আন্তর্জাতিক
  ভারতের মণিপুরে জাতিগত দাঙ্গা “ভারত লজ্জিত” সংসদে নরেন্দ্র মোদি
  28-07-2023

জাতিগত সহিংসতার মধ্যেই ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও নিয়ে আরও উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের মণিপুর রাজ্য। কুকি উপজাতির দুই নারীকে নগ্ন অবস্থায় হাঁটতে বাধ্য করার ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সহিংসতার প্রবণতা আরও বেড়েছে। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে পুরো ভারতে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
এদিকে, ঘটনার দুই মাস পর হেরাদাস (৩২) নামের মূল অভিযুক্তকে আটক করেছে মণিপুর পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) থৌবাল জেলা থেকে তাকে আটক করা হয়ে। পুলিশ বলছে, ভিডিওটির সূত্র ধরেই তার হদিস মিলেছে। ঘটনার সময় হেরাদাসকে সবুজ টি-শার্ট পরা অবস্থায় নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছিল। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুই তরুণীকে বিবস্ত্র করে রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে একটি মাঠে নিয়ে যাচ্ছে একদল উত্তেজিত জনতা। অভিযোগ রয়েছে, মাঠে নিয়ে গিয়ে ওই দুই নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। এমনকি, ওই দুই নারীর পরিবারের দুই সদস্যকেও খুন করা হয়েছে। গত ৪ মে মণিপুরের ইম্ফল শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরের কাংপোকপি জেলায় ওই ঘটনা ঘটে।
বুধবার (১৯ জুলাই) ভিডিওটি নজরে আসার পরপরই এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় ‘ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডার ফোরাম’। প্রতিবাদ জানায় জাতীয় মহিলা কমিশন ও জাতীয় তফসিলি উপজাতি কমিশন।
দুই মাস ধরে চলে আসা জাতিগত সহিংসতা নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও, এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনে তিনি বলেন, মণিপুরে যা ঘটেছে, তাতে আমার হৃদয় ব্যথিত ও ক্রুদ্ধ। এমন ঘটনা যেকোনো সভ্য সমাজের জন্য লজ্জাজনক।
‘আমি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, তার রাজ্যে যাতে আইন-শৃঙ্খলা আরও জোরদার করা হয়। বিশেষ করে, নারীদের নিরাপত্তার দিকটি যেন সুনিশ্চিত করা হয়। আর ৪ মে’র ঘটনায় যেন কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রাজস্থান হোক বা মণিপুর, বা ছত্তিশগড়, দেশের যেকোনো জায়গায় এ ধরণের ঘটনার বিচারে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।’ এদিকে, এ ঘটনায় বড় সতর্কবার্তা দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রীয় সরকার ও মণিপুর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ অবিলম্বে এ ঘটনায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে শুক্রবারের (২১ জুলাই) মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন তলব করেছে।
ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, এ ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যদি সরকার কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আদালত স্বঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। গণতন্ত্রে এ ধরনের ঘটনা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।
উল্লেখ্য, গত ৩ মে থেকে জাতিগত সহিংসতা চলছে মণিপুরে। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং ও কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো মেইতেই জনজাতি। তবে সম্প্রতি তারা তফসিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি তোলে। তাদের এ দাবির বিরোধিতা করে স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসী। এ নিয়ে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে একটি মিছিলের আয়োজন করে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন। ওই মিছিল নিয়েই চূড়াচাঁদপুর জেলায় প্রথম সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যা পরে অন্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত এ সহিংসতায় অন্তত ১৩০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।