জাতীয়
  অফুরান বাংলার শাশ্বত মুজিব
  22-09-2021

গোপালগঞ্জ জেলার এক অজোপাড়াগাঁ। নাম টুংগিপাড়া। এ টুংগিপাড়ারই ছেলে খোকার জন্ম হলো ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চে। সেই খোকা বড় হতে থাক্লো। বড় হয়ে নাম পরিগ্রহ র্কলো ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ হিসেবে। সেই ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ বাংগালির প্রাণের নেতায় পরিণত হলেন। প্রাণপ্রিয় বাংগালিদের হৃদয় থেকে পেলেন ‘বংগবন্ধু’ উপাধি। উপাধি পেলেন ‘বংগশার্দুল’ বাংগালিদের মানসপট্ থেকে। সেই ‘খোকা’ নামের পরিব্যাপ্তি ঘট্লো: ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ নাম পরিগ্রহ করে।
সেই ‘অজোপাড়াগাঁ’ টুংগিপাড়া এখন থানা পর্যায়ে উন্নীত। গঠিত হোয়েছে পৌরসভার প্রশাসন। বাংলাদেশের একটি গুরুত্ববহ মফস্বল শহর হিসেবে এখন বিবেচিত সেই টুংগিপাড়া।
সেই তখনকার টুংগিপাড়ার ‘খোকা’ বাংগালিদের হৃদয় জয় করেছিলেন বলেইÑ বাংগালিদের সুখ-দুঃখের বিষয়ে জান্তে শুরু র্কলেন। জেনেছিলেন বাংগালিদের শোষন, বঞ্চনা আর গঞ্জনার বিষয়Ñ অতি গভীরতরভাবে। তাই, পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠীর কাছ থেকে বাংগালিদের নিরাপদে বেরিয়ে আনতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠে-পড়ে লেগে গেলেন।
বাংগালিদের স্বাধিকার আদায়ের প্রত্যয়ে বংগবন্ধু প্রনয়ণ করলেন ছয় দফা। ছয় দফার প্রনয়ণ-অন্তে বাংগালিদের মানসপটে তিনি শক্তভাবে তাঁর খুঁটি গাড়্লেন। বাংগালিরা তাঁর আহŸানে সাড়া দিলো। এক সময় এই শোষিত-বঞ্চিত বাংগালিরা রেস্কোর্সের মাঠে সমবেত হলো। রেস্কোর্সের মাঠেই বংগবন্ধু ঘোষণা দিলেন: এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধিনতার সংগ্রাম।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এবং লক্ষ-লক্ষ নারীর সম্ভ্রম হারিয়ে এদেশ স্বাধিন হলো। পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত হ’য়ে বংগবন্ধু বাংলাদেশের মানুষদের কল্যাণে নিজেকে সর্বাগ্রে নিয়োজিত করলেন। কিন্তু, এদেশের মানুষদের কল্যাণে নিজেকে সর্বাগ্রে নিয়োজিত করতে যেয়ে তিনি পদে-পদে বাধা-প্রতিবন্ধকতার শিকার হলেন।
কিছু দুষ্ট-স্বার্থান্বেষী মানুষের অতীষ্ঠতায় নিপতিত হলেন তিনি। অনুশোচনার সুরে তিনি বল্তে বাধ্য হলেন: বিশে^র অন্যান্য দেশ পায় সোনার খনি ; আর আমি পেয়েছি চোরের খনি।
বংগবন্ধু চেয়েছিলেন এদেশকে স্বনির্ভর ও স্বাধিন দেশ হিসেবে গড়্তে। তিনি চেয়েছিলেন এদেশের নি¤œ আয়ের মানুষদের কল্যাণ। কৃষকরাজ ও শ্রমিকরাজ গড়্তে আত্মনিয়োগ র্কতে চেয়েছিলেন তিনি। ফলশ্রæতিতে, এক পর্যায়ে এসেÑ তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠন র্কলেন। কৃষক-শ্রমিকভুক্ত সৎ শ্রেণীসম্বলিত মানুষদের নিয়ে অসৎ শ্রেণীর মানুষদের বিরূদ্ধে সংগ্রামে আবর্তিত হ’তে বাধ্য হলেন। অসৎ শ্রেণীর মানুষরাÑ এই ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ’ বা ‘বাকশাল’ গঠনকে বিতর্কিত-ভাবাপন্ন ক’রে তুলে পরিবেশটারে ভারী বানিয়ে ছাড়্লো। বাকশাল গঠনের অনুক‚লে তাঁর ব্যাখ্যা প্রদানের কোনো র্ফুসৎ-ই পেলেননা তিনি। কেউ-তো তাঁর নিকট গিয়ে বল্লো-ও না: এ-কি র্কলেন ? এ যে গণতন্ত্র হত্যা হলো! এমতো বলার সৎ-সাহসটুকু পর্যন্ত কারো হলোনা বৈকি।
অপ্রত্যাশিত নৃশংস যবনিকাপাত ঘট্লো বংগবন্ধুর, সপরিবারে। বাংগালির ভাগ্যাকাশে এক অন্ধকার কালো ছায়া রচিত হলো।
টুংগিপাড়াস্থিত সেই অজোপাড়াগাঁয়েরÑ ‘খোকা’ নামের শৈশবকালের ঐ ছেলেটি আবহমান বাংলার ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত হ’য়ে রইলোÑ ‘অফুরান বাংলার শাশ^ত মুজিব’ হিসেবে।