নিজস্ব প্রতিবেদক : ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া আরো সাত নারীকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) সার্বিক সহায়তায় ১৮ এপ্রিল বিমানযোগে দিল্লী-কলকাতা হয়ে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। যাদেরকে উদ্ধার করা হয় তারা হচ্ছেন, নারায়নগঞ্জের রুুবিনা আকতার (১৮), ঢাকা দক্ষিন খানের শারমিন আকতার (২১), বাগেরহাট, রাখি বেগম (২৬), ঢাকার জুরাইনের শিল্পি ( ৩১), রংপুরের, আমিনা খাতুন (২২), আলমডাঙ্গা, জেলা : চুয়াডাঙ্গা, রুবিনা খাতুন এবং মুন্সীগঞ্জের মায়া আকতার (২২)। ভারতের দিল্লী থেকে উদ্ধার ৭ নারীকে বাংলাদেশে প্রর্ত্যাবসনের বিষয়ে হায়দ্রাবাদের প্রাজোলা হোম তাদের সার্বিক সহায়তা করে।বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি প্রজেক্ট হেড মালিহা সুলতানা রীনা আক্তার জানান, ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা সাত (৭) জনকে হযরত শাহজালাল(র) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে গ্রহন করার পর ঢাকায় অবস্থিত সমিতির সেফহোম ”প্রশান্তি” রেখে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। এরপর তাদেরকে ২৫ এপ্রিল পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরআগে ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় ভারতে পাচার হওয়া ২৪ জন বাংলাদেশি যুবক দীর্ঘ আড়াই বছর ভারতে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ৫ এপ্রিল সকালে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরে আসে তারা। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদেরকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে। ইমিগ্রেশন পুলিশ আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে বেনাপোল পোর্ট থানায় সোপর্দ করা হয়। পরবর্তীতে বেনাপোল পোর্ট থানা কাগজপত্র যাচাই শেষে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে রাইটস যশোর নামে একটি এনজিও সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে বলে পুলিশ জানায়। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে ১১ জন কিশোর ও ১৩ জন যুবক রয়েছে। তাদের বাড়ি সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তারা হচ্ছে- খুলনা জেলার জাফর চৌধুরীর ছেলে জুয়েল চৌধুরী (২৩), মাজেদুল ইসলামের ছেলে সফিকুল ইসলাম (৩৩), বরকত শেখের ছেলে তরিকুল ইসলাম (২৩), আমিন সরদারের ছেলে লিটন মোহাম্মাদ (২৮), শাহাদতের ছেলে রফিকুল ইসলাম (২৬), আব্দুল ছাত্তার খানের ছেলে বাবু খান (২৭), রফিকুল ইসলামের ছেলে রিফাত খান (২২), রেজাউল ইসলামের ছেলে সাগর হোসেন (২৪), আখতার খানের ছেলে রাকিব খান (২৪), রেজাউল শেখের ছেলে হাসান শেখ (২২), জাহাঙ্গীর হাওলাদারের ছেলে রনি হাওলাদার (২৩), যশোর জেলার আমজাদ হোসেনের ছেলে সাজ্জাদ মোল্যা (২৬), আব্দুল হোসেনের ছেলে জামাল মোল্যা (২৪), জহুর আলী সরদারের ছেলে নজরুল ইসলাম (২৩), গফফার গাজির ছেলে ইমাম হোসেন (২২), আবুল হোসেনের ছেলের আল- আমিন (২৩), হাবিবুর রহমানের ছেলে সাদ্দাম বেপারী (২৮), আব্দুল খায়েরের ছেলে আলামিন (২৫), মহাসিন শেখের ছেলে রাজিব শেখ (২০), আবুল খালেকের ছেলে সাব্বির হোসেন (২২), আলমগীর মোলার ছেলে আশরাফ হোসেন (২৫), বাগেরহাট জেলার মহিমুদ এর ছেলে নুর ইসলাম (৪৬), আছাদের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৪৬) ও সাতক্ষীরা জেলার সবেদ আলীর ছেলে আব্দুল গনি (৩৮)। এছাড়া মানবাধিকার খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক রোটা. মো. রিয়াজ উদ্দিন অনুসন্ধানী অভিযান চালিয়ে গত চার বছরে ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া প্রায় ৩০ জন শিশু-নারীকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাদের পরিবারের কাছে। উদ্ধার হওয়া এসব শিশু-নারীরা ফিরে পেয়েছে এক নতুন জীবন। ফলে, মহা আনন্দে মাতোহারা এসব পরিবার। সফলতার সঙ্গে একের পর এক শিশু-নারীদেরকে উদ্ধারে সক্ষম হওয়ায় অনেক পরিবার এখন ছুটে আসছেন মানবাধিকার খবর অফিসে। কেউ তার সন্তান, কেউ তার পরিবারের সদস্যকে উদ্ধারে চাইছেন সহায়তা।
