মানবাধিকার খবরঃ বর্তমান বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি কি অবস্থায় আছে বলে আপনি মনে করেন ? ড. আব্দুর রহিম খানঃ বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি অনেক ভালো আলহামদুলিল্লাহ, তবে আরো চেষ্টা করতে হবে আমাদের। হিউম্যান রাইটস কিন্তু সাধারণ মানুষ জানে না ও বোঝেনা নিজের কি ক্ষতি নিজের কি প্রটেকশন আছে, নিজের যে কি কি অধিকার আছে। স্বাধীনতা ও যে একটা অধীকার এটা বোঝাতে বঙ্গবন্ধুকে দীর্ঘ সময় জেল খাটতে হয়েছে, সংগ্রাম করতে হয়েছে। আমি মনে করি আমাদের অধিকার, খাদ্যের অধিকার, বাঁচার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাসস্থানের অধিকার, চিকিৎসার অধিকার। তথা মানুষ হিসেবে বাঁচার সব রকমের অধিকার সুরক্ষা করতে হবে। মানবাধিকার সু-রক্ষার জন্য বাংলাদেশে এখনও অনেক বাকি। এর জন্য চেষ্টা করতে হবে। তবে আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এজন্য যথেষ্ট চেষ্টা করছেন। আমরা ফল পাচ্ছি এবং আরো পাবো। মানবাধিকার খবরঃ মিয়ানমার পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি ? ড. আব্দুর রহিম খানঃ মিয়ানমারের বিষয়টা এতটা "ডিটোরিয়েট" এত খারাপ অবস্থা, এটা আন্তর্জাতিভাবে স্বীকৃত মিয়ানমারের সমর্থক দেশ গুলো ছাড়া বাকি দেশ গুলো আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করছে, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদিআরব, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর, মিডেলইস্ট-এর সব দেশ ইত্যাদি। আমরা চাই আমাদের এই সহযোগিতার হাত আরো বাড়ুক, আমরা যেন এই দুস্থ রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণ দিতে পারি এবং সুন্দরভাবে তাদের ভিটে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারি। পরিস্থিতি যেন ঠিক হয়ে যায় সেই আশাটা করছি রোহিঙ্গাদের জন্য। মানবাধিকার খবরঃ বাংলাদেশের সাথে ভারত সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা নির্যাতন সহ সবধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এ ব্যপারে আপনার মন্তব্য কি ? ড. আব্দুর রহিম খানঃ ভারতের সাথে আমাদের সীমান্তবর্তী সমস্যাগুলি অনেক কমে গেছে। আগে যেমন পাকিস্তান আমলে অনেক সহিংসতা হতো বা পরে হয়েছে। সে তুলনায় বর্তমানে অনেক কম হচ্ছে। আমার নিজস্ব "অবজাররেশন" থেকে আমি বলব যেহেতু আমি বাংলাদেশ পুলিশের "এডিশনাল আই জি অব এডমিন" ছিলাম সে সময়ে দেখেছি বি ডি আর ও বি এস এফের কর্মকান্ড অনেক খারাপ ছিলো। মুক্তিযোদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারত ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। কিন্তু সীমান্তে হত্যা ও অপরাধ প্রবনতার কারনে দুই দেশের সীমান্তে সেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক কঠিন হয়ে দাড়ায়। সম্প্রতি বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বি এস এফ) যৌথভাবে যশোর ও চব্বিশ পরগনার সোয়া আট কিলোমিটার সীমান্ত এলাকাকে ক্রাইম ফ্রি জোন ঘোষণার পর পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। বি এস এফ বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত ১২ সাংবাদিককে ক্রাইম ফ্রি জোন ঘোষিত সীমান্ত এলাকা ঘুরিয়ে দেখায়। সীমান্ত এলাকায় সাংবাদিকরা বি এস এফ, বিজিবি এবং সব ধরণের মানুষের সঙ্গে কথা বলে সীমান্তের ইতিবাচক পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছে। দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর যৌথ তৎপরতায় সীমান্তের চোরাকারবারিদের আনাগোন কমেছে। সীমান্তের কৃষকদের জমি চাষের সময় প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সন্দেহের স্বীকার হতে হচ্ছে না। ক্রাইম ফ্রি জোন সীমান্তে শান্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি হত্যা চোরাচালান সহ সব অপরাধের অবসান ঘটাতেও সামর্থ্য হয়েছে। শুধু সোয়া আট কিলোমিটার নয় পুরো সীমান্ত এলাকা যেন ক্রাইম ফ্রি জোন হয় সে উদ্দেশ্যে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। মানবাধিকার খবরঃ বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সমাজে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কি কি কাজ করছেন। কোনে প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন কি ? ড. আব্দুর রহিম খানঃ আমাদের মানবাধিকার সংস্থা অনেক ধরণের কাজ করে যাচ্ছে। সকল স্তরে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা সচেষ্ট। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিতদের সহায়তা করা হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে অগ্রনী ভূমিকা পালন করা হচ্ছে।সকল স্তরের সকল প্রকার আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। পথশিশুদের উন্নয়নে কাজ করছি তাদের থাকার ব্যবস্থা, খাওয়ার ব্যবস্থা, কাপড় সহ যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে মামলা গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ইদানিং আমরা একটা কার্যক্রম শুরু করেছি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে। তাদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করছি। বাংলাদেশে সবচাইতে প্রতিবন্ধীর সংখ্যাধিক্য হচ্ছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায়, কারণ বাংলাদেশে যত তামাকের চাষ হয় তার ৯০শতাংশ চাষ হয় এই দৌলতপুর থানায়। সে জন্য সেখানে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা সবচাইতে বেশী, তাই আমরা সেখানে স্কুল গড়েছি তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য, আমরা এতে খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। এর প্রেক্ষিতে সারা বাংলাদেশ থেকে আমাদের অনুরোধ করা হচ্ছে আমরা যেন বাংলাদেশের সব অঞ্চলেও এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বা স্কুল প্রতিষ্ঠা করি বিশেষ করে যেখানে প্রতিবন্ধী রয়েছে। আমরা প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা করেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা এগুলো বাস্তবায়ন করবো। স্বাধীনভাবে কাজ করতে আমরা চেষ্টা করি। অনেক সময় আমাদের যে পরিকল্পনা থাকে, সে অনুযায়ী কাজ করতে পারিনা বিভিন্ন কারণে। আমাদের অনেক কিছু বাকি আছে আশা করি আমরা করতে পারবো। অগ্রগতি হচ্ছে কাজের সুবিধা বাড়ছে কাজ করবার, সরকারের সু-দৃষ্টি বাড়ছে, জনগনের সহযোগিতা বাড়ছে, যেখানে যাই আমরা সহযোিতা পাই। তারপরও প্রতিবন্ধকতা থাকেনা এমন নয় থাকে, তারপরও আমরা এগুলোকে মেনে নিয়ে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি। মানবাধিকার খবরঃ মানবাধিকার বিষয়ক বিশ্বের একমাত্র নিয়মিত সৃজনশীল জনপ্রিয় বাংলা প্রকাশনা সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই ? ড. আব্দুর রহিম খানঃ মানবাধিকার খবর পত্রিকাটির জন্মলগ্ন থেকে আমি আপনাদের সাথে আছি এবং কাজ করে যাচ্ছি এর কার্যক্রম মহৎ ও ভাল। বিশেষ করে আপনারা যে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া, হারিয়ে যাওয়া, এতিম শিশু, ছাত্রছাত্রীদের ও নারীদের ভারত থেকে উদ্ধার করে আনছেন ভারত সরকারের মাধ্যমে এতে আমি মুগ্ধ হয়েছি। নারী ও শিশু উদ্ধার কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন এতে দেশে যেমনি প্রশংসিত হয়েছেন, ভারত সরকারও ঠিক তেমনি আপনাদের প্রশংসা করেছেন। এবং আপনাদের সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে অধিকার বঞ্চিত অসহায় মানুষের সেবা প্রদান করছেন দেশ-বিদেশ থেকে নারী ও শিশু উদ্ধার, আইনি সহায়তা, চিকিৎসা শিক্ষা সংস্কৃতি নানাবিদ সামাজিক কাজ করে যাচ্ছেন তা যেন অব্যাহত থাকে এটাই আমি চাই। আজ আপনারা যে আমাকে এই পত্রিকার প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এতে করে আমরাও আপনাদের সাথে আরও বেশী করে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তাই আমি সত্যিই আনন্দিত। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আপনারা যেন আরো এগিয়ে যেতে পারেন তার জন্য আমি সর্বাত্মক আপনাদের সাথে কাজ করে যাব।
|