আন্তর্জাতিক
  মানবাধিকার খবরের সার্বিক সহযোগিতা ভারতীয় স্কুল ছাত্রী দুইমাস পর আসাম থেকে উদ্ধার
  14-10-2019

প্রদীপ রায় চৌধুরী, কলকাতা থেকে :
নিখোঁজ হওয়ার দুইমাস পর স্কুল ছাত্রী (১৫) কে আসামের শিলচর থেকে উদ্ধার করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। এর মধ্যে সে পশ্চিম বঙ্গ থেকে রাজস্থান, সেখান থেকে এলাহাবাদ, দিল্লি, ফের এলাহাবাদ হয়ে আসামের শিলচর ক্লাস নাইনে পড়া মেয়েটার জীবন ২ মাস এভাবেই কেটেছে। একের পর এক হাত বদল হয়েছে। প্রত্যেকবারই সে যৌনপল্লিতে বিক্রি হয়ে গেছে। অতপর স্বাধীনতার স্বাদ পেল ২৬ জুলাই যেদিন উত্তর চব্বিশ পরগণা এবং আসামের পুলিশের যৌথ অভিযানে অন্ধকার জগৎ থেকে আলোয় ফিরলো। প্রেমিক সোহাগ রায় তাকে ফুসলিয়ে গত ২৫ মে গভীর রাতে ঘর থেকে বের করে উত্তর চব্বিশ পরগনার মধ্যমগ্রামের এই স্কুল ছাত্রীকে। সোহাগের আনা অটোয় উঠে বসে মেয়েটি। মেয়েটির পরিজনেরা বিষয়টি বুঝতে পেরে কিছু দূর গিয়ে অটোটি ধরে ফেলে। কিন্ত ভিতরে তখন মেয়েটি নেই। পুলিশ অটোচালক এবং প্রেমিক সোহাগ রায়কে গ্রেফতার করে। কিন্তু মেয়েটি সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। মেয়েটির মোবাইল নান্বারের সুত্রে তদন্তকারী দল পৌছায় দিল্লি। মোবাইলটি মেলে নাজিয়া নামে এক মহিলার কাছে। জেরায় সে জানায়, এলাহাবাদে বিক্রি করা হয়েছে ১৫ বছরের মেয়েটিকে। সেখান থেকে মাইলি তামাং নামে এক ব্যক্তিকে ধরে মধ্যমগ্রাম পুলিশ। তার থেকে শিলচরের যৌনপল্লির হদিস মেলে। এরপর ২৬ জুলাই ওই ঠিকানায় হানাদিয়ে প্রেমিক-সহ মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, অমানবিকভাবে বন্দী থাকা বাংলাদেশী তিন শিশু উদ্ধারের ব্যাপারে গত ১২ জুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান মানবাধিকার খবরের সম্পাদক। এসময় খবর পেয়ে উক্ত স্কুল ছাত্রীর অসহায় মা-বাবা সম্পাদকের সাথে দেখা করে তাদের নাবালিকা মেয়েকে উদ্ধার ও সার্বিক সহযোগিতার করতে বিশেষ অনুরোধ জানানোর প্রেক্ষিতে মানবাধিকার খবরের সম্পাদক নিখোঁজ ছাত্রীকে উদ্ধারের দায়িত্ব নেন। ওই সময়ে বিষয়ে মধ্যমগ্রাম থানায় আই পি সি আইনে ও ৩৬৩/৩৬৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয় যার নাম্বার (২১৮/২) তারিখ ২৭.০৫.২০১৯। নিখোজ ছাত্রী মধ্যমগ্রামের এপিসি গার্লস হাইস্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২৬ মে রাত ১২টার পর থেকেই তাদের মেয়ের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাতেই বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে না পাওয়া গেলে মধ্যমগ্রাম থানায় মিসিং ডায়রি করে পরিবার। স্কুল ছাত্রীর বাবা চন্দ্রশেখর রায় পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা ত্রিপলী রায় গৃহবধূ। স্কুল ছাত্রীর সাত বছরের ছোট ভাই রয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবা চন্দ্রশেখর রায় বলেন, ২৬ মে রবিবার মাঝরাতে বাথরুমে যাওয়ার পর থেকে মেয়েকে আর পাচ্ছি না। ওই রাতেই বাড়ির কাছে একটি অটো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। ফলে সন্দেহ বাড়ে পরিবারের। এরপর এলাকারই অটো চালক সন্দীপ বণিককে চাপ প্রয়োগ করেন স্কুল ছাত্রীর বাবা। বাবার দাবি, সন্দীপ তাঁকে বলে সোহাগ রায় সব কিছু জানে। কিন্তু সোহাগও নিখোজ ছাত্রীর ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। পরবর্তিতে দু’জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ দিকে স্কুল ছাত্রীর কোনও খোঁজ না মেলায় তাঁকে অপহরণ কিংবা কোথাও পাচার করা হয়ে থাকতে পারে বলে পরিবারের আশঙ্কা করে। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর গত ২৬ জুলাই উক্ত স্কুল ছাত্রীকে শিলচর থেকে উদ্ধার করা হয়। মানবাধিকার খবর সার্বক্ষনিক সার্বিক সহযোগিতা ও পরামশ দিয়ে আসছিলো। তাকে উদ্ধারের ব্যাপারে মানবাধিকার খবরের বিশেষ ভূমিকার জন্য নিখোজ কিশোরীর বাবা চন্দ্রশেখর রায় ও মা ত্রিপলী রায় পত্রিকার সম্পাদককের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উদ্ধারের পর উক্ত স্কুল ছাত্রী ফিরে পেয়েছে মনোবল, যোগ দিয়েছে নিয়মিত পড়াশোনায়। পড়াশোনার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সে সাংবাদিকতা করতে চায়। লেখালেখির মাধ্যমে তার মতো ভুক্তভোগীদের কথা সমাজে মানুষের কাছে তুলে ধরতে চায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, মানবাধিকার বিষয়ক নিয়মিত সৃজনশীল বাংলা প্রকাশনা “মানবাধিকার খবর” এর আগেও দেশ-বিদেশ থেকে নিখোঁজ ও পাচারকৃত অসংখ্য নারী ও শিশু উদ্ধার করে অবিভাবক ও স্বজনদের হাতে তুলে দিয়ে সাফল্য দেখিয়েছে।