মার্চ হলো লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর মাস। ১৯৭১ সালের এই মাসে বাংলার ছাত্র, যুবক, কৃষক, মজুর ঝাপিয়ে পড়েছিলো মুক্তির সংগ্রামে। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহংকারের মাস। ১৯৭১ এর ৭ মার্চ সাবেক রেসর্কোস ময়দান অর্থাৎ আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণের সময় মুহুর্মুহু গর্জনে উত্তাল ছিল জনসমুদ্র। লক্ষ কন্ঠের একই আওয়াজ উচ্চারতি হতে থাকে দেশের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানিরা বাঙ্গালির কন্ঠ চিরতরে স্তব্দ করে দেয়ার লক্ষ্যে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে বাঙালি নিধনে গণহত্যা শুরু করে। ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় গর্জে ওঠে পাকিস্তানিদের ট্যাঙ্ক ও কামানের ঘোলা তারা নির্বিচারে হাজার হাজার লোককে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষককে হত্যা করে। এর পরের ঘটনাপ্রবাহ প্রতিরোধের ইতিহাস। আবাল বৃদ্ধ বনিতা যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে জাতি লাভ করে স্বাধীনতা। এ মাসেই জাতি এবার পালন করবে মহান স্বাধীনতার ৪৭ বছর। শুধু আনুষ্ঠানিকতার মাঝে স্বাধীনতার বিষয়টিকে আবদ্ধ রাখলে হবেনা। যে লক্ষ্যে স্বাধীনতার জন্য অগণিত প্রাণ উৎসর্গ করেছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা তার কতটুকু আমরা পেয়েছি এবং কতটুকুু পাওয়া উচিৎ ছিল তা এখন মূল্যায়নের সময় এসেছে। অগ্নিঝরা এই মার্চ মাসে দেশের সকল নাগরিকের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার যেন অক্ষুন্ন থাকে। সেজন্য প্রধানত সরকার ও প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের পারষ্পারিক সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তির পথে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বহু স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সে সব স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের আরো অনেক পরিশ্রম করতে হবে, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মানবাধিকার সমৃদ্ধ স্বপ্নের পৃথিবী। তবেই আমরা উপভোগ করতে পারবো স্বাধীনতার প্রকৃত স্বা’দ।
|