একঘেয়ে জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠেন, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম,একটু বিরাম,একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন সৃষ্টিকর্তার অপরময় সৃষ্টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও। ভ্রমণ করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ এই দুনিয়ায় পাওয়া বড় দুষ্কর। একজন পর্যটক হিসেবে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সারা বিশ্ব। দেশের বাইরে ঘুরে আসতে চান? তবে স্বদেশ মূল্যে ঘুরে আসতে পারেন বিদেশ। আর এই বিদেশ অন্য কোন দেশ নয়। আমাদেরই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। যে দেশের মধ্যে রয়েছে একদিকে মরুভূমি, অন্যদিকে বরফ আচ্ছাদিত পাহাড়, পর্বত, সমুদ্র, জঙ্গল, স্থাপত্য, পুরাকৃর্তি ইত্যাদি। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে সব ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত সম্ভার। প্রবাদ আছে, ‘সমগ্র ভারত ভ্রমণ করলে পৃথিবীর অর্ধেক দেখা হয়ে যায়’। আর আপনি যদি একজন পর্যটক হিসেবে ভারতে ভ্রমণ করতে চান, তবে তার আদি গোড়াপত্তন ও ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা দরকার। ভারত ঘুরে এসে ভ্রমণ পিপাসু পাঠকদের উদ্দেশ্যে পর্যটন বোর্ড ও ভারতীয় ভ্রমণ সঙ্গী গাইডের অবলম্বনে লিখেছেন : মোঃ রিয়াজ উদ্দিন
কলকাতার পরিচয়
গন্ডগ্রাম থেকে এ-ওয়ান সিটিতে রুপান্তরিত, বর্তমানে এই ব্যস্ত শহর কলকাতা যাকে ঘিরে আছে আজ লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকা, শিক্ষা চিকিৎসা। প্রয়োজনীয় এই শহর কলকাতা যাকে বাদ দিয়ে আজ আমাদের একটা মুহুর্ত ও চলেনা। গড়ে উঠেছে ধীরে ধীরে, গড়ে উঠেছে অনেক প্রচেষ্টায়, এখন ও চলছে কলকাতাকে আরও আধুনিক করে, আর ও সুন্দর করে মেগাসিটিতে রুপান্তরের কাজ। পূর্বেকার ভারতের রাজধানি, তথা বর্তমান পশ্চিম বঙ্গের রাজধানী ও মেকলে সাহেব বর্নিত ’সিটি অব প্যালেস’ এ কলকাতার কথা ভাবলেই তাই মনে মনে আনন্দ জাগে, গর্ব অনুভূত হয়, আর প্রয়োজন সে তো আনসি¦কার্য। তাই এ কলকাতা সকলের কাছে ভালবাসার শহর।
কলকাতার গোড়াপত্তন
১৬৯০ সালের ২৪ আগষ্ট রবিবার। সুতানটি, কলিকাতা ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রাম নিয়ে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মাধক্ষ্য জব চার্নক নামে এক ইংরেজ সাহেব এই কলকাতার গোড়া পত্তন করেন। তিনি বড়িষার সাবর্ন রায় চৌধুরিদের পূর্বপূরুষ লক্ষীনারায়ন চৌধুরির কাছ থেকে এই তিনটি গ্রামের স্বত্ব নেন। তবে আজ কলকাতার ইতিহাস পাল্টে গেছে, মুছে গেছে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতার নাম কলকাতার জন্ম দিন বলতে থাকছেনা আর কোন তারিখ। পাঠ্যপুস্তক থেকে উঠে গেছে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা জব চার্নকের নাম। ২৪ আগষ্ঠ আর পালিত হবেনা কলকাতার জ¤œদিন। ১ মে ২০০৩ শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের এক ঐতিহাসিক রায়ে এ ঘোষনা দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয় লক্ষীকান্ত রায় চৌধুরীই আধুনিক কলকাতার জনক।
কলকাতার নাম হলো কেন ?
