আন্তর্জাতিক
  এনআরসি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনাকে মোদি বাংলাদেশের শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই
  15-10-2019

মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তার দেশের জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ২৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মোদি এই আশ্বাস দেন। বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বজায় রয়েছে। তাই এ ধরনের ইস্যু নিয়ে উদ্বেগের কিছুই নেই। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট প্রকাশিত ভারতের আসাম রাজ্যের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন বাসিন্দা। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির ইশতেহারে অন্যতম ইস্যু ছিল এই নাগরিক তালিকা চূড়ান্ত করা। এ বছরের গোড়ার দিকে কথিত অনুপ্রবেশকারীদের (বাংলাভাষী মুসলিম) ‘উইপোকা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন বিজেপি নেতা ও ভারতের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারীরা বাংলার মাটিতে উইপোকার মতো। বিজেপি সরকার তাদের এক এক করে তুলে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলবে। অমিত শাহ তার বক্তব্যে অবৈধ মুসলিম অভিবাসী বলতে তাদের বাংলাদেশি হিসেবে ইঙ্গিত করেন। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তার দেশের জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
নিউ ইয়র্কে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মোদি এই আশ্বাস দেন। বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বজায় রয়েছে। তাই এ ধরনের ইস্যু নিয়ে উদ্বেগের কিছুই নেই। এর আগেরদিন বিকালে লোতে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে দ্বিপক্ষীয় সভাকক্ষে দুই নেতার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উভয় নেতা তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। এ কে আবদুল মোমেন বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এই বৈঠক খুবই সৌহার্দ্যমূলক ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে এনআরসি, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনআরসি ইস্যুর কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এনআরসি ও পানি বণ্টনের মতো ইস্যুগুলোকে আমরা সহজভাবে নিতে পারি। কারণ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি নির্ধারণে কাজ করবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের শঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনও বিষয় নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, উভয়পক্ষ দুই দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। কেননা দুই নেতার মধ্যে ভাই-বোনের মতো চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক খান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত সর্বশেষ আসামের নাগরিক তালিকা প্রকাশের পর এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তোলেন ভারতের ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের সমন্বয়কারী ও আসামের অর্থমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভারতের বন্ধু এবং তারা আমাদের সহায়তা করে আসছে। আমরা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে উপস্থাপন করলে তারা বরাবরই তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে। এই সংখ্যাটি বেশি বড় না, তবে এখন আমরা তাদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।

এনআরসি বিষয়ে বাংলাদেশকে ফের আশ্বস্ত করলেন নরেন্দ্র মোদী :

এদিকে বিতর্কিত নাগরিকত্ব তালিকা (এনআরসি) ইস্যুতে বাংলাদেশকে আবারও আশ্বস্ত করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। ০৫ অক্টোবর নয়াদিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ আশ্বাস দেন নরেন্দ্র মোদী। পরে সন্ধ্যায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান। শহীদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আশ্বস্ত করেছেন, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। নরেন্দ্র মোদী এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যাখ্যা করেছেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ আছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক খুবই ভালো। উষ্ণ ও বন্ধত্বপূর্ণ। জাতিগত নিধনের শিকার, নির্মম নির্যাতনের মুখে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে মিয়ানমারকে রাজি করাতে ভারতকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ককে কাজে লাগানোর অনুরোধ করেন তিনি। শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যেতে দুই প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন। এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইর্য়ক সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকেও এনআরসি ইস্যুতে বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই বলে আশ্বাস দেন নরেন্দ্র মোদী।

ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) চুড়ান্ত করার পর ১৯ লাখের বেশি মানুষ তাদের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। যাদের প্রায় সবাই বাংলা ভাষী মুসলমান ও হিন্দু।
সংবাদ সম্মেলনে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।