সারাদেশ
  গাজীপুরে প্রসূতিদের জিম্মি করে ক্লিনিক মালিকদের অর্থ বাণিজ্য
  02-07-2019

গাজীপুর প্রতিনিধি ঃ গাজীপুর উপজেলা শ্রীপুরে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকেরা প্রসূতিদেরকে জিম্মি করে অর্থবাণিজ্যর উদ্যেশে চিকিৎসক থেকে শুরু করে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো রোগীসহ স্বজনদের নরমালে ভয় দেখিয়ে সিজারে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
গাজীপুরের শ্রীপুরে স্বাভাবিক প্রসবের তুলনায় সিজারিয়ান পদ্ধতিতে আশঙ্কাজনক ভাবে সন্তান জন্ম হওয়ার হার বেড়েই চলছে ।গোপনসূত্রে জানাযায়, শ্রীপুরে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো কোনো প্রসূতি পেলেই এক শ্রেণীর অসাধু চিকিৎসক থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালসহ সকলে মিলে বিভিন্ন অজুহাতে রোগীকে নরমাল ডেলিভারির ব্যাপারে কৌশলে মানসিকভাবে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলেন ।এমনকি নরমালে ভয় দেখিয়ে রোগীকে সিজারে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ।এ ছাড়াও সিজারের প্রয়োজন না হলে মা কিংবা নবজাতকের ক্ষতি হওয়ার ভয়ও দেখানো হয়ে থাকে ।আর ঠিক তখনই রোগীর স্বজনরা নিরূপায় হয়ে প্রসূতি ও সুস্থ সন্তানের স্বার্থে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করাতে বাধ্য হন ।সেই সুযোগ কাজেলাগিয়ে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।পরিসংখ্যান ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন , সিজারিয়ান পদ্ধতিতে যেসব নবজাতকের জন্ম হচ্ছে তার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ অপ্রয়োজনীয় । সিজারে বাচ্চা প্রসবের ফলে ঝুঁকির মধ্যে থাকছেন মা ও শিশু উভয়েই । শ্রীপুর উপজেলা সরকারি হাসপাতালে প্রতি একশ নবজাতকের মধ্যে শতকরা ৯৩ ভাগ জন্ম স্বাভাবিকভাবে হলেও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে সিজারের হার বেশি । অনেক রোগীর স্বজনরা জানেন না সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম হওয়ার পর মা ও সন্তান দুজনই দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগে আত্রান্ত হতে পারেন ।
শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামের বাসিন্দা সোহেল মিয়া জানান, তাঁর স্ত্রীকে অল্প কিছুদিন পূর্বে মাওনা চৌরাস্তার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে আল্ট্রা¯েœা করাতে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার বলেন তাঁর গর্ভের সন্তান বড় হয়ে গেছে এজন্য নরমালে সম্ভব নয় সিজারে বাচ্চা প্রসব করাতে হবে। তাঁদের নরমালে ভয় দেখিয়ে সিজারে বাচ্চা প্রসব করাতে বাধ্য করেছিল ।বর্তমানে সোহেলের স্ত্রী বিভিন্ন জটিল সমস্যায় ভোগছেন ।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান অফিস দেওয়া তথ্য মতে ,২০১৮ সালে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সন্তান প্রসবের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন দুই হাজার দুইশত ৩২জন প্রসূতি । তাদের মধ্যে এক হাজার পাঁচশত ৬৮ জনের সিজারে সন্তান প্রসব হয়েছে । আর মাত্র ৬৬৪জনের হয়েছে নরমাল প্রসব । তাছাড়া ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত মোট ভর্তি হয়েছিল ৮২০ জন প্রসূতি । তার মধ্যে সিজারে সন্তান প্রসব হয়েছে ৫৭৩ জন আর নরমালে মাত্র ২৪৭ জন । প্রাইভেটের তুলনায় শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতালে ২০১৮ ও ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত মোট সন্তান প্রসবের জন্য ভতি হয়েছিল সর্বমোট ৩৮১জন প্রসূতি । তার মধ্যে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ৩২৫ জনের আর সিজারে হয়েছে মাত্র ৫৬ জন প্রসতি ।
