সম্পাদকীয়
  পবিত্র ঈদুল আযহা মহামারি করোনার নিয়ন্ত্রন করা হোক
  22-07-2020

সম্পাদকীয় :

করোনা ভাইরাস নিজেই অদৃশ্য এক মহাশক্তি। বিশ্বের রাজনিৈতক দর্শন নিয়ে সে অভিভূত হয়নি। বিশ্বের বড় বড় পারমানবিক শক্তিধর দেশ তার কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে গেছ্ েবিশেষ করে যারা তাকে প্রথম অবস্থাতেই অমূল্যায়ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইত্যালীসহ ইউরোপিয়ান দেশগুলো কি নিদারুন ভাবে বিদ্ধস্ত অবস্থায় চলে গেছে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য ফি আরোপ, উপসর্গহীন ব্যক্তিদের পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ করা, নমুনা সংগ্রহের বুথগুলোতে নমুনা গ্রহণের সংখ্যা কমানো ইত্যাদি নানা পন্থায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার দৈনিক হার কমিয়ে আনা হয়েছে। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ এর সমালোচনা করেছেন এবং সরকারকে সতর্ক করতে বলেছেন, এভাবে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা কম দেখানোর মাধ্যমে মহামারির প্রকৃত পরিস্থিতি লুকানোর চেষ্টার পরিণতি আরও বড় বিপদ ডেকে আনবে।

কারণ, সারা দেশে সংক্রমিত ব্যক্তিদের একটা বড় অংশ উপসর্গহীন বলে শনাক্ত রোগীদের তালিকার বাইরে থেকে গেলে তাঁদের সংস্পর্শে আরও অনেক মানুষ সংক্রমিত হবেন। এভাবে মহামারি আরও ছড়িয়ে একপর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।বাস্তবে সেই লক্ষণ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এর আগে দেখা গেছে, পরীক্ষার সংখ্যা কম হলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও কম হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে পরীক্ষার সংখ্যা কমানোর পরও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের মতো কমছে না, বরং আরও বেড়ে যাচ্ছে।

যেমন গত ১৫ জুন দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিং থেকে জানা গেল, আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ২টি নমুনা পরীক্ষা করে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৫৩৩ জনের। এ হিসাবে সংক্রমণের হার দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। এ হার জুনের শেষ সপ্তাহের তুলনায় গড়ে প্রায় ৪ শতাংশ বেশি, সে সময় সংক্রমণের হার ছিল ২১ শতাংশের কিছু বেশি।


এর মধ্যে ঈদুল আজহা এগিয়ে আসছে। কোরবানির পশুর হাটগুলোতে লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণের সক্রিয় তৎপরতা নেই। অনলাইনে পশু কেনাবেচার কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু সেটা কতটা কার্যকর হচ্ছে, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। জনপরিসরে লোকসমাগম অনেক বেড়ে গেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার খবর আসছে; মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে শিথিলতা বেড়েছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণগুলো স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে।


এ পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদের সময় যেন ঢাকাসহ আরও তিনটি বেশি সংক্রমিত শহর থেকে লোকজন বাইরে যেতে না পারে তেমন পদক্ষেপ নিতে। কিন্তু সরকার সারা দেশে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যেই ঈদুল আজহার আগে–পরে কয়েক দিন গণপরিবহন চালু রাখার ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। এখন লোক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

ফলে আরও অনেক মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। ঈদের আর এক সপ্তাহ বাকি আছে। সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা সম্ভব। ঈদের আগে–পরে মোট ৯ দিন গণপরিবহন বন্ধ রাখার পূর্ব সিদ্ধান্তটিই কার্যকর করা অথবা সারাদেশে নির্দিষ্ট মেয়াদে লকডাউন দিয়ে মহামারি করোনার ভাইরাস নির্মূল ও নিয়ন্ত্রনে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।