সারাদেশ
  প্রধানশিক্ষকের এমপিও বন্ধ, তবু পশুর হাট বসানো ঠেকানো যাচ্ছে না
  13-06-2024
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়। প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের একের পর এক অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকেছে। শাস্তি কিংবা সতর্কতা, কোনও কিছুতেই অনিয়ম থেকে তাকে বিরত রাখা যাচ্ছে না।  বিদ্যালয়ের মাঠে পশুর হাট ও টাকার বিনিময়ে প্রবেশপত্র দেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় চলতি বছরের ১ মে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তির এমপিও বন্ধ করে দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এতেও ভ্রুক্ষেপ করেননি। টিফিনের সময়ে ছুটি দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে পশুর হাট বসিয়ে যাচ্ছেন। সেই হাটের ইজারাদার বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিজেই। মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে কোনও শিক্ষার্থী নেই। শ্রেণিকক্ষে তালা। প্রধান শিক্ষকের কক্ষেও তালা। মাঠজুড়ে শত শত পশু আর ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। বিদ্যালয় চত্বরে অবস্থিত শহীদ মিনারটি অবমাননার শিকার। পশুর মলমূত্র মাড়িয়ে স্যান্ডেল পায়ে শহীদ বেদিতে বসে আছেন অনেকে। হাটে এক শিক্ষকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, পশুর হাটের কারণে টিফিনের সময়ে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়া হয়েছে। প্রতি মঙ্গলবার মাঠে হাট বসে। হাটের কারণে পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করতে পারে না। ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক কিংবা প্রশাসন কারও এগুলো দেখার সময় নেই। শিক্ষকদের কমন রুমে দেখা হয় আরেক শিক্ষকের সঙ্গে। আলী আহমেদ নামের ওই শিক্ষক বলেন, ‘রুটিনে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ক্লাস চলার কথা থাকলেও মঙ্গলবার পশুর হাটের কারণে দুপুর ১টায় ছুটি দেওয়া হয়। মাঠে পশুর হাট বসায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা খেলতে পারে না। এটা আমাদেরও কষ্ট দেয়। আমরা চাই হাটটি অন্যত্র স্থানান্তর হোক। এতে বিদ্যালয়টি ঐতিহ্য ধারণ করে টিকে থাকবে।’ শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বাবলু সরকার হাটের ইজারাদার। তিনি দুর্গাপুর বাজার বণিক সমিতিরও সভাপতি। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে মিলে বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়মিত পশুর হাট বসান। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে গত মে মাস থেকে প্রধান শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করে মাউশি। এরপরও হাট বসানো থেকে প্রধান শিক্ষককে ঠেকানো যায়নি। তবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বাবলু সরকারের দাবি, উপজেলা প্রশাসনের কাছে পশুর হাটের জন্য বিকল্প মাঠ চাইলেও কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। লিখিত আবেদন করেও সমাধান মেলেনি। বাবলু সরকার বলেন, ‘হাটটি উলিপুর উপজেলা প্রশাসনের আওতাধীন। এ বছরও আমি ইজারা পেয়েছি। বিকল্প মাঠ না থাকায় কয়েক দশক ধরে স্কুল মাঠে পশুর হাট বসছে। ঈদের পর অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে।’ তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, বিদ্যালয়ের মাঠে পশুর হাট বসানোর কোনও অনুমোদন নেই। এজন্য তারা তেমন কোনও নির্দেশনা দেননি। শিক্ষা বিভাগ বলছে, প্রধান শিক্ষক না চাইলে বিদ্যালয়ের মাঠে পশুর হাট বসানোর কোনও সুযোগ নেই। এভাবে হাট বসানো মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার লঙ্ঘন এবং প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অবহেলার শামিল। এ ব্যাপারে জানতে মঙ্গলবার বিকালে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারকে কল দিলে তিনি সংযোগ কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন। বুধবার সকালে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসানোর কোনও সুযোগ নেই। তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তারা বারবার ঐতিহ্যের কথা বলে মাঠে হাট বসাচ্ছে। তাদের বিকল্প মাঠে হাট বসাতে বলা হয়েছে।’
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
বুধবার, ১২ জুন ২০২৪ ইং ০৯:০১ পিএম.