প্রতিবছর মে মাসের প্রথম তারিখে বিশ্বব্যাপী পালিত ঐতিহাসিক দিবসটি ‘মে দিবস’ নামে পরিচিত। শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দুর্বার আন্দোলনের রক্তস্রোত স্মৃতি বিজড়িত এই মে দিবস। শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রতি অবিচারের অবসান ঘটাবার সুতিকাগার বলা হয় মে দিবসকে। প্রায় দেড়শত বছর আগে শ্রমিকদের মহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় শ্রমজীবী মানুষের বিজয়ের ধারা। সেই বিজয়ের ধারায় উদ্ভাসিত বর্তমান বিশ্বের সকল প্রান্তের প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় সারাবিশ্বে প্রতি বছর উদযাপিত হয়ে আসছে মহান মে দিবস। শ্রমের শোষণের বিরুদ্ধে জোর সংগ্রাম সবসময় সকল সমাজে ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলে শ্রমজীবীরা ধীরে ধীরে তাদের শ্রমের মর্যাদা পেতে শুরু করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শ্রমের কোনো সময় নির্ধারণ করা ছিল না। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের কাছ থেকে ১৬-১৮ ঘণ্টার শ্রম আদায় করে নিত, যা স্বভাবতই তারা মেনে নিতে পারতো না। এক সময় শ্রমিকরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলে। তাদের এই প্রতিবাদের সুর ধীরে ধীরে বিপ্লবে পরিণত হয়। ১৮৮০ সালে প্রথম আমেরিকার শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। ১৮৮৪ সালে তারা সংগঠিতভাবে ৮ ঘণ্টা দৈনিক শ্রম নির্ধারণের জন্য মালিকপক্ষের কাছে প্রস্তাব করে। আর এ প্রস্তাব কার্যকরের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয় ১৮৮৬ সালের ১ মে পর্যন্ত। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের প্রস্তাব কার্যকর না হওয়ায় সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন লক্ষ শ্রমিক তাদের কাজ ফেলে ঐদিন রাস্তায় নেমে আসে। শ্রমিক নেতা জোয়ান মোস্ট, আগস্ট স্পীজ ও লুই লিং-এর নেতৃত্বে ১ মে শিকাগোতে তারা মহা-সমাবেশের মাধ্যমে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। এসময় পুলিশের গুলিতে বেশ কিছু শ্রমিক হতাহত হলে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রমিক অধিকার। ১৯৭২ সালে ১ মে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১ মে-কে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা সহ রাষ্ট্রপতি আদেশ ২৭(ক) ধারা মোতাবেক এ দেশের সকল ব্যাংক, বীমা, শিল্প-কারখানা, রেল, নৌ-পরিবহনসহ বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগ রাষ্ট্রায়ত্ব ঘোষণা করেন। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে । আমরা চাই- প্রতিষ্ঠিত হোক শ্রমজীবিদের মানবাধিকার। এবারের মে দিবসে এটাই হোক লক্ষ্য।
|