সারাদেশ
  কারফিউ: কুড়িগ্রামে থমকে জীবনযাত্রা, মহাবিপাকে শ্রমজীবী
  25-07-2024
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনেও কুড়িগ্রাম জেলাজুড়ে ছিল শান্ত। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া পুলিশের তৎপরতার কারণে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি তেমন কোনো দৃশ্যমান ছিল না। হাটবাজার, দোকানপাট খোলা থাকায় মানুষের চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। হঠাৎ করে কারফিউ জারির আওতায় কুড়িগ্রামকে অন্তর্ভুক্ত করায় মানুষের জীবনযাত্রা থমকে গেছে। টানা ৫ দিন কারফিউ থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়।  
এমনিতেই কুড়িগ্রাম জেলায় এমনিতেই ৫৩.৯% অতিদরিদ্র, ৩৭.২% দিনমজুর, ৬০% ভূমিহীন, ৫৭% নানা রোগে আক্রান্ত (সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) তাছাড়া সম্প্রতি বন্যায় সরকারি হিসাবমতে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয় ৬ শতাধিক পরিবার। কুড়িগ্রামে কারফিউ জারি থাকায় মানুষের চলাচল নেই বললেই চলে। সে সঙ্গে পুরো কুড়িগ্রাম থমকে গেছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষরা যারা দিন আনে দিন খায় তারা পড়েছে মহাবিপাকে।  সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কুড়িগ্রাম আদর্শ পৌর বাজারের কারফিউ জারি শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচাকেনার আশায় দোকানপাট খুললেও ক্রেতা একেবারে শূন্য। তাছাড়া দিনমজুর শ্রেণির লোকজন হচ্ছে তাদের প্রধান ক্রেতা। তাদের হাতে কাজ না থাকায় তাদের হাতে টাকা-পয়সা নেই। চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিম্নমুখী করে দিলেও তাদের কেনার সামর্থ্য নেই। কুড়িগ্রাম আদর্শ পৌর বাজার সমিতির সভাপতি ওয়াদুদ মন্ডল জানান, জনগণের জন্য পৌর বাজারে খাদ্য পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু ক্রেতা সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে কাঁচামাল সে সঙ্গে ফলমূল পচে গেছে। এ রকম চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা মাঠে মারা পড়বে। রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাজা বলেন, জেলায় রিকশা-ভ্যান শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ায় শ্রমিকদের আয়-রোজগার কমে গেছে। কুড়িগ্রাম জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আয়নাল হক জানান, তার সংগঠনে সাড়ে ৫ হাজার শ্রমিক রয়েছে। তারমধ্যে সাড়ে ৩শ’ ড্রাইভার বিভিন্ন জেলায় আটকা পড়েছে। তাদের পরিবারসহ অসংখ্য শ্রমিক খাদ্য সামগ্রীর আশায় তার বাড়িতে ভিড় করছে। এ নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তিত। এই আপদকালীন সময় উত্তোরণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তা না হলে শ্রমিকরা না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে।কুড়িগ্রাম চেম্বারের সভাপতি আব্দুল আজিজ মিয়া জানান, কুড়িগ্রাম স্বভাবগত ভাবেই শান্ত জেলা। এখানে রাজনৈতিক সহিংসতা নেই বললেই চলে। সংগঠনের সদস্য ব্যবসায়ীরা ক্রেতা সংকটের কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কুড়িগ্রামকে স্বাভাবিক রাখতে অচিরেই প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করব। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকার কারণে কুড়িগ্রামে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করি খুব শিগগিরই এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।  
পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, এই আন্দোলন সংক্রান্ত কোনো মামলা জেলায় রেকর্ড হয়নি। ফলে এ সংক্রান্ত কোনো গ্রেফতার নেই। জেলার আইনশৃঙ্খলা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
 
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪ ইং ০৯:৫৯ এএম.