বিভিন্ন দেশে পাচার : তৃতীয় বিশ^ বা গরীব দেশ থেকে বিভিন্ন দেশে নারী ও শিশু পাচারের মতো জঘন্যতম, নিকৃষ্ট, অমানবিক ও সমাজবিরোধী অপরাধমূলক কাজটি বহুকাল থেকে চলে আসছে। তবে, বিগত দু’আড়াই যুগ ধরে এই অপরাধের প্রবণতা যেন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ থেকেও অসখ্য নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) এর তথ্যে মতে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ২০ হাজার নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে। পাচার রোধে সরকারের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও পাচারকারীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের একাধিক রুট দিয়ে নিত্যনতুন কৌশলে তারা নারী-শিশুদের ফাঁদে ফেলে পাচার করছে। কলেজপড়–য়া ছাত্রীদের বিয়ের প্রলোভন, দরিদ্র-অসহায় নারীদের বিদেশে গৃহপরিচারিকার কাজ, গার্মেন্টের নারীদেরও ভালো কাজের কথা বলে পাচার করা হচ্ছে। আর পাচারের শিকার ৬০ ভাগের বয়সই ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। নারী ও শিশুদের সহজে ফাঁদে ফেলতে পাচার কাজে নারী দালালদের বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলে । বিএনডব্লিউএলএ-এর গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভারতীয় একটি চক্র তাদের দালালদের মাধ্যমে প্রথমে পাচারকৃত নারীদের সংগ্রহ করে। আর প্রত্যেক নারীর জন্য দালালদের ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পরে এসব নারীকে কলকাতা, মুম্বাই, হায়দরাবাদসহ বিভিন্ন শহরের পাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিভিন্ন রুটের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের বিভিন্ন রুট দিয়ে আর সাতক্ষীরার কয়েকটি সীমান্ত দিয়েও ভারতে নারী পাচার হচ্ছে। অন্যদিকে সেন্টার ফর উইমেন্স অ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজের তথ্যে, স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি নারী ও শিশু পাচার হয়েছে। এসব পাচার হয়ে যাওয়া উল্লেখসংখ্যক নারীদেরকে দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেহ ব্যবসা ছাড়াও নারী-শিশুদের দিয়ে অশ্লীল ছবি নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ
কাজ করানোসহ মধ্যপ্রাচ্যের ধনী ব্যক্তিদের কাছে দাসী হিসেবে বিক্রি করা হয়। পাচারের উদ্দেশে কলকাতা, মুম্বাই ও হায়দরাবাদকেন্দ্রিক পাচারকারী চক্র দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। তারা ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মফস্বলের ও গ্রামের উঠতি বয়সের কিশোরীদের ফাঁদে ফেলছে।
ভারতের যৌনপল্লিতে বাংলাদেশি নারী-শিশু : বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের সঙ্ঘবদ্ধ পাচারকারীরা ভাগ্য বিড়ম্বিত নারী ও শিশুদের সরলতা ও অসচেতনতাকে পুঁজি কওে তাদেরকে পণ্য হিসেবে বিক্রি করে দিচ্ছে যৌনপল্লিতে। ফলে ভারতের যৌনপল্লিগুলোতে শিশু, কিশোরী ও নারীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও কুষ্টিয়া ছাড়াও অন্যান্য এলাকার গ্রামাঞ্চলের অসহায় পরিবারের শিশু-নারীরাই প্রতারক চক্রের খপ্পড়ে পড়ছে। অনেক সময় এসব চক্রের সদস্যরা তাদের কাছের বা দূরের স্বজনদেরকেও টার্গেট করতে কুন্ঠাবোধ করেনা। এদিকে ভারতের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে আসা একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানান, ভারতের মুম্বাই, গোয়া, পুনে এই শহরগুলোর যৌনপল্লিগুলোতে উদ্বেগজনক হারে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। সূত্র মতে, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত মুম্বাই, গোয়া, পুনে, কেরালা, দামান ও তামিলনাডু থেকে উদ্ধারের পর অন্তত ৩৭০ জন নারী ও শিশুকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
নারী-শিশু উদ্ধারে মানবাধিকার খবরের অনুসন্ধান শুরু যেভাবে : ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। এক কলেজছাত্রীকে পাত্র দেখানোর নাম করে গ্রামের বাড়ি থেকে জেলা শহরে নিয়ে যায় তাঁর চাচাতো দুলাভাই। কলেজছাত্রী সাবানা আক্তারের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার একটি গ্রামে। পরিবার জানায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি পাত্র দেখিয়ে বাড়িতে দিয়ে যাওয়ার কথা বলে মেয়েটিকে নিয়ে যায় আল আমিন (২৮) নামের তাঁর চাচাতো দুলাভাই। পরে মেয়েটি আর বাড়ি ফেরেননি। এ ঘটনায় এক সপ্তাহ বাদে ৮ মার্চ মেয়েটির বাবা আজাহার আলী শেখ কচুয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। একমাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ১ এপ্রিল রাতে সাবানা ফোন করে তার মায়ের কাছে। ফোনে সে জানায়, দুলাভাই তাকে না জানিয়ে সাতক্ষীরা নিয়ে এক মহিলার হাতে তুলে দেয়। ওই মহিলা তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। সাবানা জানায়, সে ভালো আছে বলে ফোন কেটে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার কল ব্যাক করেও সংযোগ পওয়া যায়নি। এরপর ঢাকায় বসবাসকারি সাবানার মামা মানবিধাকার খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক রোটা. মো. রিয়াজ উদ্দিনকে বিষয়টি জানানোর পর রিয়াজ উদ্দিন ওই নাম্বারে কল দেয়। তখন অন্য এক মহিলা কলটি রিসিভ করে এবং সে জানায় তার নাম সীমা। বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নন্দী গ্রামে। মহিলাকে রিয়াজ উদ্দিন নিজের পরিচয় দিয়ে তার ভাগ্নিকে সে কিভাবে পেল, ভারতেই বা গেল কিভাবে এসব প্রশ্ন করা হলে মহিলাটি এসব প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে। কিছুটা জোরজবরদোস্তি করার পর মহিলাটি এক পর্যায়ে জানায়, সাবানাকে একটি বাসের মধ্যে অসহায় অবস্থায় দেখে ওর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম বাড়ি বাংলাদেশে। মেয়েটির অসহাত্বের কথা বিবেচনা করে ওকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি এবং আমার বিউটি পার্লারে একটি কাজ দিয়েছি। ও এখন ভালো আছে। এসময় মহিলাটি জানায়, অভিভাবকদের কেউ এলে তাঁর হাতে সাবানাকে তুলে দেওয়া হবে। এসময় ভাগ্নি সাথে কথা বলতে চাইলে মহিলাটি জানায় ঘন্টা খানেক পরে কথা বলিয়ে দেব। অথচ, ওই রাতে তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। পরদিন সকাল থেকে চেষ্টার পর বিকেলে সংযোগ পাওয়া গেলে মহিলাটি জানায়, অধাঘন্টা পর কথা বলিয়ে দেব বলে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। আগাগোড়া মহিলার অসলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় ভাগ্নির খোঁজ করতে সাবানার মামা রিয়াজ উদ্দিন দ্রুত চলে যান কোলকাতায়। কোলকাতায় গিয়ে ওই নাম্বারে কল দেয়া হলে মহিলাটি অসৌজন্যমূলক আচরণ করে কলটি কেটে দেয় এবং ২-৩ দিন নাম্বারটি বন্ধ রাখে। অনেক চেষ্টা করে দিন তিনেক বাদে আবার সংযোগ পাওয়া গেলে এক পর্যায়ে মহিলাটি আমার ভাগ্নির সাথে আমাকে কথা বলিয়ে দেয়। কিন্তুৃ ১০-১২ মিনিটের ফোনালাপে ভাগ্নির মুখ থেকে কোন তথ্য বের করা যায়নি। কারণ, সে যে একটি ভীতিকর পরিস্থিতিতে রয়েছে ফোনের কথাবার্তায় তা’ স্পষ্ঠ আভাষ পাওয়া যায়। প্রকৃত পক্ষে তার মুখ থেকে পাচারকারি চক্রের শিখিয়ে দেয়া বুলি’র প্রতিধ্বনি ফুটে উঠে। এক পর্যায়ে তার অবস্থান সম্পর্কে আমাকে কিছুই বলতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে ফোনটি কেটে দেয়। কয়েক ঘন্টা বাদে আবার কল দেয়া হলে মহিলাটি হুমকির সুরে বলে মেয়েটির ভালো চাইলে এই নাম্বারে আর কল দিবেন না। রিয়াজ উদ্দিন জানান, এই পরিস্থিতিতে পরদিন ৬ মে কলেজ শিক্ষার্থী সাবানাকে উদ্ধারের ব্যাপরে সহায়তা চেয়ে কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন, পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশন, রাজ্য পুলিশের কাছে আবেদন জানায়। পুলিশ উক্ত মোবাইল ফোন নাম্বারটি ট্র্যাকিং করে জানতে পারে মোবাইলের সিমটি ভারতের বিহার অথবা ঝাড়খ- রাজ্য থেকে ক্রয় করা। তবে, এইটি দিল্লিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাচারে সহায়তা করা স্বজনের ওপর চাপ সৃষ্টি, মোবাইল নাম্বারের সূত্র ধরে ও নানা ভাবে অনুসন্ধান চালানো হয়। ঢাকা-কোলকাতা-দিল্লি দৌড়-ঝাপ করতে হয় একাধিকবার। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে নিশ্চিত হওয়া যায় দিল্লি থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে রুদ্রপুরে সাবানা অবস্থান করছে। দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন ও দিল্লির স্টপ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠনের সহযোগিতায় প্রায় আড়াই মাস বাদে উত্তরাখন্ড রাজ্যের রুদ্রপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। ফিরে আসে মা-বাবার কোলে। উদ্ধারের পর সাবানা জানায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে তাকে দিল্লিতে এক মহিলার হাতে তুলে দেয়া হয়। ওই মহিলার ইশারায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রাখা হয় তাকে। অনেক দফা চেষ্টার পর পালিয়ে দিল্লির গ্রীন পার্ক এলাকায় প্রিয়া নামের এক মহিলার কাছে আশ্রয় নেয়। প্রিয়ার কাছে আশ্রয় নেয়ার পর বাংলাদেশে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে সাবানা। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে ফেরতের ব্যাপরে সহায়তা চাওয়া হলে প্রিয়া পাশ কাটিয়ে যায়। পরে সাবানা বুঝতে পারে আবারো সে দুষ্টু প্রকৃতির মহিলার খপ্পরে পড়েছে। প্রিয়াও অসৎ উদ্দেশে তাকে আশ্রয় দিয়েছে। সাবানার বাড়ি বাংলাদেশে এবং সে এখন বিপদগ্রস্থ্য জানিয়ে ওই বাড়ি কেয়ার টেকারের অমিতের সাহায্য প্রার্থনা করে। মানবিক দিক বিবেচনা করে অতি গোপনে ও সুকৌশলে সাবানাকে দিল্লি থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে নিজ গ্রামের বাড়ি রুদ্রপুরে নিয়ে যায় অমিত। তারপর পরিবারকে খবর দেয়া হলে সেই খবরের ভিত্তিতে পাচারকারিদের হাত থেকে রক্ষা পায় সাবানা। এদিকে প্রায় আড়াই মাস অনুসন্ধান চালিয়ে ভাগ্নিকে পাচারকারির হাত থেকে উদ্ধারে সফল হওয়ার খবরটি চারিদিক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, পাচার হয়ে যাওয়া শিশু-নারী’র অনেক পরিবারের সদস্য এবং স্বজনেরা ছুটে আসে মানবিধাকার খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক রোটা. মো. রিয়াজ উদ্দিনের কাছে। কেউ তাদের সন্তান আবার কেউ স্বজনকে উদ্ধারে সহায়তা