তথ্য - প্রযুক্তি
  ডিজিটাল বাংলাদেশের সফলতা : সর্বক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
  02-03-2022

মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই এই গ্রহের শ্রেষ্ঠতম বুদ্ধিমান প্রানী হিসেবে পরিচয় দিয়ে এসেছে। সেই সূচনা লগ্ন থেকে ধাপে ধাপে মানুষের মেধার বিকাশের মাধ্যমে আমরা এই আধুনিক সভ্যতাটি পেয়েছি । এর মধ্যে অনেকগুলো যুগ আমরা পার করে এসেছি। কখনো প্রস্তর যুগ, কখনো লৌহ যুগ, কখনো তাম্র যুগ কিংবা কখনো ব্রোঞ্জ যুগ। বর্তমানে আমরা যে যুগে বাস করছি, তাকে বলা হয় তথ্য ও প্রযুক্তির যুগ। এ যুগের ব্যাপারে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়। আর তা হলো, “যে দেশ তথ্য ও প্রযুক্তিতে যতো এগিয়ে, সে দেশ ততো বেশি শক্তি ও সমৃদ্ধশালী।”
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শীতায় ধীরে ধীরে তথ্য ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বের দরবারে রূপ নিচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে। সরকারী-বেসরকারী সর্বক্ষেত্রে হচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। ই-মেইল থেকে শুরু করে মোবাইল ব্যাংকিং, রাইড শেয়ারিং থেকে শুরু করে অনলাইনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় সবই সম্ভব হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে। এতে যেমন কাজগুলো সহজ হয়ে গিয়েছে, তেমনি সাশ্রয় হচ্ছে সময়। আজ থেকে ২০/৩০ বছর আগে এদেশের মানুষ যা কল্পনাও করতে পারেনি। তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে তা সম্ভব করে দেখিয়েছে এদেশের সরকার। এদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক ছাত্র-ছাত্রী পাস করে বের হয়। কিন্তু রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেও কোন চাকরি পায় না। তাদের এই বেকারত্ব সমস্যা দূরী-করণে সরকার হাতে নিয়েছে “লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং” নামের একটি উদ্যোগ। এসব বেকার যুবকদেরকে তথ্য ও প্রযুক্তি প্রশিক্ষন দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে করে তারা ফ্রিল্যান্সিং করে পরিবারের তথা দেশের উন্নতিতে নিজেকে কাজে লাগাতে পারে। পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষে অবস্থান নেওয়া আমাদের দেশ এখন প্রযুক্তি রপ্তানিতেও অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। বিশ্বের সব নামি-দামি ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে কাজ করছে আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণী। যাদের রেমিটেন্সের টাকায় সমৃদ্ধ হচ্ছে আমাদের অর্থনীতি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার বুদ্ধির কারনে এবং তার বিবেক বিবেচনার কারনে। কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ এই চিন্তাভাবনাগুলো মানুষ করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে বলেই আমরা শ্রেষ্ঠ। তবে তথ্য প্রযুক্তির যুগে এসে আমাদের শ্রেষ্টত্ব ভিন্ন এক মাত্রা পেয়েছে। যে কম্পিউটার ছিলো একটা নির্বোধ যন্ত্র, তাকে আমরা বোধশক্তি দিতে সক্ষম হয়েছি এবং হচ্ছি। আপনি হয়তো পড়ে অবাক হচ্ছেন যে, জটিল-কঠিন হিসাব করা কম্পিউটারকে আমি কেন নির্বোধ-যন্ত্র বলছি! নির্বোধ-যন্ত্র এই জন্যে বলছি, কারন কম্পিউটার কাজ করে ব্যবহারকারির নির্দেশ অনুযায়ী; নিজে থেকে চিন্তাভাবনা করে তার কাজ করার কোনো ক্ষমতা নেই। যতোক্ষন পর্যন্ত আপনি তাকে কোনো কমান্ড না দিবেন, ততোক্ষন পর্যন্ত সে কোনো কাজ করবে না। যেমন ধরুন, আপনি কম্পিউটারে গান শুনছিলেন, ঠিক সেই সময় আপনার ফোনে একটা গুরুত্বপূর্ণ কল আসলো। আপনি স্বভাবতঃ কী করবেন ? নিশ্চয়ই গান থামিয়ে রাখবেন। কথা শেষ হওয়ার পর আবার চালু করবেন। ঠিক এই জায়গাটাতেই কম্পিউটার নির্বোধ। কেমন হতো, যদি আপনার পোজ্ কিংবা প্লে করা না লাগতো! কম্পিউটার এমনিতেই বুঝে যেতো কি করতে হবে। তাহলে জিনিসটা আরো মজার হতো, তাই না? এটাকেই বলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে সোফিয়ার কথা। সৌদি আরবের নাগরিকত্ব পাওয়া কথা বলা এক রোবট, যে কি-না স্মার্টলি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ইংরেজিতে বলা হয়- Artificial Intelligence বা এ.আই. (A.I.)। “জন ম্যাকার্থি” নামক আমেরিকান একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারনা প্রদান করেন। তাকে এ.আই.-এর জনক বলা হয়।
আমরা সবাই জানি যে, কম্পিউটার কাজ করে ইলেকট্রনিক সিগ্নালের মাধ্যমে। পাওয়ার আছে মানে কম্পিউটার চলবে আর পাওয়ার না থাকলে, কম্পিউটার বন্ধ। কম্পিউটার সায়েন্সের ভাষায় ইলেকট্রনিক সার্কিটে বিদ্যুৎ থাকলে ‘১’ ধরা হয়। আর না থাকলে ‘শূণ্য’ ধরা হয়। ডিজিট বা সংখ্যা ‘১’ এবং ‘০’-এর উপর নির্ভরশীল বলে এসব সার্কিটকে বলে ডিজিটাল সার্কিট। তেমনি প্রতিটি ডিজিট অর্থাৎ ‘০’ এবং ‘১’-কে বলে এক একটি বিট। এ রকম ৪টি বিটকে একত্রে বলে নিবল ; আর ৮ বিটকে একত্রে বলে বাইট। আমরা নিশ্চয়ই সবাই কিলোবাইট, মেগাবাইট কিংবা গিগাবাইটের কথা শুনেছি। ১০২৪ বিটকে বলা হয় এক কিলোবাইট, তেমনি ১০২৪ কিলোবাইটের সমান হয় এক মেগাবাইট। আবার ১০২৪ মেগাবাইটের সমান এক গিগাবাইট। এমন লক্ষ কোটি বিট বাইট মিলে তৈরি হয় কম্পিউটার প্রোগ্রাম। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে, এমন কিছু বিশেষ প্রোগ্রামের সমষ্টি যেখানে পূর্ব থেকেই কম্পিউটারকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া থাকে ; কোন্ কাজ করলে কী আউটপুট আসবে।
আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের অজান্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আসছি। যেমন আপনি যখন গুগল কিংবা ফেসবুকে কিছু সার্চ করেন, দেখবেন সেই বিষয় সম্পর্কিত অনেক কিছুই আপনার সামনে চলে আসে। ফেসবুক বা অন্য কোনো সোস্যাল মিডিয়ায় আপনি যখন কারো পোস্টে লাইক, কমেন্ট বা রিয়্যাক্ট করেন, তারপর থেকে আপনার টাইম-লাইন জুড়ে শুধু তার পোস্টই থাকে ; কিন্তু কেন ? এর কারন হচ্ছে ফেসবুকের সার্ভারে থাকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সফ্ট্ওয়্যার আপনার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে এবং সফটওয়্যারটি তার অ্যালগরিদম (Algorithm) অনুযায়ী আপনার যেসব জিনিস পছন্দ, সেগুলো সাজেস্ট করে থাকে। অনলাইন মার্কেটিং সেক্টরে এজন্য এ.আই. গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে। Amazon, E-bay কিংবা আলিবাবার মতো বড় বড় অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানীগুলো এ.আই.-কে কাজে লাগিয়ে তাদের কাস্টমারদেরকে পছন্দের প্রোডাক্ট সাজেস্ট ক’রে এবং ইম্প্রেশন সৃষ্টি ক’রে অনেক বেশী সেল্ পাচ্ছে। গুগল, ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটার থেকে শুরু করে মোটামুটি সব জায়গায় এ.আই.-এর ব্যবহার রয়েছে।
বাংলাদেশের এ.আই. প্রযুক্তিও পিছিয়ে নেই। রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস প্রোভাইডার ‘পাঠাও’ তাদের মোবাইল অ্যাপে যুক্ত করেছে এ.আই. প্রযুক্তি। যাতে ক’রে তারা তাদের কাস্টোমারদেরকে আরো ভালো সার্ভিস প্রদান করতে পারে। বাংলাদেশের একদল তরুণ উদ্ভাবক তৈরি করেছে ‘ডিজিটাল ড্রাইভার’ নামক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মোবাইল অ্যাপস্। যার মাধ্যমে চালক গাড়ি চালানো অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করলেই তার ফোনে উচ্চস্বরে বেজে উঠবে সংকেত। ফলে তন্দ্রাচ্ছন্নতার কারনে সৃষ্ট দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পাবে। এছাড়া, আরো অনেক নতুন নতুন উদ্ভাবন হচ্ছে এ.আই. প্রযুক্তি ব্যবহার করে। হয়তো কোন একদিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে চালক ছাড়া গাড়ি তৈরির প্রযুক্তি আমরা রপ্ত করতে পারবো। বিশ্বের বাজারে ‘টেস্লা’-র মতো নামিদামি চালকবিহীন গাড়ির পাশে স্থান পাবে আমাদের দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন গাড়ি। এজন্য আমি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলবো, চাকরির পিছনে না ছুটে আপনারা মেধার পিছনে ছুটুন। দক্ষতা অর্জনের পিছনে ছুটুন। নতুনত্বের পিছনে ছুটুন। দেখবেন, সফলতা একদিন আসবে ; আসতেই হবে।