সারাদেশ
  কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিওগুলোর গতিবিধির উপর নজরদারি বাড়ছে;
  15-05-2024
মিয়ানমারের ভেতরে সংঘাত-সহিংসতা বাড়ছে। এদিকে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এ কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর কার্যক্রমের আড়ালে ক্যাম্পে যেন কোনও ধরনের অস্থিরতা তৈরি না হয়, সেদিকে সরকার নজর রাখছে। 
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক এক বৈঠক শেষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ক্যাম্পে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায়ই তাদের ক্যাম্পে ঢোকা ও কার্যক্রম পরিচালনার ওপর নতুন নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারা বেশিরভাগই সেটা মেনে কাজ করে আসছেন, কেউ কেউ ব্যত্যয় ঘটিয়ে থাকতে পারেন। বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করতে হলে এনজিওগুলোকে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী যেকোনও এনজিওকে তাদের সব কর্মীর তালিকা ও সব ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে রিপোর্ট করতে হয়। তারা কী কী কাজ করবে, এ সংক্রান্ত লিখিত বিবরণের প্রতি পাতায় এনজিও বিষয়ক ব্যুরো কর্মকর্তার অনুস্বাক্ষর লাগবে এবং এর কপি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিতে হবে।
 পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করারও নির্দেশনা দেওয়া আছে। সংস্থা ও প্রকল্পের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রকল্প বাস্তবায়নকালে রাষ্ট্র, সরকার ও প্রত্যাবাসনবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত হতে পারবেন না।প্রত্যাবাসন কমিশন অফিস বিভিন্ন গণমাধ্যমকে  বলছে, এনজিওগুলো ব্যুরোর নির্দেশনা মেনে কমিশন অফিসের অনুমোদনে কাজ সম্পাদন করছে কিনা তারা তা দেখেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনে ভিন্ন সতর্কতা জারি করে থাকে।
 
বরাবরই গোয়েন্দা অভিযোগ, অখ্যাত কিছু এনজিওর ওপর ভর করে ক্যাম্প অস্থির করার চেষ্টা করে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। রোহিঙ্গা বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ক্যাম্প এলাকায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনা প্রণয়নের পরিবর্তে ফৌজদারি কার্যবিধি ও প্রচলিত বিধিবিধান অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ক্যাম্পে যৌথ টহল পরিচালনা করতে হবে। সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ সেই বৈঠকে বলা হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার বাইরে চারপাশে তাদের টহল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর কুইক রেসপন্স ফোর্স তাৎক্ষণিকভাবে মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ভাসানচর, নদী ও সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ডের একটি কন্টিনজেন্ট মোতায়েন রয়েছে।রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় এনজিও’র কার্যক্রম কঠোরভাবে নজরদারি করার পাশাপাশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও গুজবের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে। সেক্ষেত্রে পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়, পুলিশের সব সংস্থা এনজিও কার্যক্রম কঠোরভাবে নজরদারি করছে। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম  জানতে চাইলে এনজিও ব্যুরো থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কর্মরত দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর প্রকল্প কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী তদারকি ও মনিটরিং করা হচ্ছে। কোনও এনজিও’র বিষয়ে নেতিবাচক কোনও গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে জানানো হচ্ছে।এর আগে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক এনজিও আদ্রা ও আল মারকাজুল ইসলামীর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার। কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশে আর্থিক সহায়তা এবং প্রত্যাবাসনবিরোধী প্রচারণায় সহায়তার দায়ে এই এনজিও দুটিকে নিষিদ্ধ করা হয় তখন। ওই বছর প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার জন্যও বেশ কিছু এনজিও’র অপতৎপরতাকে দায়ী করে সরকার। মূলত এরপরই এনজিওগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়। যদিও এরপর আর কোনও এনজিওর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়নি।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বৈঠক শেষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা দেখছি। তারা পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয়দের হত্যা করেছে। প্রায়ই ক্যাম্পে মারামারি ও বিশৃঙ্খলা করছে। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের কাজ করে যাচ্ছে।কক্সবাজারে কর্মরত এনজিওগুলো সাধারণত গণমাধ্যমে কথা বলতে চায় না। শুরু থেকে ক্যাম্পে সচেতনতা কার্যক্রমে জড়িত একটি দেশি এনজিওর কর্মকর্তা নিজের ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে  বলেন, ক্যাম্প এলাকা এত বিশাল, চাইলেও কে কী ধরনের কাজে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে তা মনিটরিং সম্ভব না। আর মানবাধিকার ইস্যু আছে। তাই বিদেশি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে চাইলেও অনেক কিছু করা সম্ভব হবে না সরকারের পক্ষ থেকে। সব মিলিয়ে মাঝে মধ্যে এনজিওগুলোকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনও অগ্রগতি না হওয়ার কথা উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও শরণার্থী বিষয়ক সেলের প্রধান মো. হাসান সারওয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যমকে  বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিক রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বর্তমানে অনিশ্চিত অবস্থায় আছে। সর্বশেষ যে ১১৭৬ জনকে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল সেটাও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। কবে নাগাদ মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটা কেউ বলতে পারছেন না।এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন কাজ চালিয়ে যেতে হলে তদারকি দরকার উল্লেখ করে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (ডিজি) মো. সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের  বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা এনজিও কার্যক্রমের ওপর নিয়মিত মনিটরিং ও নজরদারি রেখেছেন। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে কোনও এনজিও যাতে অপতৎপরতা চালাতে না পারে সেজন্য এনজিও ব্যুরোসহ সরকারের সব সংস্থা ও অংশীজন সতর্ক রয়েছে।