বিশেষ প্রতিবেদন
  মানবাধিকার খবর’র উদ্ধারের উদ্যোগ : চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে কিশোরী পাচার
  22-07-2020

মানবাধিকার খবর প্রতিবেদক :
মানবাধিকার খবর প্রতিেিবদন : মানবাধিকার খবর এর কাছে মায়ের আহাজারি, যেভাবেই হোক আমার মেয়ে কে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে দিন,একটু মানবিকতা দেখান, আমাকে একটু শান্তি দিন,আমি নিরুপায়। অনেক চেষ্টা করেও মেয়ে কে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারছি না। আপনার জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করবো, রোজাও মানত করছি ইত্যাদি ইত্যাদি ।

কান্নাজড়িত কন্ঠে আক্ষেপ করে ২৯ মে-২০২০ মোবাইল ফোনে মানবাধিকার খবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক রোটারিয়ান মো: রিয়াজ উদ্দিনকে কথাগুলি বলছেন, ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া এক কিশোরীর অসহায় মা। মানবাধিকার খবরের মাধ্যমে নারী ও শিশু উদ্ধার করার খবর জানতে পেরে কিশোরীর মা সুফিয়া বেগম মানবাধিকার খবর সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করেন।


ঘটনাবিবরণঃ জানা গেছে, কিশোরীর বয়স ১৬ বছর। সে ৮ম শ্রেণীতে পড়াশোনা করতো। বাড়ি খুলনা জেলার দিঘলিয়া থানার একটি গ্রামে। (প্রসঙ্গে উল্লেখ, কিশোরীর সামাজিক মর্যাদা এবং নিরাপত্তা জনিত কারণে তার পুর্নাঙ্গ নাম, ঠিকানা ও স্বচ্ছ ছবি প্রকাশ করতে পারছি না)। এজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।


কিশোরীর পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। তারা ৩ ভাই বোন। বাবা তাদের খোঁজ নেয় না। মা পরের বাড়িতে কাজ করে ও দুধ বিক্রি করে কোন মতে সংসার চালায়। ৮ম শ্রেণিতে পড়াশোনা অবস্থায় তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের পরপরই নববিবাহিত জীবনে দেখা দেয় অশান্তি। তার স্বামী ছিল দুশ্চরিত্র ও মাদকসেবী। ফলে তার সংসার জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। ছয় মাসের মাথায় তাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি ঘটলে বিচ্ছেদ হয়। কিশোরী মেয়েটি তখন নিরুপায় হয়ে ওঠে।

এসময়ে নারী ও শিশু পাচারে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্র তার অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়। তাকে ভারতে ভাল কাজ দেওয়ার কথা বললে, সে সরল মনে রাজি হয়ে যায়। এরপর তাকে পাচারকারীরা অবৈধ পথে ভারতে পাচার করে দালালের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়। দালালরা কলকাতা থেকে বিক্রির উদ্দেশ্য মুম্বাইয়ে বা দিল্লীতে নিয়ে যাওয়ার সময় শিয়ালদহ রেল স্টেশনে পুলিশের সন্দেহ হলে, কলকাতা রেলওয়ে পুলিশ কিশোরীকে আটক করে। এসময় দালালরা সটকে পড়ে। এরপর পুলিশ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হোমে পাঠায়।

গত ৭ মাস ধরে কিশোরী মেয়েটি ভারতের কলকাতার সেক্টর ফাইভে সরকারি সুকন্যা হোমে আছে। আইনি জটিলতা ও কাগজপত্রের অভাবে কিশোরী মেয়েটি দেশে ফিরতে পারছে না। তবে এ মুহূর্তে মানবাধিকার খবর এর হাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পৌঁছেয়েছে। মানবাধিকার খবর উদ্ধার পক্রিয়ায় কলকাতাস্থত উপ-দূতাবাসসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ শুরু করেছে। মানবাধিকার খবরের মাধ্যমে কিশোরী সাথে তার মাকে ফোনে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকে প্রায়ই মা-কিশোরী সাথে কথা হচ্ছে। কিছুটা হলেও তারা স্বস্থিতে আছেন।


মানবাধিকার বিষয়ক নিয়মিত সৃজনশীল বাংলা প্রকাশনা "মানবাধিকার খবর" পত্রিকা প্রতিষ্ঠা থেকে নানান সামাজিক কাজ করে আসছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সব সময়ই অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছে। দায়বদ্ধতা থেকেই নিয়মিত ভাবে দেশ-বিদেশ থেকে পাচার কৃত বা সমস্যায় পতিত নারী ও শিশু উদ্ধার করে মা বাবার হাতে তুলে দিতে চেষ্টা করে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে কিশোরীকে ভারত থেকে উদ্ধার করে, দেশে ফিরিয়ে এনে মায়ের হাতে তুলে দিতে, উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মানবাধিকার খবর।

অসহায় কিশোরী মেয়েটির মায়ের পাশে দাড়িয়েছে মানবাধিকার খবর। আশা করছি, লকডাউন এর পর মহামারির করোনা ভাইরাস প্রকোপ স্বাভাবিক হলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে মায়ের কাছে তুলে দিতে চেষ্টা করবে মানবাধিকার খবর।


সাফল্যঃ উল্লেখ, ২০১৫ সাল থেকে মানবাধিকার খবর দুধর্ষ ও শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ২ শতাধিক নারী ও শিশু দেশ- বিদেশ থেকে উদ্ধার করে মা বাবার হাতে তুলে দিয়ে সাফল্য দেখিয়েছে। উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছে আরো শতাধিক নারী ও শিশু।


মানবাধিকার খবর পত্রিকাটি তার সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার- ২০১৯ ভূষিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
আবেদনঃ মানবতার কল্যানে মানবাধিকার খবর পত্রিকা নিয়মিত বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশনার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। মানবিক ও সামাজিক এ কাজ করতে সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা এখনো এগিয়ে আসেনি। নানান রকম প্রতিকূলতার মুখোমুখি মানবাধিকার খবর।

এজন্য দরকার বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান, সমাজের উচ্চবিত্তসহ সব শ্রেণীর মানুষের আর্থিক ও সার্বিক সহযোগিতা। মানবিকতা দেখিয়ে, মানবকল্যানে নিয়োজিত মানবাধিকার খবর এর পাশে দাড়াতে সকলের প্রতি বিনীতভাবে ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।


ধন্যবাদজ্ঞাপনঃ মানবাধিকার খবর এর সন্মানিত উপদেষ্টা ও প্রতিনিধি, বিজ্ঞাপনদাতা, লেখক,পাঠক সহ শুভাকাঙ্ক্ষীগন নিয়মিত সহায়তা দিয়ে পাশে দাড়িয়েছে, সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাস এর মহামারীর এই সংকট মুহূর্তে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।