সারাদেশ
  ভবদহের সমস্যা মেটে না কেন? ব্যাখ্যা চায় মানবাধিকার কমিশন
  09-10-2024

মােঃ জানে আলম সাকী, ব্যুরো চীফ, চট্টগ্রাম :  যশোরের ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে বছরের পর বছর ধরে মানবিক বিপর্যয় চলার পরও এর সমাধান না করাকে ‘পদ্ধতিগত মানবাধিকারের লঙ্ঘন’ হিসেবে দেখছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

সেখানে জলাবদ্ধতার প্রকৃত কারণ এবং পানিবন্দি মানুষের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বঃপ্রণোদিত (সুয়োমটো) অভিযোগ গ্রহণ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছে।

সোমবার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গণমাধ্যমে মনিরামপুরের ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা; লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি বিষয়ক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বৃষ্টির মৌসুম আসলেই একটি বিশেষ অঞ্চল প্লাবিত হওয়া এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের দুর্দশা সৃষ্টি হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এর ফলে স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

“বছরের পর বছর ধরে মানবিক বিপর্যয় সংগঠিত হওয়া সত্ত্বেও এ বিষয়ে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া বা সমস্যার সমাধান না করা পদ্ধতিগত মানবাধিকারের লঙ্ঘন।”

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে কমিশন বলেছে, “গত কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণে মনিরামপুর উপজেলার ভবদহ অঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে এ অঞ্চলকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হয়নি। যশোর-খুলনা অঞ্চলের মানুষের দুঃখের একটি নাম হলো ভবদহ।

“বৃষ্টির মৌসুম আসলেই এই অঞ্চলের মানুষের নির্ঘুম রাত কাটে। ভারি বৃষ্টি হলে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তলিয়ে যায় ফসলের খেত, হাজার হাজার মাছের ঘের ও পুকুর। ক্ষতি হয় মানুষের কোটি কোটি টাকার সম্পদের। সরকার আসে, সরকার যায়, প্রকল্প আসে, প্রকল্প শেষ হয়ে যায়, কিন্তু ভবদহ এলাকার মানুষের সমস্যার কোনো সমাধান হয় না।

কমিশন বলছে, বন্যা হলে ওই এখানকার মানুষ নওয়াপাড়া, খুলনা, যশোর ও মনিরামপুর শহর এলাকায় গিয়ে কেউ রিকশা বা ভ্যান চালায়, কেউ মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। কেউ শাপলা কলমি শাক বিক্রি করে দিন চালায়।

সম্প্রতি টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে বন্যার সৃষ্টি হওয়ায় ওই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তার ওপরে উঁচু জায়গায় টং ঘর বেঁধে বসবাস করছে তারা।

বিশেষ করে ছিয়ানব্বই এলাকার কুলটিয়া লাখাইডাঙ্গা নেহালপুর পাতাকড়ি ও কপালিয়া অঞ্চলের মানুষ বেশি দুর্ভোগে পড়েছে। সেখানে শতশত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা হাঁটু পানি ভেঙে বা বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাসে যাচ্ছে বলে সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানতে পেরেছে মানবাধিকার কমিশন। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, বছরের পর বছর একটি জনপদের জনগণের জীবনযাত্রায় বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এ প্রকারের দুর্যোগের হাত থেকে এলাকায় বসবাসকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে একটি স্থায়িত্বশীল ব্যবস্থার সুযোগ প্রদান তাদের মানবাধিকারের দাবি।

“বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে সমস্যার একটি কার্যকর ও বাস্তবানুগ সমাধান নিরূপণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে বলে কমিশন প্রত্যাশা করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি কামনা করে।”

এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং কেন এতদিনেও সমস্যার সমাধান করা যায়নি তা কমিশন জানতে চায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সমস্যার একটি প্রকৃত সমাধানের ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদান ও ‘পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আগামী ১২ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে কমিশন।