সারাদেশ
  কুড়িগ্রামের উলিপুরে ৪ বছরেরও শেষ হয়নি ৮ মাসের সড়কের কাজ
  12-09-2025
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ৪ বছরেরও শেষ হয়নি ৮ মাসের সড়কের কাজ 
 
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
 
 
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলায় জাইকার অর্থায়নে তিন সড়কের উন্নয়নকাজ শুরু হয় চার বছর আগে। আট মাস সময় বেঁধে দেওয়ার পরও সময় বাড়ানো হয়েছে আরও চার দফা। এখনও শেষ হয়নি কাজ। যেটুকু কাজ হয়েছে, তাও বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 
 
অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার কাজ শুরুর আগে সড়ক প্রশস্ত করেননি। মাটির বদলে বালু ব্যবহার করে ইটের গাঁথুনি দেওয়ায় বৃষ্টিতে ভেঙে যাচ্ছে সড়ক। কাজের সময় বাড়ালেও গতি বাড়েনি। 
 
২০২১-২২ অর্থবছর জাইকার অর্থায়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর উপজেলার ধরনীবাড়ী, হাতিয়া ও সাহেবের আলগা ইউনিয়নের তিনটি সড়কে মাটি ভড়াট, প্রশস্তকরণসহ সংস্কারকাজ শুরু করে। বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯ কোটি টাকা। কাজ পায় রাঙ্গামাটির মেসার্স ছালেহা এন্টারপ্রাইজ, চট্টগ্রামের মেসার্স শাহ জব্বারিয়া কনস্ট্রাকশন ও নোয়াখালীর মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড সন্স। আট মাস সময় বেঁধে দিয়ে ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল কার্যাদেশ দেওয়া হয়। 
 
কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রঞ্জন কুমার মজুমদার ভোলাকে সাব-কন্ট্রাক দেন। ভোলা আবার মাটি ভরাটের কাজ ধরনীবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ এরশাদুল হক ও সাহেবের আলগা চেয়ারম্যান মোঃ মোজাফ্‌ফর রহমানকে দেন। নানা অজুহাতে তারা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করেননি। এরপর সময় বাড়ানো হয়। প্রকল্পের নকশা উপেক্ষা, সড়ক প্রশমস্ত না করে মাটির বদলে বালু দিয়ে কাজ করায় এক সময় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। 
 
নানা নাটকীয়তার পর আবার কাজ চালু হলেও আগের মতোই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে দায়সারাভাবে ধরনীবাড়ী ও হাতিয়া সড়কের কাজ ৫০/৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। সাহেবের আলগা সড়কে মাটির বদলে বালু ফেলে রাখা হয়েছে। বর্ষায় সড়কটি কাদাপানিতে একাকার হয়ে থাকে। 
 
নামাজের চরের বাসিন্দা মোঃ ফজল শেখ বলেন, ‘হুনছিলাম আস্তাটা পাকা হইব। চরের মানষের ভালা হইব। অহন দেহি পাকা তো হইলোনি আস্তাটা অহন গলার কাডা হইছে। আগেই ভালা ছিল।’ 
 
ধরনীবাড়ী ঝাকুয়াপাড়ার মোঃ রব্বানী মিয়া বলেন, ৪ বছর ধরে কাজ চলছে। কোথাও শুধু মাটি ফেলা হয়েছে। কোথাও ইট বিছানো হয়েছে। সেগুলো আবার ভেঙে যাচ্ছে। সড়কটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যাতায়াত খুব কষ্ট হচ্ছে। 
 
সাহেবের আলগা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোজাফ্‌ফর রহমান বলেন, ‘সাব ঠিকাদার ভোলা আমাকে মাটি ভড়াটের কাজ দিয়েছিলেন। মাটি ভড়াট করেছি; কিন্তু টাকা পাইনি। পাঁচ আগস্টের পর তিনি পালিয়েছেন। 
 
এ বিষয়ে কথা বলতে সাব ঠিকাদার রঞ্জন কুমার ভোলার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া মেলেনি। 
 
মোস্তফা অ্যান্ড সন্স ও শাহ জব্বরিয়া কন্ট্রাকশনের মালিক মোঃ তপন মিয়া বলেন, হাতিয়ার কাজ ৯০ ভাগ শেষ করেছি। সাহেবের আলগার কাজ নিয়ে ঝামেলায় পড়েছি। শুনেছি ঠিকাদার ভোলা চেয়ারম্যানকে টাকা দেননি। বিষয়টি সুরাহা হলে কাজ শুরু করা হবে।
 
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ফিজানুর রহমান বলেন, কাজগুলোর পুরো তত্ত্বাবধান ও বিল প্রদান করে জাইকা। আমরা শুধু কাজ দেখি। হাতিয়া ও ধরনীবাড়ী সড়কের কাজ ৬০ ও ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। তবে এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। 
 
জাইকার জুনিয়র প্রকৌশলী মোঃ শামছুজ্জামান বলেন, কাজের দায়িত্ব পাওয়ার পর ঠিকাদারদের সঙ্গে দেখা হয়নি। যোগাযোগ করা হচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ না করলে কার্যাদেশ বাতিল করা হবে। 
 
প্রকল্পের ডেপুটি পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, নকশা অনুযায়ী কাজ না হলে পুরো বিল দেওয়া হবে না। 
 
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।