মােঃ জানে আলম সাকী, ব্যুরো চীফ, চট্টগ্রাম : কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে শুরু হয়েছে ‘সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধ কর্মসূচি’। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। প্রথম দিনে সুগন্ধা পয়েন্ট ও সি-গাল পয়েন্টে দুটি ‘প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ স্টোর’ স্থাপন করা হয়, যেখানে পর্যটকরা ব্যবহৃত সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বোতল জমা দিলেই পাচ্ছেন বিভিন্ন নিত্যপণ্য।
পাশাপাশি স্থানীয় অধিবাসীর জন্য বসানো হয়েছে ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার’, যেখান থেকে স্থানীয় দুস্থ পাঁচ শতাধিক পরিবার প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার করতে পেরেছে। প্রথম দিনেই প্রায় চার টনের বেশি প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়েছে। আয়োজকরা জানান, সংগৃহীত প্লাস্টিক রিসাইকেলের জন্য কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এ প্লাস্টিকের একটি অংশ দিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে নির্মাণ করা হবে ‘প্লাস্টিকের ভাস্কর্য’।
সরেজমিনে দেখা যায়, নানা নিত্যপণ্যের পসরা নিয়ে সৈকতের সি-গাল পয়েন্টে বসেছে বিশাল সুপারশপ। লোকজন প্লাস্টিকের বিনিময়ে এসব পণ্য কিনছেন। বাজারে ১ কেজি প্লাস্টিকের দাম ২০-৩০ টাকা হলেও সেখানে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকা মূল্য। এক কেজি প্লাস্টিক দিয়ে এক কেজি চাল যেমন পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি ছয়টি ডিমও পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় ১৯টি পণ্য থেকে নিজেরাই বাছাই করে কেনার স্বাধীনতা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে, ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোরে’ পর্যটকরা প্লাস্টিকের বোতল জমা দিয়ে বিভিন্ন উপহার জিতে নিচ্ছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্যে সামুদ্রিক প্রতিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। ফলে মৎস্য, তিমি ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু সামগ্রিকভাবে সামুদ্রিক প্রতিবেশকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বিদ্যানন্দের বোর্ড সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের অস্তিত্বের হুমকি প্লাস্টিক। নদীমাতৃক এ দেশের প্রাণ প্রবাহ বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণে বিপন্ন প্রাণিকুলকে রক্ষা এখন সময়ের দাবি।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কক্সবাজার সৈকত ও সেন্টমার্টিনে দূষণ রোধে চার মাসব্যাপী বেশ কিছু কাজ ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার সৈকতে তিনটি অস্থায়ী বুথ স্থাপন করা হবে, যেখানে পর্যটকরা প্লাস্টিক জমা দিয়ে উপহার নেবেন; কক্সবাজার সৈকতের লাবনী মার্কেটে স্থায়ী প্লাস্টিক বিনিময় স্টোর স্থাপন করা হবে, যেখানে দরিদ্ররা কুড়ানো প্লাস্টিক জমা দিয়ে কম মূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে পারবেন; পর্যটকদের মাঝে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা বোঝাতে ও প্লাস্টিকবিরোধী সচেতনতা তৈরিতে সৈকতে ভাস্কর্য নির্মাণ ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া স্থানীয়দের প্লাস্টিক দূষণবিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে দুস্থ অধিবাসীদের জন্য ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজারের’ আয়োজন করা হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন আহমেদ, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক জমির উদ্দিন, পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার জামাল উদ্দিন প্রমুখ।