|
ধর্ষকের উল্লাস ধর্ষিতার কান্না, আমি অন্ধ আমি বোবা |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা ঘিরে রাজনীতির অন্দরে-বাইরে নানামুখী আলোচনার ঝড় বইছে। বেগম খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বক্তব্য সরকার ও বিরোধী দল দুই তরফ থেকেই উঠেছে। বিএনপি নেতারা চিকিৎসার জন্য প্যারোলে নয়, নিঃশর্ত মুক্তির কথাও বলেছেন। মেডিকেল বোর্ড এ কলাম লেখা পর্যন্ত শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পায়নি। মেডিকেল রিপোটার ভিত্তিতে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন মন্ত্রী-নেতারা। খবর চাউর হচ্ছে, নির্বাচন থেকে অযোগ্যই নয়, ভোটের সময় নির্বিঘেœ নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে সরকারও চাইছে অসুস্থতার অজুহাতে বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে। কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে, বিএনপি এ মুহূর্তে জনমত গঠনে কৌশলগত কারণে হঠকারী উগ্রপথ পরিহার করে শান্তির পথেই হাঁটছে। এখন পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি সমাবেশ করার অনুমতিও বিএনপি পায়নি। নেতারা স্বরাষ্টমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেও সুসংবাদ আনতে পারেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, এটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এখতিয়ার। পুলিশ প্রশাসন যে সরকারের রাজনীতির সিদ্ধান্তে বাইরে যাবে না তা নাবালক শিশুও বুঝতে পারে। জাতীয় পাটির বিশাল সমাবেশে দাঁড়িয়ে এরশাদ বলেছেন, আগামীতে ইতিহাস গড়বেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে একের পর এক জনসভা করে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিশাল বিজয় অর্জন করেও সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি না আন্দোলনের পথে হাঁটতে পারছে না একটি রাজনৈতিক সমাবেশ করতে পারছে! বিএনপি নেতারা রাজনীতিকে অকার্যকর প্রেস ব্রিফিংয়ের মধ্যে সীমিত করে এনেছেন। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিএনপি যেন মার্শাল ল জমানার মতো ঘরোয়া রাজনীতির অধিকার ভোগ করছে। বিএনপিকে কোনো ধরনের ছাড় বা সুযোগ না দেওয়ার কৌশল নিয়ে সরকার যে নির্বাচনের পথে হাঁটছে তা এখন সবার কাছেই দৃশ্যমান। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্লিন ইমেজের একজন সজ্জন ব্যক্তি। সব মহলেই তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিএনপির কঠিন রাজনৈতিক সময়ে স্নায়ুচাপ নিতে না পারা মির্জা ফখরুল ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একজন হৃদরোগী হিসেবে বিএনপি যে পরিস্থিতির মুখোমুখি সেখানে মির্জা ফখরুলের জন্য সময় এখন কতটা কঠিন তা সবাই উপলব্ধি করছেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার আগেও পরিষ্কার বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। বিএনপি নেতারা পরিষ্কার বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের সামনে এককালের বিএনপি নেতা-কর্মীদের কাছে আপসহীন নেত্রীর ইমেজে দাঁড়ানো খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপি আদৌ নির্বাচনে যাবে নাকি বর্জন ও প্রতিরোধের পথে হাঁটবে? কেউ কেউ বলছেন, নির্বাসিত নির্বাচনে অযোগ্য বিএনপি নেতা তারেক রহমানের পাশাপাশি দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হয়ে ভোটযুদ্ধের বাইরে ছিটকে পড়া দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখেই বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে তার মুক্তির ইস্যু সামনে নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে তারা গ্রহণ করবেন। কারণ নেতারা মনে করেন, জনমত তাদের অনুকূলে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে। কিন্তু বিএনপির আরেক অংশ মনে করেন, খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিএনপির জন্য