সারাদেশ
  চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কথায় ‘ক্ষুব্ধ’ পরিবেশ উপদেষ্টা
  20-01-2025
মােঃ জানে আলম সাকী,ব্যুরো চীফ, চট্টগ্রাম: পাহাড় কাটা নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিমের কথায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তাৎক্ষণিক ওই বক্তব্যের জবাবও দিয়েছেন তিনি।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বক্তব্য দিয়ে উঠে যাচ্ছিলেন। এ সময় সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বলা হয়, ৫ হাজার স্কয়ার মিটার পর্যন্ত পাহাড় কাটতে পরিবেশের ছাড়পত্র লাগে না।’
ওই কথা শুনে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান পিছনে ফিরে উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘পুরোটাই ভুল ইনফরমেশন। আপনি পরিবেশের দিকে তাকাবেন না। এটা দেশের আইন পাহাড় কাটা যাবে না। আপনি সিডিএ হিসেবে আপনি আটকাবেন। পরিবেশ তার কাজ করলো না, ফেলে দিলাম পরিবেশকে। আপনি আপনার কাজ কতুটুক করেন সেটা আমাকে বলেন।’
আকবরশাহতে পাহাড় কেটে রাস্তা কে করলো প্রশ্ন রেখে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সিডিএ যে আকবরশাহতে পুরো রাস্তাটা করলো, ওই রাস্তাটা কে করলো? সিডিএ করলো। আপনি পরিবেশের দিকে আঙ্গুল দেওয়ার আগে নিজের দিকে দেখবেন। যে আপনি কি করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাড়ির অনুমতির জন্য পরিবেশ তো, পাহাড়ে বাড়ি বলছে না। যেই ল্যান্ড রেকর্ডের কথা বলছেন, ল্যান্ড রেকর্ডে তো পাহাড় নেই ওটা বাস্তবে বিশাল পাহাড়। ওটা ভিত্তি দেখানো হয়েছে।’
এর আগে, সাংবাদিকদের বাইরে রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন সংস্থা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জলাবদ্ধতা নিরসনে পরামর্শ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলাদা বৈঠক করেন। পরে বৈঠকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
জলাবদ্ধতা নিরসনে পদেক্ষপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘খালগুলো এবার সীমানা চিহ্নিত করেন। বাংলাদেশের সীমানা চিহ্নিত একটি ব্যয়বহুল বিষয়। যখন আমরা নদী চিহ্নিত করতে বললাম তখন সিমেন্ট-রড দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। এটা আবার দলীয় ঠিকাদার। ওই দলীয় ঠিকাদার ভুল সীমানা দিল, আমরা পরিবেশবাদী বাধা দিলাম তখন আমাদের বিএনপি বানিয়ে দিল। আবার ভুল সীমানা যারা করেছে তাদেরও টাকা দেওয়া হলো; যারা পরবর্তীতে সীমানা করে দিয়েছে  তাদেরও টাকা দেওয়া হলো।’
‘যেখানে যেখানে মামলা আছে সেখানের একটা তালিকা দিয়ে দেন। সেই তালিকা ধরে আমরা ঢাকায় অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলবো।’
পলিথিনের বিরুদ্ধে প্রথম পর্যবেক্ষণ এরপর কঠোর অভিযান চালানো হবে জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা পলিথিনের কথা বললেন; পলিথিন ব্যবহার করিয়েন না তাহলে আর আসবে না। দোকানদার বিষ দিলে তো খাবেন না; তাহলে পলিথিন দিলে নেন কেন? আজ আমরা পলিথিনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করলাম। প্রথম একমাস আমরা সুপারশপগুলোতে জোর দিব। এরপর কাঁচাবাজারে। আর এর পরেই আমরা পুরোপুরি অভিযানে চলে যাব প্রোডাকশন যেখানে হয়। এক্সপোর্টের নামে প্রোডাকশন করে মার্কেট ছাড়া, এটা করা যাবে না।’
পুলিশকে উদ্দেশ্যে করে এ উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা থেকে পলিথিনের ব্যাগ আসে, রাস্তায় আটকে দেন। আপনাদের তো টহল পুলিশ থাকে। মালামাল জব্দ করে ফেলেন। নিজেদের কাজটা তো নিজেদের করতে হবে।’
পাহাড়ের জায়গাগুলো পাহাড়ের নামে রেকর্ড নেই জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পাহাড় কাটার একটা তালিকা বিভাগীয় কমিশনার থেকে নেওয়া হয়েছে। ১২টা জেলার সম্পূর্ণ পাহাড়ের তালিকা আছে। পাহাড় কাটার জায়গায় তদন্তে জানতে পারি, এগুলো পাহাড় হিসেবে রেকর্ডেড না। এগুলো খোলা ও ভিত্তি হিসেবে রেকর্ডেড। তারমানে দুর্নীতি কোন পর্যায়ে গেছে! বড় বড় পাহাড়গুলো পাহাড় নামে রেকর্ড নেই। এটা আগে আরএসে পাহাড় ছিল; এখন আর পাহাড় নেই। এখন পাহাড় কেটে এরা হাউজিং করছে।’
পাহাড়ের মালিক হলেও পাহাড় কাটতে পারবে না মন্তব্য করে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, ‘জমির মালিকদের আমরা বলছি রেজিস্ট্রি করতে ডাকযোগে চিঠি দিয়ে বলা হবে— তোমার পাহাড় হলেও তুমি কাটতে পারবে না। পাহাড় কাটলে এখন অভিযানে গিয়ে শ্রমিকদের ধরে আনা হয়। উনাদের ধরে লাভ কি! পাহাড় মালিকদের ধরে আনতে পারেন না! না পারার কি আছে। দু’একটা মালিককে গ্রেপ্তার করলে অটোমেটিক পাহাড় কাটা বন্ধ হয়ে যাবে।’
পাহাড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা বিদ্যুৎ-পানি কিভাবে পায় সেই বিষয়টি কর্তৃপক্ষদের কাছে থেকে জানতে চেয়েছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা বিদ্যুৎ সংযোগ পাই কি করে, পানির সংযোগ পায় কি করে? আমরা গিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে আসি। এসব ভাঙতে একটি টিম নিয়ে যেতে কি যে কষ্ট তা আমরা জানি। কেউ যেতে রাজি না আমাদের সাথে। তারপরও অনেককে বলে, জোর করে নিয়ে যাই। সবাই তো আপনারা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে আছেন। আপনাদের চোখের সামনে যখন পাহাড় কাটা হয়, তখন গাড়ি থামিয়ে আপনারা সেই পাহাড় কাটা থামান না কেন! অপেক্ষা করেন কেন একটা আনুষ্ঠানিক অভিযোগের। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে করতে তো ততক্ষণে সেই (পাহাড়খেকো) একটা পাহাড় ১০-১২ঘণ্টায় কেটে ফেলতে পারে।’
‘এক আকবরশাহ পাহাড় বাঁচাতে ২০১৫ সাল থেকে মামলা করে আসছি। ২০২৩ সালে এসে মার খেয়ে গেছি। আজ ২০২৫ সাল অবস্থান বদলেছে, আমি উপদেষ্টা হয়েছি। এখনো আকবরশাহতে পাহাড় কাটে। কেমন করে কাটে? আপনারা বিদ্যুৎ-পানির লাইন দেন কেন? আপনারা পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করেন না কেন? আপনারা বিদ্যুতের লাইন দেন কেন? আমাদের সকলকেই যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব নিতে হবে।’