সারাদেশ
  রাখাইন ছেড়ে যাচ্ছে বিদেশি মিশন ও সংস্থা;
  10-02-2024
 
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের রাখা হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ে। বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রও এটি। পরীক্ষার্থীরা এই কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে তৎপর বিজিবির সদস্যরা। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী বাহিনী আরাকান আর্মির লড়াই দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এ অবস্থায় সেখান থেকে বিদেশি মিশন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ভারতীয় উপদূতাবাসের কূটনীতিকেরা ইতিমধ্যে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তে ছেড়ে গেছেন। বাংলাদেশের কূটনীতিকদেরও দুয়েক দিনের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে। প্রতিবেশী দেশটিতে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের তুমুল লড়াইয়ের আঁচ পড়ছে বাংলাদেশেও। সেখানকার গোলা এসে পড়ছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের গ্রামগুলোতে। ইতিমধ্যে গোলার আঘাতে দুজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। পাঁচ দিন ধরে এসব গ্রামের বাসিন্দারা উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছেন। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির অনেক সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয়ও নিয়েছেন। গত সোমবার থেকে এটা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৩৩০ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন বলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে। এঁদের মধ্যে কিছু সেনাসদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাও রয়েছেন। ওয়াকিবহাল একটি সূত্র জানায়, আরাকান আর্মি উত্তর দিক থেকে মিয়ানমার সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের আক্রমণ করে দক্ষিণের দিকে যেতে বাধ্য করেছে। এ ছাড়া রাখাইনের পূর্ব অংশে ও দক্ষিণের নিচের দিকে ইতিমধ্যে অনেক স্থান আরাকান আর্মির দখলে।  ইয়াঙ্গুন ও সিত্তের বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াই তীব্র হচ্ছে। গত কয়েক দিনে সংঘাত চরম আকার ধারণ করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাখাইনে ভারতীয় উপদূতাবাস তাদের কূটনীতিকদের বৃহস্পতিবার সকালে সিত্তে থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এই মুহূর্তে সেখানে শুধু ভারতীয় উপদূতাবাসের স্থানীয় কর্মী অর্থাৎ মিয়ানমারের নাগরিকেরা কাজ করছেন। রাখাইনে ভারত ও বাংলাদেশ এই দুই দেশের উপদূতাবাস রয়েছে। বাংলাদেশের এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমকে  বলেন, সিত্তে থেকে আগামী দু–এক দিনের মধ্যে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের সরিয়ে নেওয়া হবে। এরই মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।  সব মিলিয়ে উত্তর রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং সীমান্তরক্ষীদের ১০টি কমান্ডের তিনটি কমান্ড আরাকান আর্মি পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে। রাখাইনে জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থাসহ (ইউএনডিপি) জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থার দপ্তর রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র থেকে জানা গেছে, গত ১০ দিনে রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জাতিসংঘের তিন শর মতো কর্মীকে সিত্তে শহরে নিয়ে আসা হয়েছে। এঁদের সবাই মিয়ানমারের নাগরিক। এ ছাড়া সিত্তেতে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হয়েছে।
মােঃজানে আলম সাকী,চট্টগ্রাম।