সারাদেশ
  শ্রীপুরে কাওরাইদ রেলক্রসিংয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার
  08-07-2019

                                      রেলক্রসিংয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার 

 

গাজীপুর প্রতিনিধি ঃ গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ বাজারে অবস্থিত একটি মাধ্যমিক ও একটি সরকারি প্রার্থমিক বিদ্যালয়ের প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী এবং কাওরাইদ ও গয়েশপুর এ দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার জনতা প্রতিদিন কাওরাইদ লেভেল ক্রসিং দিয়ে জীবণ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে ।যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে প্রাণ হানির মত ঘটনা । ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল সড়কে কাওরাইদ লেভেল ক্রসিংয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সিগনাল বার ও গেইটম্যান নেই । সরেজমিনে গিয়ে গত ৫ জুলাই শুক্রবার জানাযায় , গত কয়েক বছর ধরে কাওরাইদ ও গয়েশপুর এই দুই গ্রামের হাজার হাজার মানুষ সিগনাল বার ও গেইটম্যানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মানববন্ধন সহ নানামুখি উদ্যেগনিয়েও তারা ব্যার্থ হয়েছেন । কাওরাইদ লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পরে গত তিন বছর আগে কাওরাইদ কে এন ইচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নিহত হয়েছে ।এখানে মাঝে মাঝে লেভেল ক্রসিংয়ে আটকে যাচ্ছে মালবাহী ট্রাক, ট্রলিসহ নানা ধরনের লোড গাড়ী ।সচারাচর ঘটেই যাচ্ছে ছোট খাটো দুর্ঘটনা ।এসব এড়াতে মাঝে মধ্যে আন্ত:নগর ট্রেন সিগনাল দিয়ে থামিয়ে সরানো হচ্ছে আটকে যাওয়া যানবাহন । তাছাড়া রেল সড়কের ধারঘেষে সপ্তাহে দুদিন বাজার বসে । জীবন ঝুঁকি নিয়ে এলাকার ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছে । ট্রেন চলাচলের সময় যে কোনো ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে । রেল পথের উপর ভাসমান অবস্থায় বেচাকেনা করছেন আপনাদের ভয় করেনা ? এমন প্রশ্নের উত্তরে কাওরাইদ বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী আব্দুল বাতেন বলেন ট্রেন আসলে আমরা দোকান ছেড়ে চলে যাই, ট্রেন চলে যাওয়ার পরে আমরা আবার দোকানে বসে বেচাকেনা করি । কাওরাইদ বেলদিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে শারফুল ইসলাম বলেন কয়েক বছর ধরে আমরা শত বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি একজন গেইটম্যান ও সিগনালবারের জন্য । গত ২০ জুন কাওরাইদ কে এন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম ঢাকা গামি কমিউটার ট্রেন দাঁড়ানো দেখে সাইকেল নিয়ে লেভেল ক্রসিং দিয়ে পার হতে গেলে হঠাৎ দেখেন ময়মনসিংহগামি তিস্তা দ্রুতগতিতে ময়মনসিংহের উদ্যেশে আসতেছে । অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেন ।

কাওরাইদ বাজার এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান রমিজ বলেন , দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে আমরা লেভেল ক্রসিং নিয়ে অনেক আন্দোলন করেছি । কিন্তু ডিজিটাল যুগে আমাদের কথা শুনার যেন কেউ নেই ।

কাওরাইদ এলাকার নুরুল হকের ছেলে আলম বলেন কাওরাইদ লেভেল ক্রসিংয়ে সিগনাল বার বা গেইটম্যান কোনোটিই নেই । সিগনাল বার বা গেইটম্যান না থাকার কারনে অতীতে কয়েকবার বালি ভর্তি ট্রাক পারাপার হতে গিয়ে ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার সম্মুখিন হয়েছে । আতঙ্কের মধ্যদিয়ে লেভেল ক্রসিং পার হতে হচ্ছে । কাওরাইদ বাজার ফল ব্যবসায়ী আবু হানিফ জানায় আমরা সারাদিন এ খানে অবস্থান করি ।কওরাইদ লেভেল ক্রসিংয়ে একজন গেইটম্যান ও একটি সিগনালবারের প্রয়োজনীতা আমাদের ছাড়া আর কেউ উপলদ্ধি করতে পারে না ।

