সারাদেশ
  কুড়িগ্রামে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ বালুর ব্যবসা, ফসলি জমি খনন
  27-04-2024
কুড়িগ্রামের রৌমারী-রাজিবপুর উপজেলায় হাইকোর্ট থেকে সরকারিভাবে কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কোনোভাবেই বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। একশ্রেণির প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী ব্রহ্মপুত্র,  সোনাভরি, জিঞ্জিরাম, ধরণী, হলিহলিয়া কালো ও জালচিরা নদীর তীর ঘেঁষে সারিসারি ড্রেজার, এস্কেভেটর ও বাল্কহেড বসিয়ে দিনরাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বসতবাড়ি, আবাদি জমি, সরকারি- বেসরকারি স্থাপনা ভেঙে বদলে যাচ্ছে উপজেলার মানচিত্র। বাকিটুকু ভাঙনের কবলে পড়েছে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের বামতীরে ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চলমান প্রকল্পগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়া এলাকার সাধারণ মানুষ দ্রুত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।  জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক এক তিল পরিমাণ কৃষিজমি যাতে পতিত না থাকে ঠিক সেই সময়ে ড্রেজার, ট্রাক্টর ও এস্কেভেটর দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে রমরমা ব্যবসা করছে একটি চক্র। হুমকির মুখে পড়ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পাখিউড়া এলাকার সোনাভরি নদীর ব্রিজ, তুরা রোডের নতুনবন্দর ব্রিজ, ইজলামারী ব্রিজ ও রাবারড্যাম।  অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বপাড় বেড়িবাঁধ, চরশৌলমারী, বন্দবেড়, রৌমারী ও যাদুরচর ইউনিয়নের  খেরুয়ারচর, ঘুঘুমারী, খেদাইমারী, বলদমারা, বাগুয়ারচর, পশ্চিম খনজনমারা, ফলুয়ারচর, পালেরচর, কুটিরচর, বাঘমারা, মিয়ারচর মুখতলা, দিগলাপাড়া, ধনারচর, বকবান্দা, খেওয়ারচর, শশ্মানঘাট, চরনতুনবন্দর, ঝাউবাড়ি, চরফুলবাড়ি, দিগলাপাড়া, ধনারচর পশ্চিমপাড়া, আলগারচর ও বাগেরহাটসহ ৮০টি গ্রামের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন।  এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জমি ও বাড়ির মালিকগণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে হাফ ডজন মামলায় ১৫০ জন আসামি ও দেড় ডজন আবেদন বিভিন্ন দপ্তরে দাখিল করায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামকাওয়াস্তে হাতেগোনা কয়েকজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা ও জরিমানা করলেও থেমে নেই বালু উত্তোলন।  একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় বিভিন্ন চরের জমির মালিকের কাছ থেকে প্রতি বর্গফুট ১৬ টাকা হিসেবে বালু ও মাটি ক্রয় করেন বালু ব্যবসায়ীরা। পরে তারা ড্রেজার, ট্রাক্টর ও এস্কেভেটর মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে  ড্রেজারের মাধমে বালু উত্তোলন করে ট্রাক্টর দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে। ড্রেজার মেশিন যে স্থানে বসানো হয় সেখানে বিশাল এলাকা জুড়ে ৫০ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত গভীর খাদের সৃষ্টি করে। কিছুদিন পর বন্যার পানির স্রোতে ওই স্থানের আশপাশের ফসলি জমি ও বসতভিটা পানির নিচে দেবে যায়। এতে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে শত শত কৃষক নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে।
 ওই পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য সরকারিভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি বছরেই ঢেউটিন, নগদ অর্থ ও ত্রাণ দেয়া হয়। জমি ও বসতবাড়ির মালিকরা অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে বাধা দিলে বালু ব্যবসায়ী চক্রটি তাদের ওপর হামলাসহ নানা ভয়ভীতিও দেখায় এবং থানা পর্যন্ত গড়ায়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ভয়ে কিছু বলতে সাহস পায় না।  বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান জানান, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় ভাঙনের কবলে পড়েছে নদীর পাড়ের মানুষ। অপর দিকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটায় ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আবাদি জমি কমে গেলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত সৃষ্টি হবে। এজন্য অবৈধ ড্রেজার, ভেকু বন্ধের জন্য সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান বলেন, যে যে স্থানে ড্রেজার বসানো হয়েছে সেখানে খুব শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনা হবে।
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং ০২:৫৯ পিএম.