সারাদেশ
  সাতক্ষীরায় গণধর্ষণ মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় বাদীকে মারপিটের অভিযোগ
  22-09-2025

মোঃ রফিকুল ইসলাম,  সাতক্ষীরাঃ  সাতক্ষীরা সদর থানায় দায়ের করা গণধর্ষণ মামলা তুলে নিতে রাজী না নেওয়ায় আসামি ও তার লোকজনকে সাথে নিয়ে আপন জামাতা ভিকটিম বাদীকে ডেকে নিয়ে ব্যাপক মারপিট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া জোরপূর্বক ৩টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়েছে বলে দাবী করেছেন ওই নারী। গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী গ্রামের রফিকুল ইসলামের বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত ভিকটিম সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

 ওই ঘটনায় ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে় দুইজনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞতা নামা আরও চারজনকে আসামি করে সদর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।

বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে ভিকটিম সাতক্ষীরা সদরের পাঁচআনি এলাকায় গণধর্ষণের শিকার হন। এঘটনায় তিনি নিজে বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সদরের আলিপুর এালাকার সাইফুল ইসলাম (৪৫) ও আলিপুর মাঝেরপাড়া গ্রামের মাহবুব (৩৩) সব অজ্ঞাতনামা আরো চারজনকে আসামি করে সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২০০০(সা:০৩) এর ৯(চ)/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার পর থেকে আসামিরা তাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছিল। একপর্যায়ে ভিকটিমের জামাতা সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের ওয়াহেদ আলী শেখের ছেলে রফিকুল ইসলাম মামলার আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শাশুড়ি়কে মীমাংসা করে নেয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ভিকটিম তার জামাতার কথায় রাজি না হওয়ায়য গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মেয়ে়র শরীর খারাপের কথা বলে শাশুড়িকে ফিংড়ি গ্রামে তার বাড়িতে ডাকেন জামাতা রফিকুল ইসলাম।
শাশুড়ি জামাতার বাড়িতে গেলে মাগরিবের আজানের কিছুক্ষণ পর দুইটা মটরসাইকেল যোগে জামাতা রফিকুলসহ আরো ৪ জন লোক বাড়িতে আসে। এ সময় রফিকুল ও তার মা রাশেদা বেগমসহ অজ্ঞাতনামা চার ব্যক্তি একযোগে মামলা প্রত্যাহারের জন্য তার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। তারা বাদির মেয়েকে মারপিট করে একটি ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। মামলা প্রত্যাহারের রাজি না হওয়ায় আসামীরা জামাতা রফিকুলের বেডরুমে দরজা বন্ধ করে তার উপর  চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এক পর্যায়ে লোহার রড দিয়ে তারা বাদিকে বেদম মারপিট করে ও গলায় রশি পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। পরে রফিকুল তার খাটের তলা হতে গরু জবাই করা ছুরি বের করে বাদির গলায় ধরে মৃত্যুর ভয় সৃষ্টি পূর্বক অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় তার নিকট থেকে ১০০ টাকা মূল্যের ৩টি অলিখিত নন-জুডিশিয়াল স্টাম্পে ও ২ টা সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নেয়। এ সময় তারা বাদিকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে তাদের মোবাইলে স্থির চিত্র সহ ভিডিও ধারন করে। একই সাথে আসামিরা বাদীর একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, কানে থাকা ৪ আনা ওজনের স্বনের্র দুল কেড়ে নিয়ে আত্মসাৎ করে। এই ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে কোন কথা কাউকে বললে মোবাইলে ধারণ করা ছবি ও ভিডিও সারা দুনিয়ায় ভাইরাল করে দেব এবং জানে মেরে ফেলে দেব বলে হুমকি দিয়ে বাঁদিকে রাস্তার উপর ফেলে রেখে চলে যায়। এ সময় বাদী নিরুপায় হয়ে একজন ইজিবাইক চালকের মোবাইল নম্বর হতে তার স্বামীকে ফোন করলে তিনি এসে বাদিকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

অভিযুক্ত জামাতা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার শাশুড়ীকে মারপিট করা হয়নি। বরং শাশুড়ী আমাদের বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। তবে মার সাথে স্বামীর পারিবারিক বিরোধ আছে জানিয়ে ভিকটিমের মেয়ে বলেন, আমি এক ঘরে ছিলাম আর অন্য ঘরে মা ও আমার স্বামীরা কথা বলছিলেন। সেখানে মাকে মারপিট করা হয়নি। সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই নাজমুল ইসলাম বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।