সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর বাড়িতে ফোন করে বাবাকে জানিয়েছিলেন সেখানকার আইসিটি বিভাগের তরুণ কর্মী মবিনুল হক। একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। পরে বিস্ফোরণে একটি পা উড়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বাবাকে বলেছিলেন মাফ করে দিতে। এ কথোপকথনের মধ্য দিয়েই শেষ হয়েছে মবিনুল ও তাঁর পরিবারের স্বপ্নযাত্রা।
রাতে ছেলের কাছ থেকে ওই খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন মবিনুলের বাবা ফরিদুল আলম। রাতেই বাঁশখালী থেকে রওনা দিয়ে শহরে আসেন তিনি। ছেলের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে না পেরে তাঁর খবর নিতে ভাতিজা ফরহাদ হোসেনসহ অন্য স্বজনদের হাসপাতালে পাঠান। শনিবার রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে মবিনুলের লাশ শনাক্ত করেন তাঁরা। সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে এ বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মবিনুলের লাশই প্রথম শনাক্ত হয়।
শহরে এসে আর ছেলে নয়, তাঁর লাশ পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ফরিদুল আলমকে। মবিনুলের মরদেহ এখনো মেডিকেলের লাশকাটা ঘরে পড়ে রয়েছে। বাইরে অপেক্ষায় আছেন স্বজনেরা।
মর্গের সামনে থাকা চাচাতো ভাই ফরহাদ বলেন, ‘মবিন ভাই বাবাকে ফোন করে পা উড়ে যাওয়ার কথা জানান। ওই সংবাদ পেয়ে রাতেই আমরা হাসপাতালে চলে আসি। এসে দেখি ভাই লাশ হয়ে গেছে।’
ছেলের শোকে দিশাহারা ফরিদুল আলম বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে!’ তিনি জানান, গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে মবিনুল প্রথমবার তাঁকে ফোন করেন। তখন তিনি বাবাকে বলেছিলেন, এখানে বারবার বিস্ফোরণ হচ্ছে। শেষবার ফোন করে বলে, ‘বাবা আমার একটি পা উড়ে গেছে। আমাকে কলেমা পড়ে মাফ করে দিও।’
মবিনুল কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের মহসিন কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক পাস করেন। এরপর চাকরি নেন বিএম ডিপোতে। বাঁশখালীর ছনুয়ায় তাঁদের বাড়ি। চাকরির পর বিয়ের আয়োজন চলছিল।
মবিনের অপর চাচাতো ভাই তায়েবও বিএম ডিপোতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, মবিন আইসিটি কাউন্টারে চাকরি করতেন। তিনি হয়তে আগুন লাগার পর দেখতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন।
শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াছ চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।