|
কক্সবাজারে সুপেয় পানির সংকট, আলোর মুখ দেখছে না দেড়শ কোটি টাকার প্রকল্প; |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
কক্সবাজারে সুপেয়ে পানির সংকট বাড়ছে দিন দিন। এ সংকট দূর করতে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার শহরে ‘ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার’ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো শুরু হয়নি বসতবাড়ির সংযোগ লাইন স্থাপনের কাজ। এ অবস্থায় প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কবে এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে তাও নিশ্চিত নয়। যদিও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ বিলম্বিত হওয়ায় অরক্ষিত প্ল্যান্টে ট্রিটমেন্টে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে জেলা প্রশাসন বলছেন, নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে জমি বুঝে না পাওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করছে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। তথ্য মতে, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর ভূগর্ভস্থ থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে দিন দিন পানির স্তর নিচে নামছে। ফলে সুপেয় পানি সংকটের পাশাপাশি পানিতে বাড়ছে স্যালাইনের মাত্রাও। এ অবস্থায় সুপেয় পানি সংকট দূর করতে উখিয়া-টেকনাফের সুপেয় পানি সংকট জরুরি সহায়তার আওতায় ‘কক্সবাজার শহরে ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রায় দেড়শত কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা মৌজায় ২.১৭৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ শেষ করা হয়। শহরের গোলদিঘি পাড় এলাকায় টাংকির পাহাড়ে একটি মাদার ট্যাংকসহ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকা, দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া, সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট এবং বাস টার্মিনাল এলাকায় তৈরি করা হয়েছে মোট পাঁচটি ওভার ট্যাংক । কিন্তু এখনো বসতবাড়ি সংযোগ লাইনের কাজ শুরুও করা হয়নি। অথচ ২০২৩ সালে জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় প্রথম দফায় ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। এবারও মেয়াদ শেষ হতে চললেও সংযোগ লাইন কাজের দরপত্রও আহ্বান করা হয়নি। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধিগ্রহণকৃত পুরো জমি বুঝিয়ে পাওয়ায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়নি। ফলে অরক্ষিত প্ল্যান্টে পানি ট্রিটমেন্ট কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ করতে গেলে ভূমি মালিক ক্ষতিপূরণ পায়নি দাবি করে কাজে বাধা দিচ্ছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতি ঘণ্টায় ১০ লাখ লিটার (এক হাজার মিটার কিউব) পানি ট্রিটমেন্ট করা হবে প্ল্যান্টে। যেখানে পৌরসভার ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে পানি সরবরাহ করা হবে। সার্ফেস ওয়াটার সমস্যা দেখা দিলে লবণাক্ত পানিশোধন করে পৌরসভার বাসিন্দাদের মাঝে পানি সরবরাহ করা হবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পানি শোধনাগার প্রকল্পটির জন্য ২.৭১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের ১.৭১ একর জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি জমি বুঝিয়ে দিতে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হলেও এখনো কার্যকর করেননি। তিনি বলেন, প্রকল্পের চারটি প্যাকেজের তিনটি ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। বসতবাড়ির সংযোগ লাইনের কাজ আগামী ছয় মাসের মধ্যে শুরু হবে। কাজ শেষ হলে প্রকল্পটি পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাহিদ ইকবাল বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, অধিগ্রহণকৃত জমিতে মামলাসংক্রান্ত জটিলতা থাকায় ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণের কিছু টাকা আটকে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অধিগ্রহণকৃত জমিতে দুদকের একটি মামলাও রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হলে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, শুরু থেকে আমরা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জমি বুঝিয়ে দিয়েছি। আমার মনে হয় এখনো বসতবাড়ির সংযোগ লাইন দিতে না পেরে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে এমন অভিযোগ করছেন তারা। প্রকল্প পরিচালক গোলাম মুক্তাদির গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা যখন প্রকল্পটি হাতে নিই। তখন হাউসহোল্ড কানেকশন ধরাই ছিল না। কারণ হাউসহোল্ড কানেকশনটা পৌরসভা দেওয়ার কথা ছিল। পরে পৌরসভা অপারগতা প্রকাশ করলে কাজটা পিছিয়ে যায়। এখন এ প্যাকেজটি নতুন করে প্রকল্পের ভেতরে আনা হয়েছে। যদিও দেরি হয়েছে, তারপরও প্রকল্পটি রিভিশন করে হাউস কানেকশন ইনক্লুড করে মন্ত্রণালয় থেকে পাস করিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে গেছে। একনেকে পাস হলে কাজ শুরু করা হবে। অনুমোদন ছাড়া আমার পক্ষে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।
মােঃ জানে আলম সাকী,
ব্যুরো চীফ, চট্টগ্রাম।
|
|
|
|
|