জাতীয়
  বিজয়ের ৪৮ বছর উদ্যাপন অসাম্প্রদায়িক একাত্তরের চেতনায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
  25-01-2020

নিজস্ব প্রতিবেদক: মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে বিজয়ের ৪৮ বছর উদ্যাপন করেছে জাতি। সারা পৃথিবীতে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় সা¤প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে একাত্তরের চেতনা আরও নিবিড়ভাবে ধারণ করে গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত সোনার বাংলাকে বিশ্বের মানচিত্রে আরও উজ্জ্বল করে তোলার অঙ্গীকার করেছেন দেশের মানুষ।


লাখো বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা পুনর্ব্যক্ত করেছেন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়ের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয়। তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের সহযোগীদের বিচার এবং রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বর্জনের ভেতর দিয়ে অসা¤প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র নির্মাণের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবেই।


বিজয় দিবস ঘিরে ১৬ ডিসেম্বর সোমবার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ সারাদেশেআনন্দঘন নানা কর্মসূচি পালিত হয়। সূর্যোদয়ের পর থেকেই বিজয়ের উৎসবে মেতে উঠতে শুরু করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ। লাল-সবুজের সাজে সেজেছিল গোটা নগরবাসী।

 

এবারের বিজয় দিবস এসেছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। কারণ ২০২০ সালে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং এর পরের বছর ২০২১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ।


স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের ঢল: ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর।


এরপর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আবারও শ্রদ্ধাঞ্জলি দেন শেখ হাসিনা। এ সময় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, প্রমুখ।


বিএনপির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। সেই স্বপ্নকে খুন করা হয়েছে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন প্রশ্ন তোলেন, রাজাকারের তালিকা এত পরে কেনো প্রকাশ করা হলো?


বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুফল সবার কাছে পৌছে দিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।এর পর আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ: ৪৯তম বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত কুচকাওয়াজে সালাম নেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশন কুচকাওয়াজ পরিচালনা করে।


বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় চার নেতা এবং সাত বীর শ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি দিয়ে প্যারেড গ্রাইন্ড সাজানো হয়। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনৈতিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন ভারতীয় যোদ্ধা এবং রুশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি প্রতিনিধি দলও কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার: বিজয় দিবসে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৬ ডিসেম্বর সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডে শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপহার পৌছে দেন। মুক্তিযোদ্ধারা প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।