দেশবাসী শোকাহত চিত্তে স্মরণ করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালরাতে শাহাদাতবরণকারী সবাইকে।প্রতি বছর আমরা যেভাবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালির ইতিহাসে প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্রের স্থপতিকে স্মরণ করি, এবারের প্রেক্ষিত তা থেকে ভিন্ন। এ বছর জাতীয় শোক দিবস পালিত হচ্ছে এমন সময়, যখন চলছে স্বাধীনতার এই মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকী। যদিও বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে জন্মশতবার্ষিকীর সব আয়োজন স্থগিত রয়েছে; বঙ্গবন্ধু স্মরিত হবেন কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে।
দুর্ভাগ্য আমাদের। পঁচাত্তরের পর ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে গণতন্ত্র, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও সম্প্রীতির সুমহান আদর্শ মুছে ফেলার অপচেষ্টা চলেছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তা ব্যর্থ প্রমাণ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগ তারই আত্মজার নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্রমেই ফিরেছে মুক্তিযুদ্ধের ধারা। একদিকে যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অনেকাংশে সম্পন্ন হয়েছে, অন্যদিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দৃশ্যমান অর্জন সম্ভব হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে নিম্নআয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উত্তরণ ঘটেছে বাংলাদেশের। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যে প্রত্যয় বারংবার ব্যক্ত করতেন; নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ তারই সার্থক রূপায়ণ। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিঃশেষ করতে পারেনি খুনিরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সংহতির প্রতীক বঙ্গবন্ধু এখনও তার জীবন, কর্ম ও বাণী দিয়ে জাতিকে শক্তি জুগিয়ে চলেছেন। আমরা নিশ্চিত, অনাগত দিনগুলোতেও বঙ্গবন্ধু হয়ে থাকবেন বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য প্রেরণার অনিঃশেষ বাতিঘর।
এক শতাব্দী আগে বাংলার প্রত্যন্ত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু যেভাবে উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছিলেন, তা বিশ্বেরও বিস্ময়। কিন্তু প্রতি বছর ১৫ আগস্ট সেই বিস্ময় ছাপিয়ে আমাদের মধ্যে নিখাদ বেদনার জন্ম দেয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপনের নানা আয়োজনের মধ্যেও তাই আমাদের হৃদয়ের তন্ত্রীতে বেজে ওঠে সকরুণ সুর। বস্তুত পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ললাটে যে অমোচনীয় কলঙ্ক লেপ্টে দিয়েছিল, তা থেকে যেন বাঙালি জাতির মুক্তি নেই। আমরা এও দেখতে চাই, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন কেবল আনুষ্ঠানিকতায় সীমিত থাকছে না। তার জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে মুক্তি ও মানবতার পক্ষে কাজ করছে সবাই- এই আহ্বান দল-মত নির্বিশেষে সবার প্রতি। আমরা বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু নির্দিষ্ট কোনো দলের নন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবাই যদি বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগ করি, সেটাই হবে তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। করোনা পরিস্থিতিতে এই উপলব্ধি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।
আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি, বঙ্গবন্ধুর অন্তরজুড়ে ছিল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। তিনি চেয়েছিলেন, রাজনৈতিক মুক্তির পর বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি আসবে। বিশ্বের বুকে মর্যাদার সঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা।