বিনা টাকায় কথা বলার দিন শেষ হচ্ছে। ভাইবার, হোয়াটসএ্যাপ, ইমোর মতো স্মার্টফোন এ্যাপ ব্যবহার করে ভয়েস কল করা হচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক কলরেট প্রতিনিয়ত কমে আসছে। আন্তর্জাতিক কলরেট হ্রাসে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সরকারের রাজস্ব বাড়াতে বিটিআরসি এখন এ্যাপগুলো ব্যবহারের নীতিমালা তৈরির চিন্তা করছে। মোবাইল ফোনে এ ধরনের ‘ওভার দ্য টপ’ (ওটিটি) এ্যাপ ব্যবহার করে ভয়েস কলের সুবিধা নিয়ে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে সিদ্ধান্তে নিতে যাচ্ছে বিটিআরসি। ভাইবার, হোয়াটসএ্যাপ, ইমোর ব্যবহার নিয়ে দুনিয়াজুড়েই চিন্তা করা হচ্ছে। বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ ওটিটি নিয়ে এ কথা জানিয়েছেন।
ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, অবৈধ ভিওআইপি কলের কারণে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। আবার ভাইবার, হোয়াটসএ্যাপ, ইমোর মতো স্মার্টফোন এ্যাপে ভয়েস কল সুবিধার কারণে আন্তর্জাতিক ফোনকল ব্যবসায় বাংলাদেশ মার খাচ্ছে। অবৈধ ভিওআইপি বন্ধের নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু স্মার্টফোন এ্যাপগুলোর বিষয়ে কিছু করা হচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী এসব এ্যাপ কিভাবে ব্যবহার হবে তা নিয়ে চিন্তা করা যাচ্ছে। ডাটার ওপর ভিত্তি করে বিনা টাকায় কথা বলার বিষয়টি বিশ্বব্যাপীই আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এখান থেকেও কিভাবে ‘রেভিনিউ’ আনা যায় এ বিষয়ে আমাদের একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে ভয়েস কল বলতে আর কিছু থাকবে না। সব ডাটাভিত্তিক হয়ে যাবে। তখন টুজি, থ্রিজি নেটওয়ার্কগুলো দারুণভাবে মার খাবে। হোয়াটসএ্যাপ, ইমো, ভাইবার, মাইপিপল এ্যাপগুলোর মাধ্যমে শুধু বিদেশ থেকে কল করা হচ্ছে না, দেশের মধ্যেও এখন ডাটা ব্যবহার করে ভিডিও ও ভয়েস কল করা হচ্ছে। ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই এ্যাপগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক কল কমছে। সরকারের রাজস্ব বাড়াতে এসব এ্যাপ নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা অল্পদিনের মধ্যে এসব এ্যাপ বিষয় একটা সিদ্ধান্তে যাব।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট বাড়ানোর আগে বৈধ পথে গড়ে প্রতিদিন ১২ কোটি মিনিট ইনকামিং কল দেশে আসত। ২০১৫ সালের আগস্টে কল টার্মিনেশন রেট দেড় সেন্ট থেকে বাড়িয়ে দুই সেন্ট করার পর এখন দৈনিক গড়ে সাড়ে ৬ থেকে ৭ কোটি মিনিটে নেমে এসেছে। বিদেশ থেকে ইনকামিং কল কমার জন্য দাম বাড়ানোকেই মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে না। এখানে আরও অনেক কারণেই কল কমে আসছে। ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় স্কাইপে, ভাইবার, হোয়াটসএ্যাপ, ইমোর মতো ভিওআইপি এ্যাপের মাধ্যমে ভয়েস কলের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এ সুবিধা ভয়েস কল কমার আরও একটি কারণ। এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সারা দুনিয়ায় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ৩৯০ কোটি ছড়িয়ে গেছে। ফলে মানুষ খুব সহজেই ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছে। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই এসব এ্যাপ ব্যবহার করা যাচ্ছে। শতকরা ৪৫ ভাগ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ওটিটি অএ্যাপ ব্যবহার করছেন। ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বে স্মার্টফোন ওটিটির ব্যবসার আকার দাঁড়াবে ৬২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তখন ভয়েস কল বহুগুণ কমে যাবে। বিশ্বের অনেক দেশই ফোরজি (চতুর্থ জেনারেশন) চালু করেছে। এ বছর দেশেও ফোরজি চালু করা হবে। ফোরজি চালু হলে তো ডাটাই ব্যবহার হবে। এরপর ফাইভজি চলে আসবে। ফাইভজি মানে মেশিন টু মেশিন। ডাটা ছাড়া আর কিছু থাকবে না। কোন আইজিডব্লিউ (ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) এসব থাকবে না। উন্নত দেশগুলোতে আইজিডব্লিউ নেই। কল আদান-প্রদানে আইজিডব্লিউর কোন প্রয়োজন নেই। মাঝখান থেকে আইজিডব্লিউগুলো সুবিধা ভোগ করছে।
উল্লেখ্য, দেশে জঙ্গী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের জানুয়ারিতে সরকার ভাইবার, ট্যাঙ্গো, হোয়াটসএ্যাপসহ কয়েকটি ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ও ভিওআইপি এ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করে দিয়েছিল। অল্প কিছুদিন পর সরকার তা আবার খুলে দেয়।