ সদস্যদের আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করবে। পুলিশ বাহিনীর সুনাম রক্ষায় যার বিকল্প নেই।
সুতরাং পুলিশ হেফাজতে প্রত্যেকটি হত্যা, নির্যাতন, আইন ও বিচার বিভাগে আমলে নেওয়া হলে দেশ ও জাতির উপকারই হবেনা বরং আইন শৃংখলা বাহিনী যে আইনের উর্দ্ধে নয় তা জাতির কাছে স্পষ্ট হবে।