তবে মহেশখালীতে ইতোমধ্যেই একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল পরিচালনাকারী সামিট এ সিদ্ধান্তকে `অবৈধ` উল্লেখ করে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে।
২০১০ সালের বিশেষ একটি আইনের আওতায় আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রতিযোগিতা ছাড়াই ২০২৪ সালের ৩০ মার্চ সামিটকে এ চুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথমে গত ৭ অক্টোবর চুক্তি বাতিল করে। এক সপ্তাহ পর সামিট এর বিরোধিতা করে এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
রোববার জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, ১৪ জানুয়ারি সামিট এলএনজি টার্মিনাল ২ কোম্পানি লিমিটেড এবং পেট্রোবাংলার মধ্যকার চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "এ চুক্তি বাতিলের কারণ হলো, ২০১০ সালের যে আইনটির অধীনে টার্মিনাল স্থাপনের জন্য লেটার অফ ইন্টেন্ট দেওয়া হয়েছিল, সেটি বর্তমান সরকার বাতিল করেছে। পাশাপাশি, চুক্তির শর্তগুলো পূরণ করতেও কোম্পানি ব্যর্থ হয়েছে।"
জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত ১৪ অক্টোবর সামিটের একটি চিঠি পাওয়ার পর পেট্রোবাংলা আইনি জটিলতা এড়াতে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছিল।
অক্টোবরে একবার চুক্তি বাতিল করার পর আবার কেন চুক্তি বাতিল করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির বলেন, "সামিটের দেওয়া ব্যাখ্যা বিবেচনায় নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের প্রেক্ষিতে এখন চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছে।"
বর্তমানে, অ্যাক্সিলারেট এনার্জি এবং সামিট কর্পোরেশনের মালিকানাধীন দুটি ভাসমান স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) প্রতিদিন প্রায় ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে।
দেশের ক্রমবর্ধমান শিল্প চাহিদা এবং অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদনের ঘাটতি পূরণে মহেশখালীতে তৃতীয় এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। ২০২৩ সালের ১৪ জুন অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি সামিটকে এ প্রকল্পে অনুমোদন দেয়।
পরবর্তী এক বছরে সামিট এলএনজি টার্মিনাল ২ কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি (টিইউএ) এবং একটি বাস্তবায়ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
প্রস্তাবিত টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। সামিট এ প্রকল্পে ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল বলে জানা গেছে।
চুক্তিটি ২০১০ সালের বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন অনুযায়ী স্বাক্ষরিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের শাসনামালের এ আইনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়া এড়ানো হতো।
তবে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র নিশ্চিত করতে গত বছরের নভেম্বরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ আইন বাতিল করে।
সামিটকে পাঠানো পেট্রোবাংলার ১৪ জানুয়ারির চিঠিতে বলা হয়, শর্ত ভঙ্গ করার জন্য চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। বিশেষত, সামিট এলএনজি টার্মিনাল ২ কোম্পানি লিমিটেড নির্ধারিত সময়ে [৯০ দিন] পারফর্মেন্স বন্ড জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। মূল কোম্পানি সামিট কর্পোরেশন বন্ড জমা দিলেও পেট্রোবাংলা এটিকে যথাযথ বলে মনে করেনি।
পরদিন, ১৫ জানুয়ারি সামিট তাদের প্রতিক্রিয়ায় চুক্তি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানায়। তারা দাবি করে, চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত `অবৈধ কারণে` [ইনভ্যালিড গ্রাউন্ড] নেওয়া হয়েছে এবং তারা সময়মতো বন্ড জমা দিয়েছে।
সামিট জানায়, টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তির (টিইউএ) ধারা ২৭ অনুযায়ী চুক্তি বাতিল করার কোনো অধিকার পেট্রোবাংলার নেই। এ ধারা এখনও কার্যকর হয়নি। এছাড়া, ধারা ২.৩(সি) ছাড়া অন্য কোনো নিয়ম এ পর্যায়ে টিইউএ বাতিলের অনুমতি দেয় না।
তারা আরও বলে, মূল কোম্পানির মাধ্যমে জমা দেওয়া পারফর্মেন্স বন্ড গুরুত্বপূর্ণ কোনো শর্ত ভঙ্গ করেনি, কারণ এটি পেট্রোবাংলাকে একই সুরক্ষা দিয়েছে। সামিট বন্ডটি পরিবর্তন করে কেবল টার্মিনাল কোম্পানির নামে নতুন একটি জমা দেওয়ার প্রস্তাবও দেয়।
আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে বন্ড জমা দিতে ব্যর্থতা চুক্তি ভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত নয় বলে সামিট জানায়। তারা ১৮৯৭ সালের জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্টের ১০ ধারা উল্লেখ করে জানায়, কোনো কাজ অফিস বন্ধ থাকার দিন করলে তা পরের কার্যদিবসে করা হলে সময়মতো বিবেচিত হয়।
পরিশেষে সামিট জানায়, বাংলাদেশের তৃতীয় এলএনজি টার্মিনালের প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরি। এ প্রকল্পে বিলম্ব দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে।