একঘেয়ে জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠেন, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম,একটু বিরাম,একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন সৃষ্টিকর্তার অপরময় সৃষ্টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও। ভ্রমণ করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ এই দুনিয়ায় পাওয়া বড় দুষ্কর। একজন পর্যটক হিসেবে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সারা বিশ্ব। দেশের বাইরে ঘুরে আসতে চান? তবে স্বদেশ মূল্যে ঘুরে আসতে পারেন বিদেশ। আর এই বিদেশ অন্য কোন দেশ নয়। আমাদেরই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। যে দেশের মধ্যে রয়েছে একদিকে মরুভূমি, অন্যদিকে বরফ আচ্ছাদিত পাহাড়, পর্বত, সমুদ্র, জঙ্গল, স্থাপত্য, পুরাকৃর্তি ইত্যাদি। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে সব ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত সম্ভার। প্রবাদ আছে, ‘সমগ্র ভারত ভ্রমণ করলে পৃথিবীর অর্ধেক দেখা হয়ে যায়’। আর আপনি যদি একজন পর্যটক হিসেবে ভারতে ভ্রমণ করতে চান, তবে তার আদি গোড়াপত্তন ও ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা দরকার। ভারত ঘুরে এসে ভ্রমণ পিপাসু পাঠকদের উদ্দেশ্যে পর্যটন বোর্ড ও ভারতীয় ভ্রমণ সঙ্গী গাইডের অবলম্বনে লিখেছেন :
রোটা. মো: রিয়াজ উদ্দিন
দার্জিলিং
জোড়পোখরি : এক জোড়া হ্রদ, সেই থেকে নাম জোড়পোখরি। হিমালয়ের কোলে এই ছোট্ট গ্রামটি এখনও ভিড়ের খপ্পরে পড়েনি। তাই আর পাঁচটা গড়পড়তা ‘টুরিস্ট স্পট’ হয়ে ওঠার আগেই ঘুরে এসো এই অসাধারণ জায়গাটাতে। শিলিগুড়ি থেকে জোড়পোখরি খুব-একটা দূরে নয়, বরং মাত্র ৮৫ কিলোমিটার। লেকের জলে রাজহাঁস, আর সামনে কাঞ্চনজঙ্ঘার রাজকীয় ভিউ, কারও যদি মাথায় কবিতা আসতে থাকে, তাকে খুব প্যাঁক দেওয়া যায় না। যারা দার্জিলিংয়ের হোটেল থেকে সূর্যোদয় দেখতে অভ্যস্ত, তাদের জন্য রীতিমতো ‘ব্রেথটেকিং’ অভিজ্ঞতা হতে পারে জোড়পোখরি। কাছেই সেঞ্চল জঙ্গলেও বেড়িয়ে আসতে পারো মন চাইলেই। থাকার জন্য জায়গার সঙ্গে মানানসই কাঠের বাংলোর খরচ একটু বেশির দিকেই।
জলপাইগুড়ি
বক্সা : পাহাড়, নদী, জঙ্গল, এই সব নিয়ে বক্সা বেশ আকর্ষনীয় জায়গা। শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে এই জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পটটি ভুটানের ঠিক কোলে অবস্থিত। এর মূল আকর্ষণ হল এখানকার টাইগার রিজার্ভ। সিঞ্চুলা পাহাড়ঘেঁষা এই জঙ্গলে বাঘ ছাড়াও দেখতে পাবে লেপার্ড, হাতি, চিতল আর বুনো মোষ। ঘুরতে-ঘুরতে দেখতে পার বক্সা ফোর্টের ধ্বংসাবশেষ। জঙ্গলের মধ্যে পুরনো মহাকালেশ্বর মন্দিরও বেশ দেখার মতো বটে। দল বেঁধে জয়ন্তী নদী দেখে আসতে পারেন, নদীর ¯্রােতের সঙ্গে-সঙ্গে মন জুড়িয়ে যাবে প্রচুর পাখি দেখে। ট্রেনে আলিপুরদুয়ার পৌঁছে গেলে বক্সা পৌঁছনো কোনও ব্যাপারই নয়। থাকার জন্যও আছে সরকারী ব্যবস্থা। তবে হ্যাঁ, খরচের দিক থেকে উত্তরবঙ্গের অন্যান্য অনেক জায়গার মতোই বক্সাও বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।
কোচবিহার
রসিকবিল : তুফানগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে একটু দূরেই রসিকবিল একটা বিশাল হ্রদ। নিউ কোচবিহার রেল স্টেশন থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে তিনদিক জঙ্গলে ঘেরা এই হ্রদটিতে প্রচুর পাখি দেখতে পাওয়া যায়, আর তাদেরকেই মূল আকর্ষণ করে গড়ে উঠেছে এক জমজমাট ছুটি কাটানোর জায়গা। পর্যটক টানার জন্য এখানে আছে একটি ডিয়ার পার্ক, আছে একটি বড়সড় অ্যাকোয়ারিয়ামও। রসিকবিলের জঙ্গলে ঘেরা নিস্তব্ধতার মধ্যে শান্ত জলে নৌকোবিহার একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা। জুন মাসের আগে গেলে দেখতে পাবে রেড ক্রেস্টেড পোচার্ডের মতো প্রচুর বিরল পাখি। দল বেঁধে বেড়ানোর জন্য থাকার জায়গাও পাবে বনবিভাগের কটেজে।
উত্তর দিনাজপুর
কুলিক অভয়ারণ্য : যারা পাখি ভালবাস তাদের জন্য আইডিয়াল উইকেন্ড ডেস্টিনেশন হল কুলিক। কলকাতা থেকে প্রায় ৪২৫ কিলোমিটার দূরের শহর রায়গঞ্জ। সেই রায়গঞ্জ শহরের খুব কাছেই এরকম একটা পাখিরালয় আছে, তা না দেখলে বিশ্বাস হবে না। প্রায় ১৬৪ রকমের পাখি প্রতি বছর দেখতে পাওয়া যায় এখানে। একটা-দু’টো নয়, সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। চিল বা প্যাঁচা তো বটেই, দেখতে পাওয়া যায় মাছারাঙা, ফ্লাইক্যাচার, ড্রংগো, এগ্রেট, স্টর্ক, হেরন-এর মতো পরিযায়ী পাখিও। যারা পাখি ভালবাস না, তারা কাছের সাপনিকলা জঙ্গলে যেতে পারো। এই জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে দেখে নিতে পারো এখানকার সুবিশাল জলাশয়টি। থাকার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগের হোটেল খরচাপাতির দিক থেকে একদম সেফ অপশন।
দক্ষিণ দিনাজপুর
সারংবাড়ি : বালুরঘাট টাউনের কাছে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ জায়গা হল সারংবাড়ি। নিষ্কলুষ জঙ্গলে গিয়ে মন জুড়িয়ে যাবে সকলেরই। তবে হ্যাঁ, রাত কাটানোর জন্য সারংবাড়ি আইডিয়াল নয়, বরং বনের মধ্যে বনভোজনের জন্য এই জায়গাটা দুর্দান্ত। ফাঁকা, নিরিবিলি এই জঙ্গলে পাখির কলতান শুনে সময় কেটে যাবে আপনাদের। বন বিভাগের তরফ থেকে খাবার জলের ব্যবস্থা থাকলেও, খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা একদমই নেই। তবে সেইদিকটা সামলে নিতে পারলে সারংবাড়ি ভারী চমৎকার জায়গা।
মালদা
গৌড় : ঐতিহাসিক স্থাপত্যে ভরপুর গৌড় ভাল করে চাক্ষুষ করতে হলে কিন্তু হাতে কিছুটা সময় নিয়ে দেখতে হবে। মালদা টাউন রেল স্টেশন থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গৌড় একসময় মহারাজ শশাঙ্কর রাজধানী ছিল। গৌড়ের প্রধান আকর্ষণ ১৩৬৯ খ্রীষ্টাব্দে তৈরি আদিনা মসজিদ। সুন্দর এই মসজিদের স্থাপত্য যে কোন লোকের মন জয় তো করবেই। এ ছাড়াও পাবেন বড়সোনা মসজিদ, দাখিল দরওয়াজা, ফিরোজ মিনার বা লুকোচুরি গেট। আরবি স্থাপত্যের সঙ্গে হিন্দু স্থাপত্য এখানে সুন্দরভাবে মিলে গিয়েছে। যাতায়াত-থাকা খাওয়ার জন্য কোনওরকম ফাঁপড়ে পড়তে হবে না মালদায় গিয়ে।
মুর্শিদাবাদ
লালবাগ : এখানে ঘুরতে গেলে ঘাঁটি গাড়তেই হবে বহরমপুরে। অটো করে লালবাগে পৌঁছে রিকশা বা টাঙ্গা নিয়ে নিলে খুব সহজেই দেখে নিতে পারবেন বাংলার এক সময়ের রাজধানীর জমকালো চেহারা। লিস্টে প্রথমেই আসবে নবাব হুমায়ুন জা-র প্রাসাদ হাজারদুয়ারি। বিরাট এই স্থাপত্যটি এখন একটি মিউজিয়াম। একই চৌহদ্দিতে পাবে ইমামবারা, যেখানে আপনি ঢুকতে না পারলেও এর বিশালত্ব আপনাকে মুগ্ধ করবে। এ ছাড়াও দেখতে পার সন্ধেবেলার কাটরা মসজিদের শান্ত রূপ। হাতে সময় থাকলে অবশ্যই নৌকো করে ভাগিরথী পেরিয়ে একবার খোশবাগ ঘুরে আসতে পারেন। সেখানে দেখতে পাবেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের সমাধি।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে বাস অথবা বিমান যোগে কলকাতা। কলকাতা থেকে ট্রেন ও বাস যোগে বিভিন্ন জেলা ঘুরতে পারেন।
কোথায় থাকবেন :
কলকাতায় আপনার পছন্দমত যে কোন এলাকায় বিভিন্ন মূল্যমানের হোটেলে থাকতে পারেন।
প্যাকেজের ব্যবস্থা :
ঢাকা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, মোবা: ০১৯৭৮৮৮২২২৩, মাহিমা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস লি:, মোবা: ০১৯৭৩১৭৩৩৬, ক্লাসিক ট্রুরস এন্ড ট্রাবেলস, মোবা : ০১৭১৫৮১৭৯৯৪, ইস্টার্ন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, মোবা : ০১৭১১১০২১৩৮ সহ অসংখ্য ট্রাভেল কোম্পানি সারা বছর প্যাকেজের ব্যবস্থা করে থাকেন।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক
মানবাধিকার খবর