সংবাদপত্রের চ্যালেঞ্জ ছিল সব সময় । নতুন করে ভাবনার কারণ বিশ্ব বাস্তবতার নানামুখী পরিবর্তন। আর বাংলাদেশে মিডিয়ার চ্যালেঞ্জের জায়গাগুলো আলাদা বলেই মাঝে মাধ্যে মনে হয়। একশ একটা আইন মোকাবিলা করে বাংলাদেশে মিডিয়া চালাতে হয়। আমরা বাস্তবতার বাইরে চলে যাই অনেক সময়। চারদিকে সত্যের সন্ধান করা মিডিয়ার অভাব অনুভব করে পাঠকসমাজ। মিডিয়াকর্মীরাই অনেক সময় চলে যাচ্ছেন পেশাদারিত্বের বাইরে। আর এর পূর্ণাঙ্গ সুযোগটুকু নিয়ে নিচ্ছেন বিশেষ শ্রেনী। আসলে বাস্তবতাকে আড়াল করে মিডিয়ার বিকাশ সম্ভব নয়। সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিতরে মিডিয়াকে কাজ করতে হবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের জন্য। নিজস্ব দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে মিডিয়াকে আত্মজিজ্ঞাসা, আত্মোপলব্ধির জায়গাটুকু ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি প্রস্তুতি নিতে হবে আগামীর চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নের জন্য। এমন কঠিনতম চ্যালেঞ্জ নিয়ে সময়ে ৭ম বর্ষ থেকে ৮ম বর্ষে পা রাখছে মানবাধিকার বিষয়ক নিয়মিত বাংলা প্রকাশনা “মানবাধিকার খবর”। নতুন বছরে আমাদের চাওয়া আগামী দিনের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা হোক মানবতার কল্যাণে, দেশের কল্যাণে। বাংলাদেশে এখন সাহসী সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জের মুখে। কমে যাচ্ছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। কেন এ অবস্থা তৈরি হচ্ছে? সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সবার মন রক্ষা করা সম্ভব হয় না। যে কোনো সংবাদ একজনের পক্ষে অন্যজনের বিপক্ষে যাবে এটাই স্বাভাবিক। আরো পরিস্কারভাবে বলতে হয়, সঠিক সংবাদটি সবসময় সত্যে ও ন্যয়ের পক্ষেই যায়। ফলে, স্বার্থহানী হলে অপর পক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তখন হুমকি-ধামকি দেন, অযথা হয়রানি করতে মামলা করেন। সমাজের প্রভাবশালীরাই মামলা দায়ের করেন বেশি। মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদ লিখলে মামলা হয়। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লিখলে তাদের মানহানি হয়। মামলা ঠুকে দেন। সারাদেশে হাজিরা দিতে দিতে আদালতে ঘুরতে হয় সম্পাদক ও সাংবাদিককে। মামলা দায়েরকারী এতেই খুশি।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যদি নিরাপত্তা না দেয় তাহলে সাংবাদিকরা কীভাবে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করবেন? মিডিয়ার জন্য এখন অনেক আইন। হুমকি শুধু প্রভাবশালী বা রাজনীতি সঙশ্লিষ্টদের কাছ থেকেই আসে তা নয়, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ তো রয়েছেই। আবার অনেক সময় সংবাদ যায় একজনের বিরুদ্ধে। মামলা করে আরেকজন। মত ও পথের ভিন্নতা অবশ্যই থাকতে পারে। ভলতেয়ারের সেই কথাটি ভুলে গেলে চলবে না- ‘আমি তোমার মতের সঙ্গে একমত না হতে পারি কিন্তু জীবন দিয়ে হলেও তোমার মতকে রক্ষা করবো।’ জীবনের পথচলায় মত-পথের ভিন্নতা নিয়েই আমরা চলছি। কিন্তু মিডিয়াকে তার কাজটুকু করতে দিতে হবে। গণতন্ত্র ও সমাজ রক্ষার জন্যই মিডিয়া কাজ করে। সমাজের সর্বস্তরে আলোর ছটা সব সময় ছড়িয়ে দিতে পারে তা নয়। কিন্তু এ শেষ চেষ্টাটুকু না করলে সমাজের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়ে যায়। মানুষের মাঝে বৈষম্য বাড়ে। সমাজ চলে যায় লুটেরাদের দখলে। রাষ্ট্রের স্বাভাবিক গতি ধরে রাখতেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অপরিহার্য। গণমাধ্যমের কাজটুকু করতে দিলে দীর্ঘমেয়াদে গণতন্ত্র লাভবান হয়। আমরা ইতিবাচক ধারার মিডিয়াকে এগিয়ে নিতে চাই আগামীর পথে। পাঠকদের নিয়েই আমরা মোকাবিলা করতে চাই আগামী দিনের কঠিনতম সময়গুলো। সারা দুনিয়াতে প্রিন্ট মিডিয়ার বড় চ্যালেঞ্জ পাঠক কমে যাওয়া। পাশাপাশি সঙ্কুচিত হচ্ছে বিজ্ঞাপনের বাজার। দায়িত্বশীলতা নিয়েই আমরা এ জটিল পরিস্থিতির উত্তরণ করতে চাই। নানান প্রতিকূল মোকাবেলা করে ‘মানবাধিকার খবর’ প্রথম থেকেই নিয়মিতভাবে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। বহুল প্রচারিত এবং দেশ-বিদেশে সব শ্রেণীর পাঠক প্রিয় পত্রিকা হিসাবে এরইমধ্যে সমাদৃত ‘মানবাধিকার খবর’। পত্রিকাটি মানবাধিকার ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ের উপর আর্ট ও অফসেট কাগজে রঙিন ম্যাগাজিন আকারে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এর প্রতিটি সংখ্যায় অধিকার বঞ্চিত অসহায় মানুষের কথা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়। বিষয় ভিত্তিক সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি পত্রিকার উদ্যোগে দেশ-বিদেশ থেকে নারী-শিশু উদ্ধার ও সামাজিক কর্মকা-ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। ‘মানবাধিকার খবর’-এর উদ্যোগে চার বছরে দেশ-বিদেশ থেকে ত্রিশোধিক নারী-শিশুকে উদ্ধার করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছে আরো কয়েকজন নারী-শিশু।
‘মানবাধিকার খবর’-এর ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আমাদের সব উপদেষ্টা পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, বিক্রয় প্রতিনিধি, হকারসহ শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি। বিগত দিনের ন্যয় আগামী দিনগুলোতেও আপনাদের সুপরামর্শ, সাহায্য-সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশাবাদি।
মোঃ রিয়াজ উদ্দিন
|