হবে আত্মঘাতীর শামিল। এমন নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়, ভোটের সময় প্রতিরোধ ও বর্জনের পথে হাঁটবে। অনেকে মনে করেন, এ পরিস্থিতিতে পর্দার অন্তরালে সরকারও নানা খেলা খেলবে। ঐক্যবদ্ধ বিএনপি নয়, খন্ডিত বিএনপিকে নির্বাচনে আনার শেষ চেষ্টা করে যাবে। কিন্তু ভোটযুদ্ধ সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, ভোট রাজনীতির শেষ দৃশ্য এবার কীভাবে মঞ্চস্থ হয় তা দেখতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তুরুপের তাস এখনো শেখ হাসিনার হাতেই রেখেছে। শেখ হাসিনা নিজেও আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে আরেক টার্ম ক্ষমতায় আসার প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে রাজনীতির ময়দান একক কর্তৃত্ব নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন। দলের নেতা-কর্মীরাও তাদের নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর র্নিভরশীল। জনমত যেখানেই থাক, মানুষের মধ্যে একটা বিশ্বাস সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার আরেকবার ক্ষমতায় আসছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়, তা দেখার গভীর আগ্রহ নিয়ে রাজনৈতিক মহল তাকিয়ে আছে। যদি চিকিৎসার নামে তাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারে, তাহলে চলমান রাজনৈতিক নাটকের আরেক দৃশ্যের পর্দা উন্মোচন হবে। পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডব শুরু হয়ে গেছে। ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রবৃষ্টি কৃষকের সঙ্গে দেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করেছে। ফসলের খেত অনেকটা নষ্ট হয়েছে। আমেরও ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগ হাওরাঞ্চলের মানুষের ধানের ফসল নিয়ে। গেল বছর সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ ফসলের সঙ্গে নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জের সব হাওরের ধান অকাল বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল। একমুঠো ধানও কৃষক ঘরে তুলতে পারেনি। কৃষকের ঘরে ঘরে আর্তনাদ উঠেছিল। শেখ হাসিনার সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে কাউকে না খেয়ে মরতে দেয়নি হয়তো, কিন্তু কৃষিনির্ভর স্থানীয় অর্থনীতি পঙ্গুত্ব বরণ করেছিল। এবার ফসলের আগেই পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে কৃষক ও তার ফসলের প্রতি অন্তহীন আবেগ-অনুভূতি নিয়ে দফায় দফায় হাওরে ছুটে গিয়েছিলেন। রাজনৈতিক নেতাদের দীর্ঘ বক্তৃতা না শুনে প্রশাসন, প্রকৌশলী ও হাওর পাড়ের মানুষের কথা মন দিয়ে শুনেছেন। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, প্রয়োজনে তিন মাসের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সুনামগঞ্জে নিয়ে যাবেন। একজন মন্ত্রী হিসেবে বিস্তীর্ণ হাওরের মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে কার্পণ্য করেননি। হাওরের বাঁধ সময়মতোই পিআইসির অধীনে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে সম্পন্নই করেননি; অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে উদার নীতি গ্রহণ করেছিলেন। বিষয়টা এমন ছিল, প্রকৃতির বৈরী আচরণের বিপরীতে হাড়ভাঙা কৃষকের সঙ্গে একান্ত হয়ে তিনি গেল বছরের বরাদ্দের চেয়ে এ যুদ্ধে জয়ী হতে দ্বিগুণের বেশি বরাদ্দই দেননি, প্রশাসন, প্রকৌশলী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মানুষকে আগাম ফসল রক্ষার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মাঠে নেমে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। প্রতিনিয়ত মনিটরিং করেছেন। এখনো রোজ মনিটর করছেন। উঁচু এলাকায় আগাম ফলনশীল যে বোরো ফসল চাষাবাদ শুরু হয়েছিল, সেখানে এখন কিছু কিছু এলাকায় ধান কাটার ধুম পড়েছে। বৈরী প্রকৃতির মহাপ্রলয় নিয়তির অমোঘ বিধানে গেলবারের মতো যদি আঘাত না করে, তাহলে ফসল তোলার আনন্দ উৎসব দেখা দেবে কৃষকের ঘরে। আর যাই হোক, প্রশাসন থেকে প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি হতে দেননি, পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।