আন্তর্জাতিক
  দক্ষিণ আফ্রিকায় নারকীয় তান্ডব: আতঙ্কে বাংলাদেশিরা
  14-09-2019

আরিফুর রহমান দিলু, দক্ষিণ আফ্রিকা :
দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে অভিবাসীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গরা গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের প্রায় ৫শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা লুটপাট, ভাঙ্গচুরসহ অগ্নিসংযোগ করে স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকরা। এই ঘটনায় এক জন পাকিস্তানি নাগরিকসহ মোট ১২ জন নিহত হয়েছেন।
এ দিকে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে অভিবাসী বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে পুরো দক্ষিণ আফ্রিকায়। প্রতিদিন নতুন নতুন শহর, লোকেশনে ভাংচুর-লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটণা ঘটছে। কোনকিছুতে থামানো যাচ্ছেনা তাদের। ধ্বংসযজ্ঞে পরিনত হচ্ছে ম্যান্ডেলার আফ্রিকা লুটপাটেরকারীদের গুলিতে একজন পাকিস্তানি নাগরিক নিহত হয়েছে। লুটপাটের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পুলিশ এ পর্যন্ত শতাধিক কৃষাঙ্গ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করেছে । এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এবং অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা জোহানসবার্গ শহরে স্মল অ্যাস্টেট, ব্রি অ্যাস্টেট, জিপি অ্যাস্টেট, এমটিএন ট্যাক্সি রেংক, ব্রি ট্যাক্সি রেংঙ্ক, হিলব্রো, নিউটাউনসহ ফৌজবাগ মেফেয়ারের আশপাশের সকল শহরগুলোর মধ্যে জুইলিস মালভেন,তারপনটিন, রেন্ডপনটিন, প্রিমরোজ, পুস্তুরাজ, থেমবিছা, আলেকজান্ডার ,জার্মিস্টন, রজেটন বিল, নিউক্যাসেল বাংলাদেশিসহ অসংখ্য অভিবাসীদের ৫ শতাধিকের অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দিনভর হামলা ,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকরা। স্থানীয় প্রবাসী ব্যবসায়ীরা বারবার পুলিশের সহযোগিতার জন্য স্থানীয় থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশের উল্লেখযোগ্য কোন সহযোগিতা পায়নি । ফলে হামলাকারিরা আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রবাসী সহ গণমাধ্যমগুলো। এ দিকে জোহানসবার্গ শহরের আশপাশের সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল । গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে মালভেনের জুলিস অ্যাস্টেটে স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকরা নারকীয় তান্ডব চালিয়ে প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ শো-রুমে থাকা প্রায় শতাধিক গাড়ী পুড়িয়ে দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, সেন্ট্রাল সুপার সেইব, ডুরসাম , ফাতেমা ক্যাশ এন্ড ক্যারি, লো কষ্ট,বাই রাইট, বিসমিল্লাহ সুপার মার্কেট, ডি কে সুপার মার্কেট,এলডি শপ, বিগ সেইপ সুপার স্টোর, কেএনএল সুপার মার্কেট। ইতিমধ্যে প্রিটোরিয়া শহর ও তার আশপাশের এলাকায় হামলা ও লুটপাট চলছে। স্থানীয় অভিবাসীরা আশংকা
করছেএ হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে । অপরদিকে আন্তর্জাতিক তেল এবং গ্যাস সরবরাহ কোম্পানি টোটাল এক নোটিশের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের জন্য বিশ্বের কাছে
নন্দিত দেশটি অভিবাসী বিরোধী আন্দোলনের কারণে নিন্দিত হচ্ছে। জেনোপোবিয়া দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে স্থান করে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। পর্যটন নির্ভর দেশটি জেনোফোবিক আক্রমনের কারনে হারাতে বসেছে বিশ্বের হাজারো পর্যটকদের। আজকের স্থানীয় একটি চ্যানেলে,এসএবিসি টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যটন সংস্থাগুলো বলছে চলমান সহিংসতার কারণে হাজারো পর্যটক তাদের হোটেল বুকিং বাতিল করেছে। এয়ারলাইনস গুলো বলছে, প্রচুর সংখ্যক যাত্রী তাদের টিকেট রিফান্ড করেছে। হুমকি দেয়া হয়েছে আফ্রিকা ইউনিয়ন থেকে। প্রতিবাদ, ধিক্কার জানাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। চলমান পরিস্থিতির শুধু নিন্দা জানিয়ে ক্ষান্ত হননি নাইজেরিরার প্রেসিডেন্ট। এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। যদিও এই সফরে জেনোফোবিয়া নিয়ে তিনি কি বলেছেন তা পরিস্কার করেনি এখানকার মিডিয়াগুলো। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়ংকর তান্ডবে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি ও ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার (ইএফএফ) চলমান ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন জায়গায় অভিবাসীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর লুটপাট অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাব্বির আহমেদ চৌধুরীর প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত বাংলাদেশি প্রবাসীদের সর্তক থাকতে বলেছেন। এবং স্থানীয় পুলিশের সাথে সহযোগিতা করতে বলছেন । যখনই কোন ঘটনা ঘটে তা সাথে সাথে দূতাবাসে জানাতে বলেছেন রাষ্ট্রদূত। ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশিদের সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে গোটা দক্ষিণ আফ্রিকায় থম থম অবস্থা বিরাজ করছে।