বাংলাদেশসহ সমগ্র ভারতবর্ষ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সনাতন ধর্ম তথা হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো দূর্গাপূজা। সনাতন ধর্মে বছরে দু’বার দূর্গোৎসবের প্রথা রয়েছে। সাধারণতঃ আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয় এবং চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বাসন্তী দূর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। মহালয়া উদ্যাপনের মাধ্যমে মা দূর্গা তথা দেবী র্দূর্গার এই মর্তের পৃথিবীতে আগমনী বার্তা ঘোষিত হয়। মা দূর্গা তথা দেবী দূর্গা হলেন স্বয়ং ঈশ্বরের শক্তির প্রতীক। তিনি হলেন, এক মহাজাগতিক শক্তি তথা অদ্যাশক্তি মহামায়া। মা দূর্গাকে বিভিন্ন নামে যেমন- দেবী দূর্গা, জয়দূর্গ, বনদূর্গা, জগদ্বাত্রী, গন্ধেশ্বরী, নারায়ণী, চন্ডী প্রভৃতি নামে পূজা করা হয়। এছাড়াও তাকে বিভিন্ন নামে সম্বোধন তথা স্মরণ করা হয়। যেমন- দুর্গতিনাশিনী দেবী অর্থাৎ এই মহাবিশ্বের যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট বিনাশকারিণী তথা ধ্বংসকারিণী দেবী। আবার দুর্গম নামক অসূরকে বধ করেছিলেন বলে তাঁকে দূর্গা বলা হয়। দূর্গা পূজা তথা শারদীয় পূজায় ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ নানাভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে যাবতীয় দুঃখ ভুলে গিয়ে হিংসা-বিদ্বেষের উর্ধ্বে অবস্থান করে স্বর্গীয় প্রীতির মেলবন্ধন রচনার মাধ্যমে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বলেই দূর্গা পূজা হিন্দু সমাজে সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হিসেবে বিবেচিত। দেবী দূর্গা বিভিন্নরূপে এই মর্তের পৃথিবীতে আবির্ভুত হয়ে থাকেন এবং আমাদের সার্বিক মঙ্গল নিশ্চিত করেন বিধায় তিনি সর্বমঙ্গলা। আবার শিবের শক্তি বলেও তিনি শিবা। কারণ তিনি সকল প্রার্থনা এবং আরাধনা মঞ্জুর করেন এবং অসাধ্যকে সাধন করেন। তাই তিনি শরণ্য, তিনি গৌরী। দূর্গা দশভূজ নামেও পূজিত এবং আরোধিত হয়ে থাকেন। কারণ তাঁর দশটি মহাশক্তিশালী হস্ত রয়েছে। তিনি তিনটি নয়ন ধারণ করেছেন বিধায় তাঁকে ত্রিনয়না নামেও সম্বোধন করা হয়ে থাকে। তাঁর বাম নয়নে চন্দ্র, ডান নয়নে সূর্য এবং কপালে অবস্থিত নয়ন জ্ঞান বা অগ্নিকে নির্দেশ করে। তাঁর ডান দিকের পঙ্ক হস্তের অস্ত্রগুলো যথাক্রমে ত্রিশূল, খড়গ, চক্র, বাণ এবং শক্তি। বামদিকের পঙ্ক হস্তের অস্ত্রগুলো হলো- খেটক (ঢাল), পূর্ণ চাল (ধনুক), পাশ, অঙ্কুশ, ঘণ্টা, পরশু, কুঠার)। এই সমস্ত অস্ত্র গুলো হলো জয়-দুর্গার অসীম শক্তির আধার এবং তাঁর গুনের প্রতীক। এই কারণে জয় দুর্গা হলো সর্বসাধারণের দেবী। দশমীর দিবসে দেবী দূর্গার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় বলেই এই পূজার দশমীকে বলা হয় বিজয়া দশমী। বিজয় দশমান্তে মানুষের মাঝে থাকে না কোন জ্বালা-যন্ত্রণা, মনোকষ্ট, হিংসা-বিদ্বেষ, ব্যর্থতা, গ্লানি এবং থাকে না মনের কোনো পঙ্কিলতা এবং সংকীর্ণতা। তাই, আমাদেও প্রত্যাশা সমাজের সর্ব প্রকার দমন, উৎপীড়ন, নিপীড়ন, নির্যাতন, নিস্পেষণ, অন্যায় এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে স্বর্গীয় অমীয় শান্তি স্থাপনের মধ্যদিয়ে সমাজের প্রতিষ্ঠিত হোক মানবিক মূল্যবোধ তথা সার্বজনীন মানবাধিকার।
|