নিজস্ব প্রতিনিধি: আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আবাসিক হলে অবৈধভাবে থাকা শিক্ষার্থীদের হলত্যাগ এবং ছাত্র রাজনীতি বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবি মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত নোটিশও জারি করা হয়েছে।
বুয়েট কর্তৃপক্ষ স্বাক্ষরিত পৃথক পাঁচটি আদেশ শনিবার দুপুরে প্রকাশ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো- আবরার হত্যাকারীদের বুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এ মর্মে নোটিশ দেয়া, সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য অবৈধ ছাত্রদের সিট বাতিল করা, সাংগঠনিক অফিস সিলগালা করা, ফাহাদের মামলার খরচ দেয়ার নোটিশ দেয়া ও ভিন্নমত দমানোর নামে নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং এ ধরনের ঘটনা প্রকাশে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সব হলের সিসিটিভির ফুটেজে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা।
শনিবার সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্য (ভিসি) চাইলে তাদের পাঁচ দফা দাবি এক ঘণ্টাতেই পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু সেটি যদি না করা হয়, তাহলে ১৪ অক্টোবর প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা হতে দেয়া হবে না।
লিখিত নোটিশে যা আছে
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে যারা আবাসিক হলের সিট দখল করে আছে তাদের অতিসত্বর হলের সিট খালি করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্রসংগঠনগুলোর অফিস বন্ধ করে তা সিলগালা করার জন্য ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ব্যবস্থা নেবেন। রোববার থেকে উল্লেখিত কাজগুলো শুরুর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সেখানে আরও বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি করার কেউ চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিন লঙ্ঘনের দায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কিংবা ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ আসলে ডিসিপ্লিন কমিটির মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
গতকাল শুক্রবার বিকালে বুয়েট ভিসি ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনায় মেনে নেয়া পাঁচটি দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বুয়েট প্রশাসন এ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তবে বুয়েট প্রশাসনের শুধুমাত্র লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে সন্তুষ্ট নন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এসব দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শনিবার দুপুর ২টায় এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।
ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’ নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্।
আবরার হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা প্রথমে ১০ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামেন। গতকাল শুক্রবার বুয়েট অডিটোরিয়ামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। তিনি সে সময় ঘোষণা দেন, বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি থাকবে না। একই সঙ্গে অভিযুক্ত ১৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের ঘোষণা দেন তিনি।
এছাড়া আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন, বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেয়াসহ বুয়েটে র্যাগিং বন্ধের ঘোষণা দেন উপাচার্য।