|
শীঘ্রই দেশে ফেরা হচ্ছে না অন্তঃসত্ত্বা রুমার |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
বর্তমানে নারী পাচার ভিন্ন রূপ ধারণ করছে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নারী পাচারকারী চক্র। অভিনব কৌশল অবলম্বনে বেড়েছে এর তৎপরতা। ডিজিটাল যুগ তাই পদ্ধতিও নতুন। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, টিকটক, লাইকিসহ বিভিন্ন ধরণের অ্যাপসের মাধ্যমে সমাজের ঘৃণিত কাজগুলো হচ্ছে। নেটে যোগাযোগের মাধ্যমে পরিচয় বন্ধুত্ব, বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িয়ে অডিও ভিডিওর মাধ্যমে নারীরাই বø্যামেলিংয়ের শিকার হচ্ছে। গ্রæপের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করা হচ্ছে। সম্প্রতি নারী সংগ্রহের আরেকটি উপায় টিকটক হ্যান্ডআউট পুলপার্টি। এই পার্টিও নামে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার নারীদের একত্রিত করে বিভিন্ন ধরণের চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করে দিচ্ছে। পাচারকারীদের টার্গেট বেশীরভাগই দরিদ্র ঘরের অসহায় নারীরা। এখন আন্তর্জাতিক নারী পাচার কারীদেও টাগের্ট বাংলাদেশ। এই চক্র টি সারাদেশে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে অভিনব উপায়ে সংগ্রহ করছে নারী। সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গালুরুতে এক বাংলাদেশি তরুণীর ওপর নির্যাতনের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর সংঘবদ্ধ নারী পাচারচক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এই অনুসন্ধান নতুন কিছু নয়। কোনো অঘটন ঘটার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে। সম্প্রতি পাচারের শিকার নারীরা দেশে ফিরে হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন থানায় মামলা করলে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের মডেল নদীসহ ২০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিছুদিন পর বা ঘটনা ধামাচাপা পড়লে আবার সব কিছু আগের মতো চলতে থাকে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উৎকোচের বিনিময়ে পাচারকারীদের সহায়তা করে থাকে। অন্যদিকে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নজির খুবই কম। অনেকে ধরা পড়েন না, যারা ধরা পড়েন, তারাও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসেন। গত ৯ জুন পাচারকৃত কিশোরী রুমার বোন মিনু ও তার মামা মানবাধিকার খবর অফিসে এসে রুমাকে ভারতের সেফ হোম থেকে উদ্ধার করে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে আকুল আবেদন জানায়। ঘটনার বিবরণে জানা যায় রুমার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখারী বড় দিগেই গ্রামে, পিতার নাম জালাল ফকির। রুমা ছিল সরল মনের মানুষ, সে গান জানত। তাদের পরিবার ঢাকায় কেরানীগঞ্জ থাকা অবস্থায় পাচার হওয়ার কিছুদিন আগে একটি মেয়ের সাতে রুমার পরিচয় হয়। ঐ মেয়ে ছিল পাচারকারী দলের সক্রিয় সদস্য। সে রুমাকে ফুসলিয়ে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে যায়। ভারতে নিয়ে রুমাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। শুরু হয় তার অন্ধকার জীবন। যে মেয়ে পাচার করে নিয়ে যায় তার সাথে রুমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এদিকে রুমার কাছে দেশে থাকা মা-বাবা ভাইবোন ও আত্মীয় স্বজনের কোনো নাম্বার না থাকায় দীর্ঘ ৭ বছর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। এরই মধ্যে রুমা দুই দুইটি বিবাহ করে। প্রথম ঘরে ৬ বছরের একটি ছেলে ও সন্তান রয়েছে। সেই সন্তান ভারতে পিতার হেফাজতে রয়েছে। দ্বিতীয় ঘরে এসে সে ৩ মাসের সন্তান সম্ভবা অবস্থায় অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য ভারতের চেন্নাইতে পুলিশের হাতে আটক হয়। বর্তমানে বেঙ্গালুরের ডেভানহালি জেলার উজালা হোমে রয়েছে। ভারতীয় হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে নীলা রানী। নাগরিকত্ব প্রমাণের অভাবে রুমা ওরফে নীলা ৩ মাসের গর্ভবর্তী হয়েও উক্ত হোমে আটক হয়ে মানবেতর জীবনযাবন করছে। মানবাধিকার খবর বিশ^স্ত সূত্রে এ খবর জানতে পেরে কয়েক দফা বেঙ্গালুরের উক্ত হোমে খোজ খবর নেয়। খোজ খবর নেওয়ার এক পর্যায়ে রুমা বাংলাদেশী পরিচয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসার আকুতি জানায়। অনাগত সন্তানকে ভ‚মিষ্টের কোন শিশু সনদে দিবে বা নিজেই লালন পালন করবেন বলেই জানায়। মানবাধিকার খবরের সূত্র রুমার আত্মীয় স্বজনকে খুজে বের করে ভিডিও কলে পরিচয় করিয়ে দেয়, তখন এক অপরকে দীর্ঘদিন পর দেখতে পেয়ে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি করে। জানা যায় রুমা পাচার হওয়ার তিন বছর আগে তার মা ডালিম বেগমও পাচার হয়ে যায়। এখনো তার খোঁজ মেলেনি। তার বাবা জালাল ফকির পরবর্তীতে বিবাহ করে পটুয়াখালীতে বসবাস করছে। সে ঘরে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। নারী ও শিশু পাচারকারীরা সমাজে যেমন ঘৃণিত অপরাধী। তেমনি তাদেরকে তিরস্কার করা উচিৎ। অপরদিকে নারী ও শিশু উদ্ধারকারীদেরও সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহায়তা এবং যথাযথ পুরষ্কার বা সম্মান দেখানো উচিৎ। তাহলে ভয়াবহ অবস্থার এ সামাজিক ব্যধি নারী ও শিশু পাচার ও পাচারকারী চক্রের তৎপরতা একটু হলেও এই সমাজ থেকে কমবে। ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া এক বোনের মেয়েকে দীর্ঘ আড়াই মাস রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে উত্তরাখন্ড রাজ্যে থেকে উদ্ধার করে মানবাধিকার খবর পত্রিকার সম্পাদক। ভারত,পাকিস্তান, চীন ও নেপাল এ চার দেশের সীমান্ত এলাকা রুদ্র্রপুর থেকে উদ্ধারের মধ্যে দিয়ে মানবাধিকার খবর সম্পাদক ২০১৫ সাল থেকে দেশ- বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অসহায় নারী ও শিশু উদ্ধার করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই`শ নারী ও শিশু উদ্ধার করে মা বাবা ও আইনের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হয়েছে। আমার এ সফলতা এদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রের চোখে না পরলেও দেশের বাইরে থেকে মানবিক মানুষ হিসেবে ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ মানবাধিকার খবর সম্পাদক পেয়েছে আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার। ২০১৯ সালে নারী ও শিশু উদ্ধার, মানবিক কাজ এবং সমাজ সেবা ও মানবাধিকার রক্ষায় বিশেষ অবদানে ভারত থেকে শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার গৌরব অর্জন করে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, নারী ও শিশু পাচারের শিকার অধিকাংশই তাদের প্রতোক্ষ পরোক্ষ সহায়তায় পাচার হয়ে থাকে। এজন্য নারী ও শিশু পাচার করা যত সহজ, উদ্ধার করা তার চেয়েও কঠিন। বাঘের মুখ থেকে শিকারকে যত সহজে উদ্ধার করা যায়, তার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন একজন সুন্দরী নারীকে পাচারকারী চক্রের হাত থেকে উদ্ধার করা। একজন নারী ও শিশু উদ্ধারকারীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে এ কাজটি করতে হয়। এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে আইনি লড়াই করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে এ কাজটি করে, সেই শুধু যানে কাজটি কত দুরূহ ও কঠিন। মানবিক কাজে নিয়োজিত মানবাধিকার খবর এ দুরূহ কাজটি করে যাচ্ছে। মানব কল্যানে নিয়োজিত মানবাধিকার খবর এর এ মানবিক কাজ অব্যাহত রাখতে সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছে। পাশাপাশি পাচারকারী চক্রের তৎপর বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করে তিরস্কার করা ও উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় সহায়তা দেওয়াসহ পুরষ্কারে ভূষিত করলে এধরণের কাজে উৎসাহ পাবে। ৭ বছর আগে ভারতের বেঙ্গালুরে পাচার হয়ে যায় ২২ বছরের এই কিশোরী রুমা। গত ৯ জুন ২০২১ বিকেলে ঢাকার মতিঝিল অফিসে কিশোরীর স্বজনদের আকুতিভরা অনুরোধে উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে মানব কল্যানে নিয়োজিত "মানবাধিকার খবর"। আশা করা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভারতথেকে কিশোরীকে ফিরিয়ে এনে স্বজনদের কাছে তুলে দিতে সক্ষম হবে। মানবাধিকার খবরের পক্ষথেকে এর আগেও প্রায় আড়াই`শ নারী ও শিশু উদ্ধার করে মা বাবা ও আইনের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য আন্তর্জাতিক পুরষ্কারসহ বিভিন্ন সন্মাননায় ভূষিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি। আসুন, আমরা সবাই নারী ও শিশু পাচারের মতো ঘৃণিত অপরাধে অভিযুক্ত পাচারকারীদের সামাজিক ভাবে তিরস্কার করি। পাশাপাশি পাচারের শিকার নারী ও শিশু উদ্ধারকারীদের সার্বিক সহায়তা ও উৎসাহ দিয়ে মনুষ্যত্বের পরিচয়ে মানবিক কাজে পাশে দাঁড়াই। রুমা বর্তমানে ভারতের বেঙ্গালুরের একটি সেফ হোমে রয়েছে। হোম কর্তৃপক্ষ মানবাধিকার খবর সূত্রকে গত ৯ ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখে জানায়, মেয়েটি যেহেতু অন্তঃসত্ত¡া, তার বাচ্চা প্রসব অতি নিকটে তাই এ সময় চলাফেলা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাচ্চা প্রসবের আগে তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া কোন অবস্থাতেই শুরু করা যাচ্ছে না। বাচ্চা প্রসবের পরও দুই এক মাস অপেক্ষা করতে হবে। এজন্য খুব শীঘ্রই রুমার দেশে ফেরা হচ্ছে না।
|
|
|
|
|