১৫৯৬ সালে স¤্রাট আকর রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে একটা নকসা তৈরি করেন,ঐ নকসায় কলিকাটা গ্রামের নাম দেখা যায়। কলিকাটার ইংরেজী নাম ক্যালকাটা হয়েছে।এ ব্যাপারে নানা মত প্রচলিত আছে, কেউ বলেন কালিক্ষেত্র কথাটা থেকে কলিকাতা নামের উৎপত্তি। আার কারও মতে যে জায়গার নাম ছিল কলিকাটা, সেখানে ছিল আগে জেলেদের বাস, ছিল চুনের ভাটি, চুনকে চলতি কথায় বলা হয় কলি। এই কলি থেকে কলিকাতা।
পুরাতন কলকাতার সীমানা
বর্তমানের চিৎপুর বাগবাজার শোভাবাজার ও হাটখোলা ছিল সুতানটি নামে পরিচিত। ধর্মতলা বহুবাজার, সিমলা, জানাজার প্রভৃতি অঞ্চল ছিল কলকাতার অন্তর্ভুক্ত। আর হেস্টিংস, ময়দান ও ভবানীপুর অঞ্চল জুড়ে ছিল গোবিন্দপুর গ্রাম।
বর্তমান কলকাতার সীমানা
উত্তরে-সিঁথি,কাশিপুর ও ঘুঘুডাঙ্গা। দক্ষিণে টালিগঞ্জ, খিদিরপুর ও বেহালা। পূর্বে সল্টলেক বেলেঘাটা, তপসিয়া আর পশ্চিমে হুগলি নদী।
বৃহত্তর কলকাতার সিমানা বারুইপুর থেকে বাশবেরিয়া এং কল্যানী থেকে বজবজ।
বৃহত্তর কলকতার আয়োতন, লোকসংখ্যা ও স্ত্রী পুরুষের অনুপাত
আয়তন-১৪৮০বর্গ কি.মি। লোকসংখ্যা-কোটি ৪৩ লক্ষ (২০০১এর আদমসুমারি অনুযায়ী)স্ত্রীঃ পুরুষ-৯৫৬ ঃ ১০০০, জনসংখ্যার ঘনত্ব ২৪,৭৬০ প্রতি র্গ কি.মি.।
কলকাতার ভৌগলিক অবস্থান
হুগলী নদীর পূর্ব তীরে কলকাতার ইপস্থিতি ২২ ডিগ্রি -৩৩’উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৮ ডিগ্রি-৩০’পূর্ব দ্রাঘিমায়।
কলকাতার আবহাওয়া,বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ও সাক্ষরতার হার
ক্রান্তীয় মৌসুমি আবহাওয়া।বৃষ্টিপাত ১৬০৫মিলিমিটার(১৬০ সে.মি.)। তাপমাত্রা গ্রীস্মকালে ২৪-৪২ ডিগ্রি ও শীতকালে ৮-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মাতৃভাষা বাংলা। সাক্ষরতার হার-৮১.৩১%। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কলকাতার উচ্চতা ও বঙ্গোপসাগরের দুরত্ব
মাত্র ২০ ফুট(৬.৪ মিটার),ও দুরত্ব প্রায় ১৮০ কিরোমিটার কলকাতার স্থান পৃথিবীর বড় শহরের তুলনায় আয়তনে পৃথিবীর সপ্তম স্থানে ও জনসংক্ষ্যায় ষষ্ঠ স্থানে। ভারতের মধ্যে তৃতীয়।
পিকনিক স্পট টাকি
টাকি কলকাতার অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। কলকাতা থেকে সড়ক পথে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দুরে ইছামতি নদীর পারে অবস্থান টাকির ইছামতি নদীর একপারে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার দেভাটা ও কালিগঞ্জ অপর পারে টাকি। নদীর মাঝ বরাবর অবস্থিত ভারত –বাংলাদেশের আর্ন্তজাতিক সীমানা অল্প খরচে দিন দুয়েক ছুটি কাটানোর আদর্শ জায়গা।
কিভাবে আসবেন
বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দুতাবাস থেকে ভিসা সংগ্রহ করে বাস ট্রেন অথবা বিমানে করে কলকাতায়, এরপর শিয়ালদহ বা বারাসাত থেকে হাসনাবাদ গামী ট্রেনে উঠে নেমে পড়–ন টাকি রোড। এছাড়া সি এস টি সি বাসেও টাকিতে যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন:
