ছবি : আটককৃত ৩ কিশোর ১ কিশোরী ও ২ বছরের বাচ্চাসহ ১ নারী।
নিজস্ব প্রতিবেদন: মানবাধিকার বিষয়ক নিয়মিত সৃজনশীল বাংলা প্রকাশনা মাসিক মানবাধিকার খবর’র সম্পাদক ও প্রকাশক রোটারিয়ান মো. রিয়াজ উদ্দিনের অপহরণকারীদের ধরেও মামলা না করে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ এনে সাভার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এফএম শাহেদ হোসেনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন, সাভার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাকারিয়া, উপ-পরিদর্শক (এসআই) পলি এবং সাভার থানাধীন ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. এনামুল হক, অপহরণে জড়িত বৃষ্টি, তার স্বামী শুধাংশ রায়, নয়ন কুমার ও রণিসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫ থেকে ৬ জন।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রয়ারি) ‘মানবাধিকার খবর’র সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। যার নাম্বার সিআর-২০২/২০২০ ধারা ২০১/২০১৭/২০২৩/৩২৩/৩০৭/৩৭৯/৩৮৪/৩৮৫/৩৮৬/৩৬৫/৪২০/৪০৬/৪৪৭/৫০৬ দন্ডবিধি।
ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন্নাহার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ডিসেম্বর ২০১৯ ফেসবুকে আসামি বৃষ্টি বাদীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। এর কিছুদিন পর বাদী মানবাধিকার কর্মী জেনে আসামি বৃষ্টি একটি ছেলেসহ অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছেন মর্মে জানিয়ে তার কাছে সহায়তা চান।
আসামির অনুরোধে বাদী একটি প্রতিবেদন তৈরির জন্য গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সাভার থানার হেমায়েতপুরের হরিনধরায় যান। এরপর রাস্তা থেকেই ৩-৪ জন ছেলে তাকে বৃষ্টির ভাড়া বাড়ির বালুর মাঠ নামক সোহরাব হোসেনের বাড়ির পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় একটি ফ্লাটে নিয়ে যায়। ফ্লাটে ঢোকার সাথে সাথে দরজা আটকিয়ে দেয়। তাকে অতর্কিত ভাবে মারধর করে হতভম্ব করে দেয়। মুখে গামছা বেঁধে শারীরিক মানসিক নির্যাতন চালায় ও আপত্তিকর ছবি তুলে এবং তার কাছে থাকা নগদ ১১ হাজার ৫শত টাকা, দুইটা মোবাইল, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম কার্ড নিয়ে যায়।
নির্যাতন করে বিকাশ ও কার্ডে পিন নম্বর জেনে এটিএম কার্ড ও বিকাশের মাধ্যমে ৬ হাজার টাকা তুলে নেয় তারা। বাদীর মোবাইল থেকে তার স্ত্রীসহ বিভিন্ন জনকে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়।
মুক্তিপণের বিষয়ে কেউ সাড়া না দিলে বিকেল ৪টা নাগাদ অপহরণকারীরা তাকে হেমায়েতপুর বাস স্ট্যান্ডে ছেড়ে দেয়। ছাড়া পেয়ে বাদী সাভার থানায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে বৃষ্টিসহ অন্যান্যদের গ্রেফতার করে। কিন্তু মামলার প্রস্তুতির এক পর্যায়ে পুলিশ মামলা না করে ওই নারীর সঙ্গে সমঝোতা করতে বলেন। না করলে উল্টো ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির মামলায় বাদীকে আদালতে চালানের ভয় দেখায়। তার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নেয়।
বাদী বিপদ বুঝে পুলিশের কথামতো কাজ করে থানা থেকে মুক্তি পান। পরে বাদী জানতে পারেন, আটককৃতরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য এবং পুলিশ তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
এদিকে বাদী গত ১২ ফেব্রয়ারি পুলিশ সুপার ঢাকা মারুফ হোসেন সরদার এর বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে এএসপি কেরানীগঞ্জ সার্কেল মহানন্দা সরকারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। গত ২৪ ফেব্রæয়ারি কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় তদন্তে মানবাধিকার খবর’র সম্পাদক উপস্থিত হলেও আসামী পক্ষের তেমন কেউ উপস্থিত হয়নি। পুনরায় তদন্তের জন্য আবারো ডাকা হবে বলে সম্পাদকে আসতে বলে । এখানেও তদন্তে ঘড়িমশি করছে পুলিশ।
বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, আইনজীবী আজাদ রহমান, প্রিয়লাল সাহা, সৈয়দা ফরিদা ইয়াসমিন জেসি, মো: জাহিদুর রহমানসহ প্রমুখ।
|