আন্তর্জাতিক
  ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস : কলকাতায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন
  14-09-2019

কলকাতা থেকে, দিশা বিশ্বাস :
গত ১৫ আগস্ট ছিল বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। কলকাতায় দিনটি উদযাপিত হয়েছে যথাযোগ্য মর্যাদায়। এদিন সকাল ৮ টায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত কলকাতার ৮ স্মিথ লেনের সরকারি বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। মাল্যদান করেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান সহ উপহাইকমিশনের কর্মকর্তা ও কলকাতার বিশিস্টজনেরা । একই সঙ্গে বেকার হোস্টেলের এই স্মৃতিবাহী কক্ষের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যেও মাল্যদান করা হয়। কলকাতাস্থ সোনালী ব্যাংক, বিমান বাংলাদেশ সহ কলকাতার কয়েকটি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও মাল্যদান করা হয় বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যে। আরও মাল্যদান করেন বাংলাদেশের বিশিস্ট অর্থনীতিবিদ ও
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আতিউর রহমান, বাংলাদেশের সাংসদ অ্যারোমা দত্ত প্রমুখ। এরপর এখানে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিহত পরিবারবর্গের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। উপস্থিত অতিথিরা ঘুরে দেখেন বঙ্গবন্ধুর কক্ষ। এরআগে সকালে কলকাতা উপহাইকমিশনে অর্ধনমিত ভাবে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। এসময় রাস্ট্রপতি , প্রধানমন্ত্রী ও পররাস্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। সকাল ১০টায় উপহাইকমিশনে আয়োজন করা হয় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির। এখানে কলকাতাস্থ ডেপুটি হাইকমিশনের কর্মকর্তা, কর্মচারী সহ কলকাতায় পাঠরত বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। ছিলেন এঁদের মধ্যে উপহাইকমিশনের হেড অফ চ্যান্সারী জিএম জামাল হোসেন, কাউন্সিলর (কনসুলার) মো: বসির উদ্দিন, প্রথম সচিব (প্রেস) মো: মোফাকখারুল ইকবাল প্রমুখ। বিকেল ৬টায় কলকাতার কলামন্দিরের কলাকুঞ্জ সভাগৃহে ’জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ ’

শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় । আলোচনা সভায় অংশ নেবেন বাংলাদেশের বিশিস্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আতিউর রহমান, পশ্চিমবঙ্গের বিশিস্ট রাজনীতিবিদ আমজাদ আলি সহ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিশিস্টজনেরা।
প্রসঙ্গত, ১৯১০ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় এই বেকার হোস্টেল। এটি সরকারি ছাত্রাবাস। বঙ্গবন্ধু কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ডিগ্রি পড়ার সময় এই বেকার হোস্টেলে ছিলেন ১৯৪২-৪৭ সাল। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে তিনি ১৯৪২ সালে ভর্তি হয়েছিলেন এই ইসলামিয়া কলেজে। ছিলেন ২৪ নম্বর কক্ষে। সেদিনকার এই ইসলামিয়া কলেজের নাম পরিবর্তণ করে এখন নামকরণ করা হয়েছে মৌলানা আজাদ কলেজ। ১৯৪৬ সালে বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এই ইসলামিয়া কলেজ থেকে রাস্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে স্œাতক হয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে বেকার হোস্টেলের ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষ নিয়ে গড়া হয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ। এই স্মৃতি কক্ষে এখনও রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত খাট, চেয়ার, টেবিল এবং আলমারি। তৎকালিন বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালিন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসু ২৪ নম্বরের পাশের ২৩ নম্বর কক্ষটিকে যুক্ত করে স্মৃতি কক্ষ গড়ার উদ্যোগ নেন। সেই হিসাবে ১৯৯৮ সালের ৩১ জুলাই বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালিন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক সত্যসাধন চক্রবর্তী। এই বেকার হোস্টেলে ২০১১সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথম বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল । সেই ভাস্কর্য উন্মোচন করেছিলেন তৎকালিন বাংলাদেশের পররাস্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি। কিন্তু সেই ভাস্কর্যে বঙ্গবন্ধুর মুখমন্ডল যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি কলকাতার সেই ভাস্কর। এ নিয়ে পরবর্তীতে বারবার আপত্তি ওঠার পর এবার সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত অবয়ব ফুটিয়ে তুলে নতুন একটি ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেন বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম। তাঁরই উদ্যোগে এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে এখানে পুরনো ভাস্কর্যকে সরিয়ে নতুন ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর নতুন একটি ভাস্কর্য ঢাকা থেকে এনে ৩ আগস্ট তা স্থাপন করা করা হয়। এই ভাস্কর্যের আনুষ্ঠানিক উন্মোচন করেন মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম।