সারাদেশ
  পাহাড়ে জলে ফুল ভাসিয়ে নতুন বছরকে আমন্ত্রণ উৎসবের দ্বিতীয় দিন ‘মূল বিজু’; আর তৃতীয় দিন বিশ্রামের দিন বা ‘গইজ্যাপইজ্যা’ দিন।
  13-04-2024

রাঙ্গামাটিতে কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসল বিজুর ফুল। এর মধ্য দিয়ে শুরু হল চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিগোষ্ঠীগুলোর সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান ‘বৈসাবি’র মূল আনুষ্ঠানিকতা। দেশের তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও রাঙ্গামাটির ১৪টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষ এখন বর্ষবরণ ও বিদায়ের এই উৎসবে মাতোয়ারা। ব্যস্ততা বেড়েছে শহর, নগর আর পাহাড়ি পল্লীগুলো। 

অনুষ্ঠানের প্রথম দিন শুক্রবার সকালে শহরের কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসিয়ে নতুন বছরের মঙ্গল কামনায় ‘গঙ্গাদেবী’র কাছে প্রার্থনা করা হয়। 

নতুন বছর বরণ উৎসব ত্রিপুরাদের কাছে বৈসুক, মারমাদের সাংগ্রাই এবং চাকমাদের কাছে বিজু নামে পরিচিত; এই তিন নামের প্রথম অক্ষর এক করেই হয়েছে ‘বৈসাবি’। 

চাকমা রীতিতে এই ফুল ভাসানের নাম ‘ফুল বিজু’। ত্রিপুরারা বলে ‘হারি বৈসুক’। আর মারমা সম্প্রদায়ের কছে ‘সূচি কাজ’ নামে পরিচিত। 

ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাঙ্গামাটি শহরের রাজবনবিহার ঘাট, গর্জনতলী মধ্যদ্বীপ, কেরাণী পাহাড়সহ বিভিন্ন স্থানে বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান-২০২৪ উদযাপন কমিটি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে পানিতে ফুল ভাসানো হয়।  

উৎসবপ্রিয় পাহাড়িরা সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেতে থাকলেও বর্ষবিদায়ের এই উৎসব সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। 

উৎসবের প্রথম অংশ শুরু হয় নদীতে ফুল ভাসিয়ে। চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা প্রথমে বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করেন। পরে কলাপাতায় করে সেই ফুল আর নিমপাতা ভাসিয়ে দেন।   

চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা, সংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে এ উৎসবের ভিন্ন ভিন্ন নাম থাকলেও সাধারণভাবে এটা সাধারণত ‘ফুল বিজু’ নামেই পরিচিত। 

পাহাড়িদের বিশ্বাস, দেবতার উদ্দেশ্যে ফুল ভাসালে পুরানো বছরের গ্লানি থেকে মুক্তি মেলে। 

পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো দিনের বেদনা ভুলে নতুন বছরকে আবাহন করেন। 

 চাকমারা বলেন, “ফুল ভাসিয়ে আমরা প্রার্থনা করি, যাতে সারাবছর আমাদের ভালো কাটে। আমাদের পরিবারের সবাই যেন ভালো থাকে।” 

সুনেত্রা চাকমা বলেন, “ফুল বিজুর দিন থেকেই বর্ষবরণের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শনিবার মূল বিজু এবং পরশু পহেলা বৈশাখ পালন করব।” 

বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান-২০২৪ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, “পাহাড়ে বসবাসরত সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য আজকে বিশেষ একটি দিন। 

“আজকের দিনে আমাদের চাওয়া হল, আগামী দিনেগুলোতে যাতে সবাই মিলেমিশে সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারি।” 

বৈসুকের ‘বৈ’ সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ ও বিজু, বিষু ও বিহুর ‘বি’ নিয়ে উৎসবটিকে সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ নামে পালন করা হয় বহু বছর ধরে। 

পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনের পর থেকে পাহাড়ের সকল জনগোষ্ঠীকে সম্মিলিতভাবে উৎসবে একীভূত করার জন্য এই সংক্ষেপে নামটি প্রচলন করা হয়। 

শহরের গর্জনতলীতে ফুল ভাসানোর আয়োজনে অংশ নিয়ে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, “পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির ভিন্ন ভিন্ন নামে আয়োজিত, এই উৎসবকে সমন্বিতভাবে বৈসাবি নামেই অভিহিত করা হয়। 

“ফুল ভাসানোর মাধ্যমে সম্প্রীতি ও কল্যাণের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। এই আয়োজন পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে আরও ঋদ্ধ করে।” 

উৎসবের দ্বিতীয় দিন ‘মূল বিজু’; এদিন বাড়ি বাড়ি বেড়ানো আর খাওয়া-দাওয়া চলবে। 

আর তৃতীয় দিন বিশ্রামের দিন বা ‘গইজ্যাপইজ্যা’ দিন। সেদিন বাঙালির নববর্ষ পালনে অংশ নিবেন কেউ কেউ, আর কেউ কেউ ঘরে বসে বিশ্রামে কাটাবেন। 

১৬ এপ্রিল মারমা জনগোষ্ঠির সাংগ্রাই জলোৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বর্ষবরণ ও বিদায়ের পুরো আয়োজন।

মােঃ জানে আলম সাকী,

ব্যুরো চীফ, চট্টগ্রাম।