সম্প্রতি রাজনীতি ও প্রকৃতির নানা ঝড়-তুফানের মধ্যে জনগণের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে যে ঘটনাপ্রবাহ একের পর এক তুফান তুলেছে, তা হচ্ছে ধর্ষণ। হবিগঞ্জে দিনমজুরের কন্যা বিউটিকে বাবুল নামের এক সন্ত্রাসী এক মাস আটকে রেখে ধর্ষণ করেই থামেনি; গরিব বিউটির মা-বাবা কেন ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ধর্ষক বাবুল বিউটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে আরেক দফা ধর্ষণের পর হত্যা করে হাওরের সবুজ জমিনে মেয়েটির নিথর দেহ ফেলে রেখে ছিল। রক্তাক্ত বাংলার সবুজ জমিনে ধর্ষিতার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে বিউটি। খুনি ধর্ষক বাবুলকে র্যাব সিলেট থেকে গ্রেফতার করেছে। গোটা দেশ ঘৃণা-ক্ষোভ ও যন্ত্রণায় এতটাই জ্বলে উঠেছে যে, ধর্ষক-খুনি বাবুলের ফাঁসি চাইতে চাইতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রসফায়ার চেয়েছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে গোটা সমাজ লজ্জা-ঘৃণা-ক্ষোভে ঝাঁকুনি খেয়ে উঠেছে। ধর্ষকের তালিকায় একেক জায়গার ঘটনায় মসজিদের ইমাম থেকে মাদ্রাসার শিক্ষক পর্যন্ত আটক হচ্ছেন। দিনমজুর, বখাটেসহ যুবক একের পর এক গ্রেফতার তো হচ্ছেই। একের পর এক ধর্ষণের মতো পাশবিক নৃশংসতা ঘটিয়ে চলেছে। মৌলভীবাজারের ধর্ষিত তরুণীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। একজন আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন নারীর সতীত্ব এক অমূল্য সম্পদ। তার সম্ভম তাকে অহংকারী করে তোলে। সেখানে পশ্চিমা দুনিয়াই নয়, এই উপমহাদেশের মতো বাংলাদেশেও নারীর শ্লীলতাহানি হামেশাই ঘটছে। সমাজের সব স্তরেই নারীর প্রতি একদল পুরুষের যৌন বিকৃত লালসার আগ্রাসী হাত এগিয়ে আসছে। যৌন নিপীড়িনের শিকার হচ্ছে সমাজের সব স্তরের নারী। যৌন বিকৃত পুরুষের পাশবিকতার হাত থেকে ছয় মাসের শিশু থেকে পরিণত বয়সের নারীরা পর্যন্ত ও রেহাই পাচ্ছে না। সামাজিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুশাসন সবকিছু ভেঙে পড়ছে। আইনের কঠোরতা দমিয়ে রাখতে পারছে না ধর্ষকের আগ্রাসী মূর্তি। যে মেয়ে এখনো কথা বলতে শেখেনি, ফুটফুটে চাঁদের মতো যে শিশু কোলে-পিঠে হেসে-খেলে বেড়ে উঠবে, সে এখন কারও কাছেই নিরাপদ নয়। গোটা সমাজ যেন দিন দিন যৌন বিকারগ্রস্ত অসুস্থ আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। পুরুষের যৌন পাশবিকতার শিকার থেকে শিশু ও নারীকে রক্ষা করতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান নিলেই হবে না; জনগণকেও এই জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। বিবেকবান নারী-পুরুষ সবাইকে প্রতিরোধে রাস্তায় নামতে হবে। রমণীরা যেভাবে গণধোলাই দিয়ে ধর্ষককে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে, সেভাবে যেখানে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, সেখানেই বিকৃত পুরুষের গালে কষে থাপড় দিতে নির্যাতিত নারীকেই নয়, হয়রানির শিকার শিশুকেই নয়, সমাজকে রুদ্রমূর্তি নিয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। যে সমাজে প্রেমিক-প্রেমিকা নেই, ধর্ষকের আস্ফাালন, ধর্ষিতার আর্তনাদ সে সমাজ বসবাস উপযোগী নয়। একাত্তরে আমাদের মা-বোনেরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে ধর্ষিত হয়েছে। একটি স্বাধীন দেশে আজ শিশু-নারী এমনকি প্রতিবন্ধীরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। গোটা দেশ যখন ধর্ষণের বিরুদ্ধে লজ্জা-ঘৃণা-ক্ষোভে জ্বলছে তখন আরটিভির এক অনুষ্ঠানে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পূর্ণিমা এককালের খলনায়ক মিশা সওদাগরের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে