দেশের ৬০ লাখ বেল তুলা চাহিদার সিংহভাগই আমদানি করা হয়। তবে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন বাড়াতে উত্তারাঞ্চল বেশ সম্ভাবনাময়। দেশের যে পতিত জমি রয়েছে সেখানে উৎপাদন করে ১০০ কোটি ডলার আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব। গতকাল নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের ডায়াজ হোটেলে আয়োজিত “বুষ্টিং কটন প্রোডাকশন ইন নর্থ-বেঙ্গল এ্যান্ড ইটস প্রবলেম এ্যান্ড প্রসপেক্টাস” শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বাংলাদেশ কটন ডেভেলপমেন্ট (বিসিডিবি) বোর্ড, নীলফামারী বণিক সমিতি, জেরিন টেক্স, আরএমজি ক্রোনিক্যাল এ সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আরএমজি ক্রোনিক্যালের সম্পাদক মোহাম্মদ আলী। অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি ছিলেন বিসিডিবির নির্বাহি পরিচলক ড. ফরিদ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপ¯দাপন করে বিসিডিবির নির্বাহি পরিচলক ড. ফরিদ উদ্দিন বলেন, দেশের প্রায় ৭ লাখ হেক্টর পতিত জমিতে তুলা উৎপাদন করা সম্ভব। আর এসব পতিত জমিতে তুলা উৎপাদন করা গেলে ১০০ কোটি ডলার আমদানি কমানো সম্ভব। তিনি বলেন, দেশের সিংহভাগ পতিত জমি এখন উত্তারাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে। এজন্য তুলা উৎপাদনের ক্ষেত্রে উত্তারাঞ্চল সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়। দেশে এখন ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বেল উৎপাদন হচ্ছে। যেখানে দেশে তুলার চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ বেল। দেশের ৭ লাখ হেক্টর পতিত জমিতে ২০ লাখ বেল তুলা উৎপাদনে কার্যক্রম শুরু করবে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর লবনাক্ত পতিত জমি রয়েছে সেখানে তুলা আবাদ বাড়ানো হচ্ছে। উত্তারাঞ্চলের পতিত জমিতেও আবাদ বাড়াতে পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, বলেন, বাংলাদেশে ২০ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) তুলা আমদানি নির্ভরতা কমাতে উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব। আর তুলা উৎপাদনে সম্ভাবনাময় অঞ্চল হতে পারে উত্তারাঞ্চলের জেলাগুলো। ইতোমধ্যে রংপুর বিভাগের ৬০ হাজার হেক্টর তামাক আবাদি জমিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে আবাদ বাড়ানো হবে। রংপুওে প্রায় ১ লাখ বেল তুলা উৎপাদন সম্ভব। বক্তরা বলেন, দেশের তুলা উৎপাদন বাড়াতে হলে বিসিডিবির আরো পদক্ষেপ নিতে হবে। পতিত জমিগুলোকে উৎপাদন বাড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। জেরিন টেক্স এর কর্নধার মো. জুবের আলম বলেন, বাংলাদেশ ৬২ লাখ বেল তুলা আমদানী করে। যাতে করে অন্তত তিন শত কোটি ডলার ব্যয় হয়। আমরা যদি এক তৃতীয় অংশ আমদানী কমাতে পারি তবে একশত কোটি ডলার সাশ্রয় হবে।
নীলফামারী শিল্প ও বৈনিক সমিতির জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি ফরহানুল হক বলেন, তুলা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হলে সরকারি ভাবে ভর্তূকী প্রদানের ব্যব¯দা করতে হবে। আরএমজি ক্রনিক্যাল এর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের মোট রপ্তানী আয় ৩০ বিলিয়ন ডলার। যার ৮০ শতাংশই গামের্ন্টস শিল্প থেকে। তুলার আমদানী ব্যয় কমাতে পারা মানেই গামের্ন্ট আরো মূল্যসংযোজন করা। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মুজিবুর রহমান, নেদারল্যান্ডের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জ্যাক স্টিকমা, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিএম ইদ্রিস, সদও উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান আরিফা সুলতানা লাভলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং স্পিনফ স্টুডিও ব্যব¯দাপনা পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান সেমিনারটি পরিচালনা করেন।
|