নারী ও শিশু পাচারকারীরা সমাজে যেমন ঘৃণিত অপরাধী। তেমনি তাদেরকে তিরস্কার করা উচিৎ। অপরদিকে নারী ও শিশু উদ্ধারকারীদেরও সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহায়তা এবং যথাযথ পুরষ্কার বা সম্মান দেখানো উচিৎ। তাহলে ভয়াবহ অবস্থার এ সামাজিক ব্যধি নারী ও শিশু পাচার ও পাচারকারী চক্রের তৎপরতা একটু হলেও এই সমাজ থেকে কমবে। ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া সম্পাদকের এক বোনের মেয়েকে দীর্ঘ আড়াই মাস রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যে থেকে উদ্ধার করে। ভারত,পাকিস্তান, চীন ও নেপাল এ চার দেশের সীমান্ত এলাকা রুদ্রপুর থেকে । উদ্ধারের মধ্যদিয়ে সম্পাদক ২০১৫ সাল থেকে দেশ- বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অসহায় নারী ও শিশু উদ্ধার করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪শতাধিক নারী ও শিশু উদ্ধার করে মা বাবা ও আইনের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তার এ সফলতা এদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রের চোখে না পরলেও দেশের বাইরে থেকে মানবিক মানুষ হিসেবে ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ শান্তি পুরস্কারসহ দেশ বিদেশে অসংখ্য পুরস্কারে ভূশিত হয়েছেন। ২০১৯ সালে নারী ও শিশু উদ্ধার, মানবিক কাজ এবং সমাজ সেবা ও মানবাধিকার রক্ষায় বিশেষ অবদানে ভারত থেকে শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, নারী ও শিশু পাচারের শিকার অধিকাংশই তাদের প্রতোক্ষ পরোক্ষ সহায়তায় পাচার হয়ে থাকে। এজন্য নারী ও শিশু পাচার করা যত সহজ, উদ্ধার করা তার চেয়েও কঠিন। বাঘের মুখ থেকে শিকারকে যত সহজে উদ্ধার করা যায়, তার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন একজন সুন্দরী নারীকে পাচারকারী চক্রের হাত থেকে উদ্ধার করা। নারী ও শিশু উদ্ধারকারী ব্যক্তিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে এ কাজটি করতে হয়। এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে আইনি লড়াই করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে এ কাজটি করে, সেই শুধু জানে কাজটি কত দুরূহ ও কঠিন। মানবিক কাজে নিয়োজিত মানবাধিকার খবর এ দুরূহ কাজটি করে যাচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের ব্যাংগালোরে বাংলাদেশী এক তরুনীর যৌন নির্যাতনের দৃশ্য ভাইরাল হওয়ায় নারী ও শিশু পাচার নিয়ে রাষ্ট্র ও সকল মিডিয়া সোচ্চার হয়েছে। টিকটকের মাধ্যমে এক কিশোর মেয়েদের অভিনয় নামে ভারতে পাচার করেছে প্রায় পাঁচশ নারীকে। একইভাবে আরও প্রায় এক হাজার নারী পাচারের শিকার হয়েছে বলে মিডিয়া থেকে জানা যায়। এরকম শত শত কাহিনি রয়েছে মানবাধিকার খবরের কাছে। যাদের মধ্যে কেউ কেউ উদ্ধার হয়ে মা বাবার কাছে আসতে পেরেছেন। আবার অনেকেই আইনের বিভিন্ন জটিলতার কারণে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সেফহোমে অসহায় জীবনযাপন করছে। মানবাধিকার খবর সম্পাদক ২০২০সালে ব্যাংগালোরে গিয়ে আইনি লড়াই এর মাধ্যমে প্রায় ১৬ জন নারী ও শিশু উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন। করোনা সংকট কালেও মানবাধিকার খবর পাচার হয়ে যাওয়া এসব নারী ও শিশুদের উদ্ধার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।সেই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ জুন ২০২৩ইং ভারত থেকে ৪৮ নারি ও শিশু উদ্ধার প্রক্রিয় সহযোগিতা করেছে মানবাধিকার খবর। আরো ৮জন উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছে তারা হলেন ১. জান্নাতার জেরিন, সেনবাগ, নোয়াখালী ২. তৌফিক হরিণাকুন্ডু, ঝিনাইদহ ৩. নুর নাহার, মতলব দক্ষিণ,চাঁদপুর ৪. জেসমিন আক্তার, মানিকগঞ্জ ৫. আফরিন জাহান আরিশা, কলারোয়া. সাতক্ষীরা ৬. আনিকা চৌধুরী, লোহাগড়া নড়াইল ৭. রুবিনা আক্তার, ঝিকরগাছা যশোর ৮. রিয়াজ মোল্লা , কালিয়া নড়াইল। আশা করছি খুব শীগ্রই তারা দেশে ফিরবে। মানবকল্যানে নিয়োজিত মানবাধিকার খবর এ মানবিক কাজ অব্যাহত রাখতে সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। পাশাপাশি পাচারকারী চক্রের তৎপর বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করে তিরস্কার করা ও উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহায়তা দেওয়াসহ পুরষ্কারে ভূষিত করলে এধরণের কাজে উৎসাহ পাবে। দীর্ঘ ২ থেকে ১০ বছর পর বেনাপোল দিয়ে দেশে ফিরেছেন ভারতে পাচার হওয়া ৪০ বাংলাদেশি নারী ও শিশু। বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে ২০ জুলাই বিকাল ৫টার দিকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন তারা। ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন। ফেরত আসাদের মধ্যে ২০ নারী ও ২০ শিশু রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ১২টি শেল্টার হোমের হেফাজতে ছিলো এরা। ফেরত আসারা বলেন, আমরা দালালদের মাধ্যমে বিভিন্ন সীমান্ত পথে ভালো কাজের আশায় ভারতে পাড়ি জমাই ও পাচার হয়ে যাই । এরপর বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার সময় ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হয়ে আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগ করেছি। এরপর সেখানে বিভিন্ন শেল্টার হোম আমাদের আশয় দেয়। পরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শেল্টারহোম থেকে আজ দেশে ফিরেছি। শেল্টারহোমে আমাদের বয়সী অনেক বাংলাদেশি নারী ও শিশু আছেন। তারা দেশে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার শেখ মারেফাত তারিকুল ইসলাম (দ্বিতীয় সচিব রাজনৈতিক) বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় আজ এ সমস্ত নারী ও শিশুদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ফেরত আসাদের মধ্যে ২০ নারী ও ২০ শিশু রয়েছে। বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবীব বলেন, ভারত সরকারের বিশেষ ট্রাভেল পারমিটে ফেরত আসা বাংলাদেশি নারী-শিশুদের ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখান থেকে এনজিও সংস্থা জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার, রাইটস যশোর ও মহিলা আইনজীবিসমিতি তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে। যশোর জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মুহিত হোসেন বলেন, ফেরত আসাদের যশোর জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার ১৭, রাইটস যশোর ১৬ এবং মহিলা আইনজীবি সমিতি ৭ জনকে গ্রহন নিজস্ব শেল্টারহোমে রাখবে। এরপর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। গত ২০ জুলাই ২০২৩ ফিরে আসা ৪০ জন নারী শিশুর নাম ও ঠিকানা তুলে ধরা হল:
|