বোধহীন, রুচিহীন, বিবেবহীন প্রতিবন্ধীর মতো প্রশ্ন করেছেন। পূর্ণিমা মিশা সওদাগরকে প্রশ্ন করেছেন, সিনেমায় কাকে ধর্ষণ করতে গিয়ে এককালের খলনায়ক মিশা সওদাগর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন? মিশা সওদাগর বলেছেন, পূর্ণিমা ও মৌসুমীকে। যারা ইউটিউবে এটা দেখেছেন, তারা ঘৃণা ও লজ্জায় ছিঃ ছিঃ করেছেন। ধর্ষিতার আনন্দে পূর্ণিমার গড়াগড়ি আর হাসিঠাট্টা দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পূর্ণিমাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। অশ্লীল সিনেমার ধর্ষণ পূর্ণিমাকে আনন্দ দিলেও বিউটিদের ধর্ষিত হওয়ার বেদনা বাংলাদেশের হৃদয়কে বিষাক্ত নীলাভ করেছে। আমরা দিন দিন সর্বগ্রাসী একটি মূল্যবোধহীন অবক্ষয়ের ভাগাড়ে পতিত হচ্ছি। আমাদের যেন নিয়ত বোধহীন, অনুভূতিহীন করে রাখা হচ্ছে। সেই ১৯৯৪ সালে দিনাজপুরের ইয়াসমিনের ধর্ষিত হওয়ায় গোটা দেশ প্রতিবাদে জ্বলে উঠেছিল। আজ একজন ধর্ষিত বিউটি সবুজ জমিনে নিথর হয়ে পড়ে থাকে। সমাজ ও দেশ প্রতিবাদে জ্বলে ওঠে না। আমাদের যেন বলা হচ্ছে, তুমি অন্ধ, বোবা ও আবেগ-অনুভূতিহীন। তুমি কিছু দেখো না, তুমি কিছু শুনো না, তুমি কিছু জানো না, তোমার কোনো প্রতিক্রিয়া থাকতে নেই। রাজনীতি আদর্শহীন হবে, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে দেখা স্বপ্ন নির্বাসিত হবে, বিনা বিচারে মানুষ হত্যা হবে, গুম হবে, ব্যাংকিং খাত লুট হয়ে যাবে, বিদেশে টাকা পাচার হয়ে যাবে ও শেয়ারবাজার ধুলোয় মিশে মানুষকে রিক্ত-নিঃস্ব করে দেবে। ক্ষমতানির্ভর একদল মানুষ উন্মাসিক আচরণ করবে, তুমি তাও দেখবে না; উচ্চবাচ্য করবে না! ধর্ষকরা উল্লাস করবে। ধর্ষিতার আর্তনাদ আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হবে, প্রতিবাদের ঝড় উঠবে না। সুশীল ও নারীবাদীরা টকশোয় মেকআপ নেবে। রাজপথে পা রাখবে না। অহিংস শান্তিবাদী মহাত্মা গান্ধীর ভারতের আসানসোলে হিন্দুত্ববাদী উগ্রপন্থিদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত ১৬ বছরের কিশোর সিবতুল্লাহ রাশিদির পিতা মসজিদের ইমাম মাওলানা ইমদাদুল্লাহ রাশিদির পদধূলি গ্রহণের জন্য পৃথিবীর তাবৎ ধর্মান্ধ মানুষ ও তাদের নেতাদের প্রতি আমার চিৎকার করে আহ্বান জানাতে ইচ্ছা করছে, আজকের অশান্ত বিশ্ববিবেককে নাড়া দিতে এর চেয়ে শান্তির মহৎ বাণী পৃথিবীর কোনো প্রান্তথেকে আর কেউ দিতে পারেননি, যা দিয়েছেন মাওলানা ইমদাদুল্লাহ রাশিদি। ২৫ মার্চ আসানসোলে রামনবমীর শোভাযাত্রার সময় সেখানকার ইমামের কিশোর ছেলে সিবতুল্লাহকে কট্টরপন্থি উগ্র হিন্দুরা বীভৎসভাবে হত্যাই করেনি, ঠান্ডা মাথায় নিহত কিশোরের বুক ছিঁড়ে কলজে বের করে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলেছে। অনেকে মনে করেছিলেন, এই নৃশংসতার পর সেখানে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা অনিবার্য হয়ে পড়বে। কিন্তু সব আশঙ্কা অমূলক করে দিয়েছেন, আল্লাহ রব্বুল আলামিনের প্রতি নিজেকে সমর্পণ করা একজন আলেম ও মসজিদের ইমাম মাওলানা ইমদাদুল্লাহ রাশিদি। নিহত সন্তানের লাশ সামনে রেখে হাজার হাজার উত্তেজিত মুসলমানের সামনে তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার সন্তানের যত দিন আয়ু রেখেছিলেন, তত দিন সে বেঁচেছে। আল্লাহর ইচ্ছায় তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে যারা হত্যা করেছে মহান আল্লাহ কিয়ামতের ময়দানে তাদের শাস্তি দেবেন।’ এরপর তিনি সমবেত সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমার সন্তানের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার আপনাদের কারও নেই। আমার সন্তানের মৃত্যুর জন্য একটি মানুষের ওপরও আক্রমণ করা চলবে না। একটি মানুষকেও হত্যা করা যাবে না। বাড়িঘর, দোকানপাট কোথাও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ বা লুটপাট করা চলবে না। তিনি পরিষ্কার বলেন, ইসলাম আমাদের কোনো নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে শেখায় না। ইসলাম আমাদের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে বসবাস করতে শেখায়। আমাদের আসানসোলে আজ শান্তি-শৃঙ্খলা প্রয়োজন। আপনারা যদি আমায় আপন মনে করেন, তাহলে ইসলাম নির্দেশিত শান্তি বজায় রাখবেন। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব আপনাদের। তিনি আরও বলেন, যদি আপনারা শান্তি বজায় রাখতে না পারেন, তাহলে ভাবব— আমি আপনাদের আপন নই। আমি আসানসোল ছেড়ে চিরতরে চলে যাব। মাওলানা ইমদাদুল্লাহ রাশিদি আসানসোলের নূরানী মসজিদের ইমাম। বৃহস্পতিবার সিবতুল্লাহর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ ছিল। রাশিদির বক্তব্যের আগে জানাজায় উপস্থিত যুবকদের চোখে-মুখে ছিল প্রতিশোধের আগুন। কলজে ছিঁড়ে কিশোরটিকে বীভৎসভাবে হত্যা করায় তারা প্রতিশোধ গ্রহণে শপথ নিয়ে এসেছিল। ভয়ঙ্কর কিছুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সবার ধারণা ছিল ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রক্তাক্ত হতে যাচ্ছে আসানসোল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে ছিল শঙ্কা। কিন্তু সব আশঙ্কা, সব উত্তেজনা মাওলানা ইমদাদুল্লাহর দেওয়া বক্তব্যে শেষ হয়ে যায়। একটি বক্তৃতা আগুনে জল ঢেলে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তা বা রাজনৈতিক নেতা কাউকেই আসতে হয়নি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। সন্তানের লাশ সামনে নিয়ে পিতা ইমদাদুল্লাহর দেওয়া একটি বক্তৃতায় সব উত্তেজনা স্তিমত হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষের বিক্ষুব্ধ মন শান্ত হয়ে ওঠে। পরিবেশ শীতল হয়ে যায়। সিবতুল্লাহর জানাজা শেষে সবাই নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যান। আর ইমাম মাওলানা ইমদাদুল্লাহ ফিরে যান তার মসজিদে। আল্লাহর ঘরে তখন নামাজের জন্য আজানের ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে। ধর্মের নামে, জিহাদের নামে ধর্মান্ধ যে শক্তি বিশ্ব রাজনীতিকে অশান্ত করেছে তাদের কাছে ইমদাদুল্লাহর কণ্ঠে উচ্চারিত ইসলামের সুললিত বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার সময়। এটি আজ শুধু আসানসোলের কট্টর ধর্মান্ধ, উগ্রপন্থি হিন্দুত্ববাদের খুনিদের জন্যই নয়, ধর্মের নামে শান্তির পৃথিবীকে যারা অশান্ত করে তুলেছেন, তাদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার এক ঐতিহাসিক আদর্শিক বাণী। ধর্মনিরপেক্ষ উদার গণতান্ত্রিক ভারতের চরিত্র হনন করে ভারতবর্ষজুড়ে গেরুয়া পোশাক পরিহিত যে হিন্দুত্ববাদী শিবসেনাদের উত্থান ঘটেছে, যাদের কাছে মানুষের চেয়ে পশুর জীবন বড় হয়ে ওঠে, তাদের কলিজায় সন্তানহারা আলেম ইমদাদুল্লাহর শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া বেশি জরুরি। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের আত্মাহুতি, সশস্ত্র লড়াই আর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশের বুকে যারা ধর্মের নামে কথায় কথায় মন্দিরে মন্দিরে জিহাদের স্লোগান দিয়ে হামলা চালায়, ভাঙচুর করে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বিষাক্ত সাপের ফণা তোলে, ধর্মের নামে যারা চাপাতি দিয়ে একের পর এক মানুষ হত্যা করে, যেখানে-সেখানে ধর্মের নামে, ইসলামের নামে, জিহাদের শপথ নিয়ে প্রলয়লীলা শুরু করে, তাদের চিন্তা-চেতনা ও হৃদয়জুড়ে আসানসোলের নৃশংসভাবে নিহত কিশোরের পিতা মাওলানা ইমদাদুল্লাহর শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিতে হবে। শুধু এ দেশ নয়, শুধু ভারতবর্ষ নয়, কেবল উপমহাদেশ নয়, পৃথিবীজুড়ে যারা ধর্মের নামে রক্তারক্তি, সহিংসতা ও মানুষ হত্যার উন্মত্ত খেলায় মত্ত সেসব ধর্মান্ধ নেতাদের শান্তির ধর্ম ইসলামের মর্মবাণী ছড়িয়ে দেওয়ার পদধূলি গ্রহণের এখন উত্তম সময়। লেখক : প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ
|
|
|
|
|