কাওরাইদ গয়েশপুর এলাকার মোশারফ হোসেন জানান আমরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজ ও লেভেল ক্রসিং পারাপার হই । কখন যানি বিপদের সম্মুখিন হই মনের ভেতর সব সময় একটা ভিতি কাজ করে । কাওরাইদ এলাকার আরব আলীর ছেলে মারফত আলী জানান , দীর্ঘ দিন যুদ্ধ করেও আজ আমরা ব্যর্থ হয়েছি লেভেল ক্রসিং এর জন্য । এখন সময়ের দাবি কাওরাইদ বাসির দাবিপূরণের । কারণ যতই দিন পার হচ্ছে মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে । সেই সাথে ট্রেন দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে । কাওরাইদ ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবু তাহের শেখ জানান বহুদিন ধরে কাওরাইদ বাসি কাওরাইদ বাজার অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে গেইটম্যান ও গেইটবারের জন্য সংগ্রাম করে আসছে । এত সংগ্রামের পরেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না ।

কাওরাইদ ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন জানায় , প্রাইমারি স্কুলে প্রায় ৮ শত শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে । বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাজারের পশ্চিম পাশ থেকে জীবণ ঝুঁকি নিয়ে অরক্ষিত লেভেন ক্রসিং পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা –যাওয়া করে । আমার স্কুলের সাথেই রয়েছে কাওরাইদ কে এন উচ্চ বিদ্যালয় । সেখানে প্রায় ১২ শত শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে । যে কোনো সময় ঘটতে পারে ট্রেন দুর্ঘটনার মত ঘটনা । তাই সময় এসেছে এখন দাবি পূরনের । কাওরাইদ কে এন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক অভিজিৎ রয় বলেন , কয়েক বছর আগে আমাদের স্কুলের এক শিক্ষার্থী ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে । প্রায় অর্ধ মাস পূর্বে আমাদের স্কুলের সহকারি প্রধান শফিকুল ইসলাম দাঁড়ানো ট্রেন দেখে লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় অপর দিক থেকে সিগনালবিহীন ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ছিলেন । অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায় তিনি । ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যদিয়ে আমাদের ছেলে মেয়েদের লেভেল ক্রসিং দিয়ে যাতায়েত করতে হয় । এই ।এলাকার বাসিন্দা হিসেবে আজ আমরা অসহায় ।

কাওরাইদ কে এন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হাসান নাজমুল বলেন, বেশ কিছুদিন আগে তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লেভেল ক্রিসিং পার হতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছে । একই সাথে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী এখানে পড়াশুনা করছে । কোমলমতি এসব শিশূদেও কাওরাইদ রেলস্টেশনের লেভেল ক্রসিং দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে ।

 

কাওরাইদ বাজার কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক ফকির জানায়, ভাই গরিব মানুষ ভাসমান অবস্থায় কাওরাইদ বাজারে সপ্তাহে দুদিন দোকান বসায় । এতে যে আয় হয় তাদিয়ে তাদের পরিবার চলে । গরিব মানুষের পেটে লাথি দিতে চাচ্ছি না । আমি ইচ্ছে করলে আগামিকালই ভাসমান বাজার বন্ধ করে দিতে পারি ।

কাওরাইদ রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, এ লেভেল ক্রসিংয়ে একবার ট্রেনে কাটা পড়ে ছাত্রী নিহত হয়েছে । কাওরাইদ বাজারে লেভেল ক্রসিংয়ে সিগনাল বার ও গেইটম্যানের প্রয়োজন রয়েছে । এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে । স্টেশনমাস্টার বলেছেন আগামি আগস্টের আগে এ সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ । রেল পথে ভাসমান বাজারের ব্যাপারে রেল স্টেশন মাস্টার বলেন বাজার তো রফিক ফকির বসিয়েছে । উনাকে একাধিকবার বাজার বিষয়ে বলেছি কিন্তু তিনি কখনোই এ বিষয়ে কর্ণপাত করেননি ।

কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ডালি বলেন , এখানকার সব মানুষ লেভেল ক্রসিংয়ের জন্য দিনের পর দিন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত ও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। লেভেল ক্রসিংয়ের আশপাশে একটি কলেজ, একটি মাধ্যমিক, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা রয়েছে। লেভেল ক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন দূর-দূরান্তের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এছাড়াও এখানে একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ ও গাজীপুর জেলার বৃহত্তম একটি বাজার রয়েছে