স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
  পঞ্চগড়ে সিভিল সার্জনের উদ্যোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চলছে অপারেশন কার্যক্রম
  06-03-2024

পঞ্চগড়ে সিভিল সার্জনের নিজ উদ্যোগ ও স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বেড়েছে অপারেশন কার্যক্রম। সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা থাকলেও শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক না থাকায় এসব হাসপাতালে অপারেশন কার্যক্রম এক প্রকার বন্ধই ছিল। গত বছরের শুরুর সাত মাস জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল বাদে অপর চার উপজেলা হাসপাতালে একটি অপারেশনও হয়নি। সেখানে ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী পঞ্চগড়ে সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদানের পর থেকে নিজ উদ্যোগে গত বছরের পরের পাঁচ মাস এবং গত জানুয়ারী মাস পর্যন্ত ছয় সাসে সিজারিয়ান অপারেশনসহ ১৫৬টি অপারেশন হয়েছে। এতে করে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি যেমন সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে তেমনি সেবা গ্রহীতাদের অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়মিত অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত জেলার অন্য চার উপজেলা আটোয়ারী, বোদা, দেবীগঞ্জ ও তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি অপাশেনও করা হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে এসব উপজেলা হাসপাতালে সার্জারী চিকিৎসক নেই। যদিও অপারেশন করার মত সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে এসব হাসপাতালে। গত বছরের ১৩ জুলাই পঞ্চগড়ে সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী। তিনি যোগদানের পরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সিজারিয়ানসহ জেনারেল মেজর সার্জারী চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি নিজে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে উপস্থিত থেকে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় শুরু করেন অপারেশন কার্যক্রম। গত বছরের আগষ্ট মাস থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এসব হাসপাতালে ১৩৮টি গাইনী মেজর সার্জারী (সিজারিয়ান) অপারেশন হয়। এ ছাড়া জেনারেল মেজর সার্জারী হিসেবে এই সময়ের মধ্যে হার্নিয়া, হাইড্রোসিল, লাইপোমা, এ্যাবডোমিনাল টিউমার, গলব্লাডার, পাইলস, সিবাসিয়াস সিষ্ট ও ব্রেষ্ট এবসেস এর ৫৪টি অপারেশন হয়। রোগী থাকলে নির্ধারিত দিনে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিজে গিয়ে এসব অপারেশন কাজ করছেন। দাপ্তরিক কাজের বাইরে এটা করছেন।
সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে পঞ্চগড় স্বাস্থ্য সেবার দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে ছিল। এর মূল কারণ হিসেবে এখানে রয়েছে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট। এখনও সেই সংকট রয়েছে। আধুনিক সদর হাসপাতালে সার্জারীসহ অন্যান্য চিকিৎসক থাকায় নিয়মিতভাবেই অপারেশন কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে সার্জারী চিকিৎসক না থাকার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অপারেশন কার্যক্রম অনেকটাই বন্ধ ছিল। ব্যবহার না হওয়ায় অপারেশন থিয়েটারগুলোও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। এতে করে গাইনী মেজর সার্জারী (সিজারিয়ান) ও জেনারেল মেজর সার্জারী করার জন্য মানুষজন বেসরকারি ক্লিনিকের দারস্থ হত। এতে খরচের পরিমান অনেক বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হত পরিবারগুলো। অবস্থাসম্পন্ন পরিবারগুলো এই ভার সহ্য করতে পারলেও সাধারণ মানুষগুলো সংকটে পড়ত। এসব বিবেচনায় আমি পঞ্চগড়ে যোগদানের পর থেকেই নিজ উদ্যোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে হাসপাতালগুলোতে অপারেশন কার্যক্রম শুরু করেছি। আগামীতে এসব হাসপাতালে অপারেশনের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি অবশ্য তাঁর এ কাজে চিকিৎসক ও সেবিকাসহ যারা সহযোগিতা করছেন তাদের ধন্যবাদ জানান। তাঁর অপারেশন কার্যক্রমে তেঁতুলিয়ায় গাইনি কনসালটেন্ট ডা. আফিফা, ডা. মাজেদা, বোদায় ডা. নিতু, ডা. সাদমান ডা. জাহিদ ডা. ফারিয়া, আটোয়ারীতে গাইনি কনসালটেন্ট ডা. নাহিদ, ডা. হাফেজা, ডা. শাফায়াত এবং দেবীগঞ্জ ডা. মুক্তি, ডা.নোমান সহ অন্যান্য নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহযোগিতা করছেন। অনেকে সময় কোথাও অবদনবিদ বা স্টাফের সংকট থাকলে তিনি জেলা সদর থেকে সাথে নিয়ে যান।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য শহীদুল ইসলাম শহীদ বলেন, তিনি এটা না করলেও পারতেন। নিয়মিত দায়িত্ব পালন বা দাপ্তরিক কাজ করলেই উনার দায়িত্ব শেষ। কিন্তু তিনি দায়িত্বের বাইরে এসব অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সিভিল সার্জনের এই কর্মযজ্ঞ আসলে তাঁর দেশপ্রেমের বহি:প্রকাশ। শুধু তিনিই নন জেলার সরকারিমবেসরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই সিভিল সার্জনের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, উনি না থাকলে বা বদলী হয়ে অন্যত্র চলে গেলে তখনতো এই কার্যকম বন্ধ হয়ে যাবে আশঙ্খা প্রকাশ করনে। 
মোঃএনামুল হক
পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি