জীবন চলার ক্ষনকালে জীবন নিয়ে যখন ভাবতে শিকেছি তখন ভাবনাগুলো স্মৃতিবদ্ধ করে রাখতে চেয়েছিলাম বইয়ের পৃষ্ঠার মাধ্যমে। আমার জ্ঞান শুরু সক্রেটিস। তার কোন বই ছিল না, কিন্তু তিনি তার আদর্শ ছাত্র প্লেটোকে রেখে গেছেন। প্লেটো তার ডায়ালগের মাধ্যমে তার গুরু সক্রেটিসকে তুলে ধরেছেন। সক্রেটিস যদি ছাত্র তৈরী না করতেন তাহলে বিশে^র মানুষ সক্রেটিস নামক কোন লোক আছে জানতে পারতো না। মানুষ দুনিয়ায় আসছে সৃজনশীল কাজ করার জন্য। কিন্তু সে আপন মনের ডায়রীতে লিপিবদ্ধ করে রাখতে চায় তার জীবন অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার। আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে জ্ঞান অর্জন করে বুঝতে পারছিলাম যারা গ্রন্থ রেখে গেছে তাদের মর্যাদা সবার শীর্ষে। ইংরেজী ভাষায় সেক্সপিয়ার এবং বাংলা ভাষায় রবীন্দ্র, নজরুল এত প্রভাবশালী হলেন কিভাবে। কোটিপতি, রাষ্ট্রপতি, সেনাপতি এমন অধিপতির বিদায় হয়েছে কিন্ত তারা মানব ইতিহাসে পায়ের নীচে একটু স্থান করতে পারেনি। আমার জীবনে ইচ্ছা ছিল কিছু এই ধরনের কাজ করার কিন্তু কতটুকু সফল হলাম বলতে পারি না। ভবিষ্যতে হতে পারবো কি না তাও জানি না। তবে জীবনের প্রথম বই- ‘‘মূল্যবোধ ও মানবতা’’ সম্পাদনা করেছিলাম। সেটা বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠ্য হিসেবে স্বকৃতি লাভ করে। তবে বইটির সম্পাদনার কাজ ছাত্র জীবন থেকে শুরু হয়। আমি যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র তখন আব্বা নানীর সাদা শাড়ী কিনে এনেছিলেন। শাড়ীর ভিতর কাগজ ছিল। বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমাজ পত্রিকার পাতা। তাতে প্রবন্ধ ছিল-‘‘জাতীয় উত্থান, তৈল নীতি’’। ‘‘জাতীর উত্থান-’’ প্রবন্ধটি আমার এমন ভাল লাগছিল যে আমি চিন্তা করেছিলাম আমি যদি বই সম্পাদনা করি তাহলে মোহাম্মদ লুৎফল রহমানের জাতীয় উত্থান প্রবন্ধটি অন্তভূক্ত করবো। পরবর্তীতে সেটা সংরক্ষন করেছিলাম এবং নিয়ে ছিলাম। আকতার-উল-আলম স্যারের -‘‘মূল্যবোধের জন্য’’ প্রবন্ধটি নিয়ে ছিলাম। তিনি বাহরাইনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ইত্তেফাকের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন। আমি তার কাছে দেখা করে লিখিতভাবে পারমিশন নিয়েছিলাম। তার সাথে আলাপে আমি বলেছিলাম আপনার সাথে ড.মরিজ বুকাইলির সম্পর্ক কেমন আছে। তিনি বললেন ভালো সম্পর্ক আছে। আমার সাথে কথা হয়। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি করি। আমি বললাম ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্র। চাকরী দরকার। তিনি ইত্তেফাকে আবশ্যক বিজ্ঞাপন দেওয়া থাকে ছোট ছোট। আবেদন করে এই চাকরী দিয়েই শুরু কর। আমি বললাম ছোট চাকরী কি করবো। তিনি বললেন ছোট দিয়েই শুরু কর। তারপর বড় চাকরী ধর। তাঁর সাথে একদিনের সাক্ষাতে আমার জীবনের মোড় পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছিল। মোজাফফর আহমদ স্যারের- ‘‘বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষাদর্শন এডওয়ার্ড শিলস্- এর ভাবনা ‘‘-প্রবন্ধটি একটি স্মারক বক্তৃতা। আমি বক্তৃতাটি অনুমোদন নিয়ে ইত্তেফাকে জমা দিয়েছিলাম। ইত্তেফাকে মতামতে ছাপা হয়েছিল। আমি আমার গ্রস্থের জন্য সেটা রাখছিলাম। তিনি শংকর বাস স্টান্ডের কাছে থাকতেন। আমি তাঁর বাসায় গিয়েছিলাম। সৈয়দ শাহ আলম বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের একজন আইনজীবী। তিনি বিশ^শান্তি বইটি রচনা করেছিলেন। পরবর্তীতে তার বইয়ের ভিতর-‘‘বিশ^শান্তি’’- প্রবন্ধটি পছন্দ হলে আমি পারমিশন নেওয়ার জন্য তার দপ্তরে যাই। তিনি অফিস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তার কাছে জিজ্ঞাসা করছিলাম এখানে শাহ আলম নামক লেখক থাকে কোথায়? তিনি বললেন আমি সৈয়দ শাহ আলম। পরবর্তীতে তিনি তার দপ্তরে নিয়ে ছিলেন এবং বিশ^শান্তি প্রবন্ধটি অনুমোদন দিয়ে ছিলেন। মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ স্যার এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি এবং বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে কোথায় ছিলেন আমি জানি না। তিনি North South University না East West University -তে ছিলেন সেটা ছিল আমার অজানা। তবে
Dhaka Courier- এ তাঁর লেখা আমি দেখতাম ছাত্র জীবনে। আমি Dhaka Courier - এ একটি কপি বাজার থেকে সংগ্রহ করলাম। আর সেখান থেকে ঠিকানা নিয়ে অফিসে গেলাম। তারপর শুনলাম তিনি North South University ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে আছেন। আমি তাঁর সাথে সাক্ষ্যাৎ করে-‘‘ব্যক্তি ও সভ্যতার সংকট’’- প্রবন্ধটি অনুমোদন নিয়ে ছিলাম। তিনি বললেন আমি Dictionary লিখেছি। আগামী পশু রেঙ্গুনে যাচ্ছি। তুমি আমার প্রবন্ধের প্রুফ বাংলা একাডেমীর সহকারী পরিচালক সরকার আমিনের কাছ থেকে নেবে। আমি বাংলা একাডেমীতে যেয়ে সরকার আমিনের কাছ থেকে প্রুফটি সংশোধন করে নিয়েছিলাম। ইসরাইল খান স্যার তার -‘‘সাহিত্য সমাজের অবক্ষয়- প্রবন্ধটি রচনা করেছিলাম। আমি তার বাসা নর্থ রোড ধানমন্ডি থেকে পারমিশন নিয়ে ছিলাম। তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের উর্ধ্বতর কর্মকর্তা ছিলেন। প্রদীপ কুমার রায় স্যার- ‘‘দর্শন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বাংলাদেশ-’’ প্রবন্ধটি আমার ভাল লেগেছিল, এটা জার্নালে মুদ্রিত হয়েছিল। তাঁর বাসায় গেলে তিনি বললেন ডিপার্টমেন্ট- এ এস কথা হবে। তার কাছ থেকে ডিপার্টমেন্ট এ যেয়ে আমি প্রবন্ধটির অনুমোদন নিয়েছিলাম। তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক।আমিনুল ইসলাম স্যার তার সাথে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। স্যার থাকতেন ফুলার রোডে। তিনি কলা অনুষদের ডিন ছিলেন। তিনি আমাকে কিভাবে ভাল ছাত্র হওয়া যায় তার শিক্ষা দিতেন। আমি তার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন চলার পথ ও মর্যাদাবান হওয়ার শিক্ষা পেয়েছিলাম। স্যারের কাছ থেকে-‘‘মূল্যবোধ ও মানবতা’’ নামক প্রবন্ধটি অনুমোদন নিয়ে ছিলাম। স্যার আমার বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন। ভূমিকা লিখিয়ে নিতে আমাকে বেগ পেতে হয়েছিল। স্যার বইটি প্রকাশের জন্য সহযোগিতা করেছিলেন।আমার বইটি মাওলা ব্রাদার্সের (উত্তরণ) বইটি প্রকাশ করেছে। বইটি ২০০৫ সালে প্রথম প্রকাশ করা হয়। মূল্য ২০০ টাকা। আমি আমার পরিচয় দিতে চাই। আমি শহিদুল ইসলাম। প্রাক্তন জনসংযোগ কর্মকর্তা এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। প্রাক্তন সহকারী সম্পাদক মাসিক মানবাধিকার খরব। বর্তমানে আমি প্রভাষক দর্শন বিভাগ সরকারি ইস্পাহানী ডিগ্রি কলেজ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা। আমার কষ্টকরা বইটি রকমারীতে অন্য কোন লেখকের নামে বিক্রি হোক অথবা প্রচারিত হোক সেটা দন্ডনীয় অপরাধ। বইটিতে আমার দুইট প্রবন্ধ ছাড়াও মোট ২০টি প্রবন্ধ আছে। অন্যান্য প্রবন্ধের মধ্যে আছে- মোতাহের হোসেন চৌধুরী- মূল্যবোধ ও যুক্তিবিচার, হাসান হাফিজুর রহমান- ‘‘মূল্যবোধের জন্যে।’’ পি এন মেহতা- সাংবাদিকতা ও আইন, পিটার সিঙ্গার- প্রান হরন: গর্ভপাত, এবিএম শহিদুল ইসলাম- পরিবেশ ও নৈতিকতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- সভ্যতার সংকট, এবিএম শহিদুল ইসলাম- ‘‘যুদ্ধ সম্বন্ধে আইনস্টাইন ও ফ্রয়েডের ঐতিহাসিক চিঠি।’’ জ্যাঁপল সার্ত্র- অস্তিত্ত্ববাদ এবং মানবতাবাদ, বসুধা চক্রবর্তী - মানবতাবাদ, খানবাহাদুর আহছানউল্লা- বঙ্গ ভাষা ও মসলমান সাহিত্য, সাইদুর রহমান- কল্যান-দর্শন, শ্রী কিরন- ‘‘ধর্মীয় বিশ^াসের বিশ^ায়ন।’’ প্রভূতি। আমি ছাত্র জীবনে এবিএম শহিদুল ইসলাম নামে লিখতাম। বইটির প্রচ্ছদ একেছেন ধ্রুব এষ।জীবনের প্রথম গ্রন্থ-‘‘মূল্যবোধ ও মানবতা-’’ চার বছর নিরবিচ্ছন্ন যোগাযোগের ফলে অবর্ননীয় কষ্ট ও ধৈর্য সহ্য করে পরবর্তীতে বইটি আলোর মুখ দেখেছিল। আমি বইটি মাঝে যখন পাতা উল্টায় তখন আনন্দে বুক ভরে যায়। বইটি ষড়যন্ত্র মুক্ত থাকুক এই কামনা করি।
শহিদুল ইসলাম প্রাবন্ধিক, প্রভাষক দর্শন বিভাগ সরকারি ইস্পাহানী কলেজ, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।
|