সারাদেশ
  আমনের ভরা মৌসুমে কুড়িগ্রামে বিভিন্ন সারের সংকট, বিপাকে কৃষক
  14-09-2025
আমনের ভরা মৌসুমে কুড়িগ্রামে বিভিন্ন সারের সংকট, বিপাকে কৃষক
 
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
 
কুড়িগ্রামে ইউরিয়া সহ বিভিন্ন সার সংকটের কারণে বিপাকে কৃষক। সারা দেশের মতো কুড়িগ্রামেও সার সংকটের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী কৃষকরা সার না পেয়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
 
কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে চলছে রোপা আমন ও সবজি আবাদ। আমন ধান চাষের শুরুতেই সৃষ্টি হয়েছে সারের সংকট। দিন যতই যাচ্ছে, সংকট তীব্র হচ্ছে। কৃষকরা দিনের পর দিন সার ডিলারের কাছে ধর্ণা দিয়েও সার পাচ্ছে না। জেলায় চলতি বছর বন্যা ও ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চরাঞ্চলেও বেড়েছে আবাদ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জেলায় শীতের আগাম সবজি চাষ শুরু হওয়ায় সারের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর সুযোগ কাজে লাগিয়ে সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চড়া দামে বিক্রি করছে।
 
আমন চাষের শুরুতে জেলা জুড়ে ইউরিয়া, টিএসপি এবং ডিএপি সারের সংকট বিরাজ করছে। জেলায় BCI-এর সার ডিলার ৯৪ জন এবং BA DC-এর সার ডিলার ১১৬ জন। কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে রৌমারী, নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী এবং ফুলবাড়ী উপজেলায় সার সংকট নিয়ে কৃষকদের মাঝে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে।
 
কৃষকরা জানিয়েছেন, চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছেন না। সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে জন প্রতি ১০/২০ কেজি’র উপর সার দিচ্ছে না ডিলাররা। সারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন ধানসহ আগাম সবজির আবাদ।
 
চলতি বছর জেলায় রোপা আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৫শ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৪শ হেক্টর। আর সবজি জাতীয় ফসলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭০০ হেক্টর। চাষ হয়েছে তার চেয়েও বেশি।
 
কুড়িগ্রাম জেলায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আগস্ট মাসে বরাদ্দ আসে ইউরিয়া-৬২৫৩ মেট্রিক টন, টিএসপি-৮০৯ মেট্রিক টন, ডিএপি-১০৭০ মেট্রিক টন, এমওপি-১৫৭০ মেট্রিক টন এবং সেপ্টেম্বর মাসে বরাদ্দ আসে ইউরিয়া-৩৮৯৪ মেট্রিক টন, টিএসপি-৪৫২ মেট্রিক টন, ডিএপি-১২০১ মেট্রিক টন, এমওপি-১১১০ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
 
সন্যাসী গ্রামের কৃষক মর্তুজা, আতা, লিটন জানান, বর্তমান বাজারে ইউরিয়া, পটাশ, ড্যাপ সার বাজারে দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। প্রতিটি সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কৃষকদের জন্য আবাদ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে টিএসপি ৪২ টাকা, ডিএপি ৩৫ টাকা এবং ইউরিয়া ৩৪ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। পর্যাপ্ত সার সরবরাহ না হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
 
মণ্ডলপাড়া গ্রামের জয়নাল, রহমান আলী জানান, এবার বন্যা হয়নি। মানুষ চর-দ্বীপচরসহ বিভিন্ন এলাকায় ধান ও সবজির আবাদ করেছে। চাহিদার তুলনায় আমরা সার পাচ্ছি না। সব সারের সংকট। ডিলাররা পর্যাপ্ত সার দিতে পারছে না। যতটুকু সার দিচ্ছে, তার দাম আগের তুলনায় দ্বিগুণ। সারের অভাবে ধান ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে।
 
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, “এ বছর বন্যা ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় চরাঞ্চলে রোপা আমনের আবাদ বেড়ে গেছে। আমন ধানের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় সারের চাহিদা বেড়ে গেছে। তবে বর্তমান সারের কোনো সংকট নেই। প্রতিটি পয়েন্টে আমাদের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের সার সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হচ্ছে।”