প্রচ্ছদ
  দেশবাসি ঘুমন্ত নয়, জাগ্রত মানবাধিকার কমিশন দেখতে চায়
  23-02-2022

মানবাধিকার কমিশন ঘুমিয়ে থাকেÑগণমাধ্যমে এমন অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবী করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান। দুই বছরের কার্যক্রম তুলে ধরতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আহূত সংবাদ সম্মেলনে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি সংস্থাটির চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম ও তাঁর সহকর্মীরা। তাঁদের উত্তরের ধরন দেখে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে তাঁরা আর পাঁচটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো হুকুম তামিল করছেন মাত্র। নিজেদের কোনো স্বাতন্ত্র্য অবস্থান নেই। গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যখন দেশের সীমাছাড়িয়ে বৈশ্বিক পরিসরে ও আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে, তখন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। রাষ্ট্র দ্বারা নাগরিকের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, তার প্রতিকার করা মানবাধিকার কমিশনের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা কমিশনের কাছে প্রতিকার চাইলে তাদের কাজ হবে সেটি আমলে নিয়ে তদন্ত করা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রতিকার করতে বলা। এ ব্যাপারে ব্যত্যয় ঘটলে মানবাধিকার কমিশন উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে। যদিও এ রকম কোনো নজির জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এ ছাড়া স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেও তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করতে পারে।
বাংলাদেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের যাত্রাশুরু তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে অধ্যাদেশের মাধ্যমে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নতুন আইন করে এবং কমিশন পুনর্গঠন করা হয়। এরপর এক যুগ পার হলেও সংস্থাটি মানবাধিকার রক্ষা বা মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে দৃশ্যত কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। ভূতপূর্ব চেয়ারম্যানের আমলে বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন কিছুটা আওয়াজ তুলেছিল; এখন আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব। কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, তাঁরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। কিন্তু সেইকাজ দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে কি?
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‌্যাব ও এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সাংবাদিকেরা কমিশনের দৃষ্টিআকর্ষণ করেছিলেন। কিন্তু চেয়ারম্যান বা তাঁর সহকর্মীদের কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি। চেয়ারম্যান বলেছেন, ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুলহকের বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় মামলা হওয়ায় তাঁরা সরে এসেছেন। প্রকৃত ঘটনা হলো একরামুলের ঘটনায় কোনো মামলাই হয়নি। এ রকম শত শত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ মানবাধিকার রক্ষকদের দৃষ্টির বাইরে থেকে গেছে।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের সুপারিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্ণপাত করেনা। কিন্তু কমিশন আইনের ১৪-এর ৬ ধারায় বলা আছে, এভাবে যদি কোনো কর্তৃপক্ষ কমিশনকে অগ্রাহ্য করে, তারা বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানাতে পারবে প্রতিবেদনের মাধ্যমে। আর রাষ্ট্রপতি সেই প্রতিবেদনের কপি জাতীয়সংসদে উত্থাপনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু গত ১২ বছরে কোনো ঘটনা তারা রাষ্ট্রপতিকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। এ কারণে একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে হাইকোর্টের রায়ে মন্তব্য করা হয়েছিল, মানবাধিকার আইনে অর্পিত দায়িত্ব পালনে মারাত্মক গাফিলতির পরিচয় দিচ্ছে; মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার রক্ষায় ‘জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে’।
দেশবাসী ঘুমন্ত নয়, জাগ্রত মানবাধিকার কমিশনই দেখতে চায়, যারা সরকারের অনুগত সংস্থা হিসেবে কাজ করবেনা; নিজের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখবেন। নিছক নিয়ম রক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমন মানবাধিকার কমিশন রাখার যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া কঠিন।

নাছিমা বেগম আরও বলেন, মানবাধিকার কমিশন ঘুমিয়ে থাকে, ব্যর্থ হয়ে গেছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে এমন কিছু কথা এসেছে। এসব কথা ঠিক নয়। মানবাধিকার কমিশনের অনেক সাফল্য রয়েছে, তার মধ্যে সম্প্রতি খাদিজা নামে এক গৃহকর্মীকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ এনে দিয়েছে মানবাধিকার কমিশন। এটি কমিশনের অন্যতম বড় ধরণের একটি সাফল্য। যা উপহাসমূলক ও হাস্যকর।
মানবাধিকার খবরের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে কমিশনের বিরুদ্ধে নানা রকম বিরূপ তথ্য।
মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রম ও প্রচার প্রচারণায় ব্যয় সীমিত করে সরকারী টাকা লুটপাট করছে বলে বিভিন্ন মহলথেকে অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান গত ২ বছর করোনার অজুহাত দেখিয়ে অফিসে আসেননি। তিনি বাড়িতে বসে অফিস করে নিয়োমিত বেতন ঠিকই নিয়েছেন।
মানবাধিকার খবর থেকে প্রায়ই কমিশনের অফিসে গিয়ে খবর নেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান সহ অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের ঠিকমতো পাওয়া যায়নি। গত কয়েক বছর মানবকল্যাণে নিয়োজিত মানবাধিকার খবর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষীকি ও বিশ^ মানবাধিকার দিবস সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি করতে চাইলে এবং পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় কমিশনের চেয়ারম্যানের বাণী চাইলে তিনি তা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। অথচ, এর আগে মানবাধিকার কমিশনের সকল চেয়ারম্যানবৃন্দ বাণী দিয়েছেন এবং অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকেছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান আসার পর, মানবাধিকার বিষয়ক বিশে^র একমাত্র নিয়মিত সৃজনশীল বাংলা প্রকাশনা মানবাধিকার খবরকে কোন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানাননি। মানবাধিকার বিষয়ক কোন সংগঠনকে আমান্ত্রন জানাননি আর জানালেও তাদের আজ্ঞাবহ পছন্দের লোকজনকে আমন্ত্রন জানান।
তারা একারাই বাংলাদেশ সহ বিশে^ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বর্তমান চেয়ারম্যান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত মানবাধিকার খবরকে পত্রিকা হিসেবেই মনে করেন না। মানবাধিকার খবরের সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যানের দায়িত্বের শুরুতে সাক্ষাৎ করতে গেলে মানবাধিকার খবরের নারী-শিশু উদ্ধারসহ নানাবিধ মানবিক কার্যক্রম তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে এসব মানবিক কাজ কর্মকে তিনি নিরোৎসাহিত করেন।
বর্তমানে মানবাধিকার কমিশন সাধারণ ও নির্যাতিত নিপেরিত মানুষের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। শুধুমাত্র দ্বায়সারা সরকারী দুই একটা অনুষ্ঠান ছাড়া কার্যত তাদের কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সংবিধান মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রæতি বদ্ধ। সংবিধানে শিশুসহ জনগণের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপর যে দ্বায় দ্বায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে সেই দ্বায়-দ্বায়িত্ব পালন না করে বক্তৃতা ও বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে।
মানবতার জননী, মানবিক মানুষ, মাদার অব হিউমিনিটি জননেত্রী শেখ হাসিনা’র সরকারের মানবাধিকার কমিশনের এহেন কর্মকান্ড দেশ বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে অসহায় ও নির্যাতিত মানুষের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সমাজের সচেতন মহল অনুরোধ জানিয়েছেন।