সরেজমিন ঘুরে একাধিক ভোক্তভোগীর নিকট থেকে জানাযায় , সিজারিয়ান সেকশন এখন বেশিরভাগ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বড় ও প্রধান ব্যবসায় পরিণত হয়েছে । এ প্রবণতা রোধতো করাই যাচ্ছে না বরং দিন দিন প্রাইভেট হাসপাতাল –ক্লিনিকগুলো আরো পেরোয়া হয়ে উঠছে । একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় নরমাল ডেলিবারির চেয়ে সিজারিয়ানে সংশ্লিষ্ঠ চিকিৎসক অনেক বেশি টাকা পান । তাছাড়া প্রাইভেট হাসপাতালে কোনো প্রসূতি গেলে অযথায় অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে ডাক্তারগন হাসপাতাল কৃর্তপক্ষকে অধিক টাকা আয়ের পথ বের দিচ্ছে ।কারণ প্রসূতি মাকে বেশি সময় হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে । আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঔষুধ, অপারেশন সহ অন্যান খরচও বেশি আদায় করা হচ্ছে ।

শ্রীপুর উপজেলা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডাইয়াগোনেস্টিক সেন্টারের মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন,শ্রীপুরে কোনো প্রাইভেট হাসপাতালে অজ্ঞাণ ডাক্তার নেই । অজ্ঞাণ ডাক্তার ছাড়া সিজার করা অসম্ভব । আমরা অজ্ঞাণ ডাক্তার ও সার্জন কল করে সিজার সম্পর্ণ করি ।রৌগির স্বজন, অজ্ঞান ডাক্তার ও সার্জনের উপস্থিতিতে একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে সিজার করা হয় ।কিন্তু অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্যন করতে যদি কোনো হাসপাতাল মালিক সম্মতিপত্র ছাড়া সিজার করে আর এত কোনো জামেলা হলে এর সম্পূর্ণ দায়ভার ঐ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে । অবৈধভাবে অর্থ উপাজনের উদ্দেশ্য এমন কাজ করলে আমরা জানার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো ।
শ্রীপুর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আমান উল্লাহ বলেন,২০১৮ সালে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্র ২৩৭ জন প্রসূতি ভর্তি হয়েছিল ।তার মধ্যে নরমাল প্রসব ২২০ আর সিজারে ১৭ জন বাচ্চা প্রসব করেন । অপরদিকে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে সিজারে ১৫৬৮ জন ও নরমালে ৬৬৪ জন ।সরকারি হাসপাতালের তুলনায় প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারের সংখ্যা বেশি । প্রাইভেট হাসপাতালগুলো রোগীকে সিজারে ড্রাইভ করে । কারণ সিজারে অতিরিক্ত অর্থ আসে ।
এ ব্যাপারে প্রসূতি , স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা: জহিরুন্নেছা রেনু বলেন শিশু ও মায়ের অবস্থার ওপর নির্ভর করে সিজার কিংবা ডেলিভারি নির্ধারণ করা হয় । যদি কোনো মায়ের প্রথম সন্তান সিজারে জন্ম হয়,তাহলে পরবর্তীতে বাকি সন্তানও সিজারে নির্ভর হতে হয় । তিনি আরো বলেন সিজারে বাচ্চা হলে নারী তার স্বাভাবিক জীবণ থেকে বঞ্চিত হন ।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মইনুল হক খান বলেন ,আমাদের কোনো অজ্ঞাণের ডাক্তার নেই । তাই সকল ব্যবস্থাপনা থাকা স্বতেও আমরা সিজার করতে পারি না । আর ঐ সময় রিক্র নিয়ে যদি কোনো রোগীকে ট্যায়াল দেই তবে বাচ্চাটা খারাপ হবে । যদি বুঝি কোনো প্রসূতির স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগবে তখন রোগীকে আমরা কাউনছিলিং করি যে আমাদের কোনো অজ্ঞানবিদ নেই ।এ কথা শুনার পরে কোনো রোগী সহজে রাখেনা । যদি তারা শর্ত মানে তবে আমরা সিজার করি নতবা অন্যত্র টান্সফার করি ।