সারাদেশ
  আগুন নিভাতে গিয়ে শ্রমীকদের মৃত্যু, স্বজনদের দাবি শ্রীপুরে কারখানায় আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬ ॥
  03-07-2019

                                     গাজীপুরের  শ্রীপুরে স্পিনিং মিলসে আগুন

আতাউর রহমান সোহেল ,গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরের  শ্রীপুরে স্পিনিং মিলস আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬ ।উদ্ধার প্রক্রিয়া চলমান । নিহতের স্বজন ও সহকর্মীদের দাবি আগুন নিভাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর বাজার এলাকায় অবস্থিত ফরিদপুর গ্রামে অটো স্পিনিং মিলিস লিমিটেডে তুলার গোডাউনে আগ্নিকান্ডে ঘটনা ঘটেছে । গত ২ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে অটো মিলস এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে । এতে ৬ জন শ্রমীকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ।

মঙ্গলবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকার অটো স্পিনিং কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। কারখানার ব্যাক প্রসেসিং ইউনিটে (তুলা উৎপাদনের প্রাথমিক ইউনিট) আগুনের সুত্রপাত ও পরে তা বিভিন্ন ইউনিটে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ২২ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।তবে বুধবার সকালে হালকা ধোঁয়া বের হতে দেখাযায়

 গাজীপুরের শ্রীপুরে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৬ বুধবার বিকেল পর্যন্ত জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

নিহতরা হলেন ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার উলুন গ্রামের আলাল উদ্দিনের ছেলে রাসেল (৪৫), শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ ধনুয়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে আনোয়ার হোসেন(৩২), গাজীপুর গ্রামের মো. হাসেন আলীর ছেলে শাহ জালাল(২৫), কালিয়াকৈর উপজেলার মৃত শামসুল হকের ছেলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার সেলিম কবির (৪২), ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ভূবনকোড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আবীর রায়হান (২১) ও পাবনা জেলার আমীনপুর উপজেলার মৃত কেরামত সর্দারের ছেলে সুজন(৩০)।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান জানান, পুড়ে যাওয়া কারখানায় মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বুধবার সকাল ৯টার দিকে তিনটি ও দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুটি লাশের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর আগে আগুন লাগার কিছুক্ষন পর আহত একজনকে হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। নিহতদের স্বজন ও সহকর্মীদের দাবী, আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়।এগুলো উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। এ মুহুর্তে তাদের কারও নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা এখন ৬।

কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নূর জাহান জানান, ঘটনার সময় বি শিফটে মোট ৩’শ শ্রমিক কাজ করছিল। কারখানার দেড়তলা উচ্চতার আধাপাকা ব্যাক প্রসেসিং ইউনিটে আগুন লেগে মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি অভিযোগ করেন, ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে খবর দেয়ার পর বিলম্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। আগুনে কোটি কোটি টাকার মেশিনপত্র ও তুলার বেল পুড়ে গেছে। তারা অনেকটা খামখেয়ালিপনার মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন। কারখানার প্রতিবেশী সফিকুল ইসলাম জানান, আগুনে কারখানার চারদিকের দেয়াল ফেটে গেছে। আগুন থেকে রক্ষা পেতে তার মতো অন্য প্রতিবেশীরা বাইরে থেকে কারখানার দেয়ালে পানি ছিটিয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন স্বাভাবিক সক্রিয় হয়।সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের জনবল বৃদ্ধি করতে থাকেন । বাতাশের সাথে আকাশে কালো ধোঁয়া ভেসে বেড়াচ্ছিল । এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল । দূর পাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তির স্বিকার হয় । মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে ।

 

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীনুর ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, পরিচালক শিল্প পুলিশ গাজীপুর এর প্রতিনিধি (উপ-পরিচালক পদমর্যাদার), জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার, গাজীপুরের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এর উপ মহাপরিদর্শক এবং গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক। তাদেরকে আগামী ৭ কর্ম দিবসের মধ্য তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।