টাকি পৌরসভা পরিচালিত অতিথি শালায় থাকতে পারেন এখানে ডবল বেড (২০০-৩০০)টাকা। এসি (৫০০-৭০০) টাকা। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুন টাকি পৌরসভা, টাকি উত্তর ২৪ পরগনা, ফোন -০৩২১৭-২৩৩৩২৮। হেরিটেজ গেষ্ট হাউজ, মিজান: +৯১৯৫৪৭৯৩৮৪২২
কি দেখবেন
রাজা জসিম উদ্দিনের রাজবাড়ি। এই রাজবাড়ি নিয়ে রয়েছে ভয়ংকর কাহিনী। রাজা বিভিন্ন এলাকা থেকে সুন্দরি সব মেয়েদের তুলে এনে ভোগবিলাস করে। পাশবিক অত্যাচার করে মেরে ফেলে বাড়ির দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখত, লাশে পচন ধরলে বাড়ির সুরঙ্গ থেকে ইছামতি নদীতে ফেলে হত। কালের স্বাক্ষী হিসাবে আজও দাড়িয়ে আছে সেই রাজবাড়ি। তবে রাজাড়িটি এখন ধংসের দারপ্রান্তে। নদীর পাড়ের কিছু অংশ ভেঙ্গে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ভবন। এই টাকির রাজবাড়ির ইছামতির ঘাটে প্রতিবছর দূর্গাপূজার সময় বিজয়া দশমিতে দু দেশের হাজার হাজার মানুষ নৌকা নিয়ে উপস্থিত হয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেন। নদীর পাড়ে রয়েছে মনোরম দৃশ্য ও বসার স্থান। এখানে রয়েছে জেলেপাড়া ও সুন্দর পিকনিক স্পট। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা টাকিতে আশ্রয় নিয়ে প্রশিক্ষন নিয়েছিল পাকিস্তানি শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। এখানকার স্থানীয় লোকজন অত্যন্ত অতিথীপরায়ন। বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য সুখবর, এখান থেকে বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, যেখান থেকে আপনি স্বাচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন দেশে থাকা আপনার কাছের মানুষের সংগে।ইছামতি নদীর বাংলাদেশের পাশে বিজিপি তাদের পতাকা উড়িয়ে ও ভারতের পাশে টাকি নদীতে বি এস এফ তাদের পতাকা উড়িয়ে সার্বক্ষনিক পাহাড়া দিচ্ছে।এছারা নদীর দুপাশে বাংলাদেশ, ভারতের নৌযানগুলো নিজ নিজ দেশের পতাকা উড়িয়ে চলাচল করছে। যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে। টাকি ভ্রমনে লেখকের সঙ্গি হিসাবে ছিলেন মানাধিকার খবরের কলকাতার আইন উপদেষ্ঠা এড. রাজিব মুখার্জী, বারাসাত প্রতিনিধি প্রদীপ রায় চৌধুরী, স্থানিয় আইনজিবী অরুনভা ঘোষ, সাইফুল, মিজান, হাবিব, শংকর সহ আরো অনেকে।
প্যাকেজের ব্যবস্থা :
ঢাকা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, মোবা: ০১৯৭৮৮৮২২২৩, মাহিমা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস লি:, মোবা: ০১৯৭৩১৭৩৩৬, কাসিক ট্রুরস এন্ড ট্রাবেলস, মোবা : ০১৭১৫৮১৭৯৯৪, ইস্টার্ন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, মোবা : ০১৭১১১০২১৩৮ সহ অসংখ্য ট্রাভেল কোম্পানি সারা বছর প্যাকেজের ব্যবস্থা করে থাকেন।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক
মানবাধিকার খবর
E-mail: md.reaz09@yahoo.com