মানবাধিকার খবর প্রতিবেদক
মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন : আমি মা-বাবার কাছে ফিরতে চাই, সেই সুযোগটুকু করে দেন আংকেল। মা-বাবার কাছে যেতে না পারলে আমার একা একা এখানে কিছুই ভালো লাগছে না। অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি দেশে মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে। সুদূর ভারত থেকে কথা গুলো মানবাধিকার খবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক রোটারিয়ান মো: রিয়াজ উদ্দিনকে গত ১৬ মে-২০২০ কান্না জড়িত ও আর্তনাতের কন্ঠে মোবাইল ফোনে বলেছিল সাকিব ওরফে সুমন (১০) নামে পথহারা ও হারিয়ে যাওয়া এক শিশু। সে বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণা লক্ষীকান্তপুর নুর আলী মেমোরিয়াল হোমে বন্দী আছে।
অনুসন্ধান ও সাকিবের কাছ থেকে জানা যায়, গত প্রায় ১বছর আগে বাড়িতে মা বকাবকি করলে, মায়ের সাথে অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে সাকিব। উদ্দেশ্যহীন ঘুরতে ঘুরতে, কখনো ট্রেনে,কখনো পায়ে হেঁটে, খেয়ে না খেয়ে চট্টগ্রাম থেকে বেনাপোল হয়ে চলে যায় ভারতীয় সীমান্তে। সীমান্ত অতিক্রম করে পেটরাপোল হয়ে বিএসএফ এর চোখ ফাঁকি দিয়ে ট্রেনে চলে যায় শিয়ালদহ। সেখানে খেয়ে না খেয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে থাকে সে। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে একটু খাবারের জন্য সেখানে একটি মুদির দোকানদারকে খাবার দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। খাবার চাইতে গিয়ে সেই দোকানেই কাজ নেয় এই ছোট্ট শিশুটি। শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। এ সংগ্রামে তাঁর কেটে যায় ৭/৮ মাস। এরইমধ্যে ভারতে করোনা মহামারির সংকট মুহূর্তে শুরু হয় লকডাউন।
এই লকডাউনে দোকান-পাট বন্ধ হয়ে গেলে, সে পরে মহাবিপদে। আবারও উদ্দেশ্যহীন শুরু হয় তার ঘোরাঘুরি। ঘুরতে ঘুরতে চলে যায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ভাঙ্গরের চন্ডীপুর। সেখানে একটি বন্ধ মিষ্টির দোকানে সামনে বসে খাবার না পেয়ে ক্ষুধার কষ্টে কাঁদতে ছিল।তখন ঐ দোকানের সামনে এক নারী দেখে তার মনে পরে যায় মায়ের কথা।ঐ নারীর চেহারা অনেকটাই মায়ের মত। অগত্যা ঐ নারীকে ছড়িয়ে ধরে তার কাছে সাকিব কান্না জড়িত কন্ঠে খাবার চায়। সাকিব ভুল বুঝতে পেরে ঐ নারীকে তার কষ্ঠের কথা শোনায়। সাকিবের কথা শোনার পর ঐ নারী ও তার স্বামী হাসেম আলী বৈদ্য তাদের বাড়িতে আশ্রায় দেন। হাসেম আলী শিশুটিকে থাকা খাওয়া ও পোষাকের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু সেখানে শিশুটি বেশি দিন থাকতে পারেনি।
স্থানীয় ভাঙ্গর থানা পুলিশ ঘটনাটি জানতে পেরে হাসেম আলীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে তুলে দেয় ভারতীয় সরকারি সংস্থা চাইল্ড লাইনের হাতে। চাইল্ড লাইন নিয়ম অনুসারে আদালতের মাধ্যমে তুলে দেয় শিশু সুরক্ষা হোমের হাতে। বর্তমানে শিশুটি সেখানেই নিরাপদে আছে। হোমটি মানবাধিকার খবরের খুবই পরিচিত।
একাধিকবার সুযোগ হয়েছে হোমটি পরিদর্শনের এবং সেখান থেকে মানবাধিকার খবরের মাধ্যমে অনেক শিশুকে আইনি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। হোমটির কর্নধার আসিফ ইকবাল জানিয়েছেন, শিশুটি আমাদের এখানে অনেকটা ভালো আছেন। সে গত ২৯ এপিল-২০২০ থেকে এখানেই রয়েছে।আমরাও সাকিবকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। বিষয়টি আমরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানিয়েছি। অনুরোধ করেছি রাজ্য সরকার শিশুটিকে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করুক। কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেছি।
শিশুটির মা-বাবার এখনো সঠিক সন্ধান পাওয়া যায়নি। কেউ সন্ধান পেলে জানাবেন। জানামতে, বাংলাদেশে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সুবর্নচর থানার চরক্লার্ক ইউনিয়ন, পোস্ট জনতা বাজার, আদর্শ কলোনীর আলালের বাড়ি। স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে শিশুটির মা-বাবার অনুসন্ধান চলছে। তার পিতার নাম কাসেম সেখ, মাতার নাম ফিরোজা খাতুন। শিশুটি যখন অজানা উদ্দেশ্য নিরুদ্দেশ হয়, তখন তারা চট্টগ্রামে আকবর শাহ থানাধীন একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতো। এখন তার মা-বাবা সেখানে আর থাকে না বলে জানা গেছে। তার বাবা একজন পিক-আপের ড্রাইভার।
মানবাধিকার খবর দীর্ঘ এক মাস অনুসন্ধান চালিয়ে গত ২০ জুন-২০২০ তার মা ফিরোজা বেগমের সন্ধান পায়। ফিরোজা বেগমের সন্ধান দেয় চট্রগ্রাম সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রনাধীন চাইল্ড হেলপ লাইনের কতৃপক্ষ। শিশুটির মা ফিরোজা বেগম মানবাধিকার খবরের এ প্রতিবেদককে জানান, তারা এখন চট্রগ্রামের পাহারতলী থানাধীন গ্রীন ভিউ এলাকায় থাকেন। সাকিব হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার মা ফিরোজা বেগম গত ১২-৫-২০২০ ইং পাহাড়তলী থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন যাহার নাম্বার -৩৮২।
মানবাধিকার খবর উদ্ধার পক্রিয়ায় কলকাতাস্থত উপ-দূতাবাসসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ শুরু করেছে। মানবাধিকার খবরের মাধ্যমে শিশু সাকিবের সাথে তার মাকে ফোনে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকে প্রায়ই মা-শিশু সাকিবের সাথে কথা হচ্ছে। কিছুটা হলেও তারা স্বস্থিতে আছেন।
লকডাউন চলে গেলে ও করোনা ভাইরাস বিশ্ব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে , "মানবাধিকার খবর " উদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহন করেছে। শিশুটিকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে মা বাবার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিশেষ চেষ্টা করছে মানবাধিকার খবর। করোনা ভাইরাস এর কারণে সারা বিশ্বের এই কঠিন পরিস্থিতিতেও মানবাধিকার খবর এর সামাজিক ও মানবিক কাজ অব্যাহত রয়েছে। এর আগেও মানবাধিকার খবর পত্রিকার উদ্যোগে দেশ-বিদেশে থেকে অসংখ্য নারী-শিশু উদ্ধার করে মা বাবা ও আইনের হাত তুলে দিয়ে সাফল্য দেখিয়েছে।
উল্লেখ, প্রথম আলো এবং ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার, বর্তমান সহ বিভিন্ন দৈনিক ও টিভি চ্যানেল সংবাদটি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে।