মােঃ জানেআলম সাকী, ব্যুরো চীফ, চট্টগ্রাম: পাহাড়, ঝর্ণা, মেঘ.. প্রকৃতির অপরূপ রূপে সাজানো একটি জেলা বান্দরবান। এ জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে আছে দারুণ সব দর্শনীয় স্থান। সারা বছরই এখানে আনাগোনা থাকে পর্যটকদের। গত কয়েকদিনে যেন পর্যটকের ঢল নেমেছে জেলা জুড়ে।
একে তো পর্যটন মৌসুম, তারওপর চলছে ছুটির মৌসুমও। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ। ব্যস্ত নাগরিক জীবন থেকে কয়েকদিনের অবকাশ পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই ছুটে আসছেন পাহাড়ের কাছে, প্রকৃতির কাছে।
গত সপ্তাহ থেকে পাহাড় ও প্রকৃতির রানি বান্দরবানে একরকম ঢল নেমেছে পর্যটকের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন আসছেন নানা বয়সী হাজার হাজার মানুষ। মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি, শৈল প্রপাত, প্রান্তিক লেক, চিম্বুক, ডিম পাহাড়সহ সবকটি পর্যটন স্পট মুখরিত হয়ে উঠেছে পর্যটকদের পদচারণায়।বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষ্যে কয়েক গুণ বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা। হোটেল-মোটেল প্রায় সব বুকিং হয়ে গেছে। আবাসিক হোটেলগুলোর রিসিপশনে রুম বুকিং দিতে অপেক্ষা থাকতে হচ্ছে পর্যটকদের। বড়দিন ও নিউ ইয়ার উপলক্ষ্যে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নানা রঙে সাজানো হয়েছে হোটেলগুলো।
নীলাচল, নীলগিরি, মেঘলাসহ ঘুরছেন বিভিন্ন পর্যটন স্পট। পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনযাপন ও তাদের ঐতিহ্য তাদেরকে মুগ্ধ করেছে। ঘুরতে এসে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানান এক পর্যটক।
সাপ্তাহিক ছুটি ও বড়দিন উপলক্ষ্যে বান্দরবানে ঘুরতে আসা এক পর্যটক জানান, বান্দরবানে এর আগেও এসেছেন তিনি। তবে এবার নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই ভালো লাগছে।
এক দম্পতি সাংবাদিকদের জানান, স্বামী, ভাই-বোনসহ পরিবার নিয়ে বান্দরবান ঘুরতে এসে খুবই আনন্দ উপভোগ করছেন তারা। আসার সময় রাস্তার দুই পাশের সৌন্দর্যসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রশংসা করেন তারা।
এদিকে দীর্ঘদিন পর জেলায় আশানুরূপ পর্যটকের সমাগম হওয়ায় হোটেল মোটেল রিসোর্টগুলো এখন কানায় কানায় পূর্ণ। সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে হোটেল ডি-মোরের অপারেশন ম্যানেজার ডমেপ্রু মারমা একাধিক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, দীর্ঘদিন পর আমরা অনেক বেশি বুকিং পাচ্ছি। আগের তুলনায় আমরা অনেক আশাবাদী। সাপ্তাহিক ছুটি, বড়দিনসহ সামনে ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষ্যে বান্দরবানে পর্যটকের আগমন আরও বাড়বে।
হোটেল মোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসেসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জসীম উদ্দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, সাপ্তাহিক ছুটি ও বড়দিন উপলক্ষ্যে বান্দরবানের হোটেল মোটেল ও রিসোর্টে শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। ইংরেজি নতুন বছরে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
তিনি জানান, পর্যটন খাতে বিগত চার বছরে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যা থেকে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব না হলেও জেলায় পর্যটক ভ্রমণের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল ৮০ শতাংশ মানুষের জীবন ও জীবিকা টিকে থাকবে।
পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ বান্দরবান জোনের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহীন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমকে কেন্দ্র করে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আমরা সদা প্রস্তুত।