চান তারা। নিজ ভাগ্নি পাচার হয়ে যাওয়ার ঘটনায় অনুভূত মনের ব্যাথা ও মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে শিশু-নারী’ উদ্ধার কাজ শুরু করেন রোটা. মো. রিয়াজ উদ্দিন। এক এক করে ভারতের উত্তরাখ- প্রদেশের রুদ্রপুর থেকে পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশী কলেজছাত্রী সাবানা আক্তার চায়না, হায়দ্রাবাদ থেকে গৃহবধু মুন্নি, পশ্চিমবঙ্গের লক্ষীকান্তপুর থেকে শার্শার কিশোর বিপ্লব, হুগলী থেকে গাইবান্ধার মানুষিক প্রতিবন্ধী সালমা, দিল্ল¬ীর তিহার জেল থেকে পটুয়াখালীর বিউটি আক্তার, খুলনার শিশু সুমন, শারীরিক প্রতিবন্ধী সজীব ঢালী ও সর্বশেষ কিশোর ছামিরুলসহ এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ নারী-শিশুকে ভারত থেকে সাফল্যের উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে এনে মা-বাবা ও আইনের হাতে তুলে দিয়ে সাফল্য দেখিয়েছে। এছাড়া ভারতীয় কিশোরী বৈশাখী ও পাকিস্তানের নাগরিক প্রকৌশলী অনিল কুমারকে বাংলাদেশ থেকে উদ্ধারের সার্বিক সহযোগিতা করে নিজ দেশে পাঠাতে সহায়তা করে মানবাধিকার খবর।
সর্ব শেষ উদ্ধার : ভারত থেকে সর্বশেষ উদ্ধারকৃত যে ৭ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে তারা হচ্ছে, ১. রুুবিনা আকতার (১৮), গ্রাম : আমলা বো থানা- রুপগঞ্জ, জেলা : নারায়নগঞ্জ, ২. শারমিন আকতার এইচ বেথী (২১), গ্রাম- দাকিমপারা,আশকোনা জায়োর,হাজি ক্যাম্প পো: আশকোনা,হাজি ক্যাম্প থানা- দক্ষিন খান , জেলা- ঢাকা. ৩. রাখি বেগম (২৬), গ্রাম- পূর্বশালাবইনা, পো: +থানা- মংলা বন্দর, জেলা- বাগেরহাট,৪. শিল্পি ( ৩১) গ্রাম: পূর্ব জুরাইন মিষ্টির দোকান মোড়,থানা- জুরাইন, জেলা : ঢাকা,৫. আমিনা খাতুন (২২), গ্রাম: জামকুঠি পো: নাওডাঙ্গা, থানা- ফুলবারী, জেলা : রংপুর,৬.মধু@ রুবিনা খাতুন(২৭) গ্রাম: নোলামারি, পো: রামদিয়া থানা- আলমদাঙ্গা, জেলা : চাঁদগাঁও,৭.মায়া আকতার (২২), গ্রাম: বিক্রমপুর , মুন্সিপারা, পো:+থানা- শ্রীনগর, জেলা : মুন্সীগঞ্জ। উদ্ধার কাজে সহায়তায় দিয়েছেন যারা : মানবাধিকার খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক রোটা. মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, পাচার হয়ে যাওয়া নারী-শিশু উদ্ধার কাজে দু’দেশে যাদের সহযোগীতা-সহায়তা পেয়েছেন তারা হচ্ছেন, কলকাতাস্থ উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান, কাউন্সিলর ও হেড অব চ্যাঞ্চেলর মিয়া মো. মাইনুল কবির, ফাষ্ট সেক্রেটারী (প্রেস) মো. মোফাক্কারুল ইকবাল, কাউন্সিলর বি এম জামাল হোসেনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান ও কাজী রিয়াজুল হক, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত, পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান নপরাজিৎ মূখার্জি, রাজ্য সভার সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, লোকসভার সংসদ সদস্য ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান শ্রীমতি প্রতিমা ম-ল, আলিপুর ভবানী ভবনে দক্ষিন ২৪ পরগনায় জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্রীমতি শান্তি দাস, জেলা ইন্টেলিজেন্ট ব্রাঞ্চের নিবেদিতা তালুকদার এডিশন সেক্রেটারি ফরেনার্স গভ পশ্চিমবঙ্গ হোম ডিপার্টমেন্ট গৌরাঙ্গ সরকার। জেলা শিশুরক্ষা সমিতির কর্মকর্তা অনিন্দ ঘোষ, কলকাতার সল্টলেকে বিকাশ ভবনে অবস্থিত শিশু রক্ষা প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুচরিতা, প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি অমর সাহা, মানবাধিকার খবর পত্রিকার কলকাতা প্রতিনিধি দিশা বিশ্বাস, ভারত প্রতিনিধি মনোয়ার ইমাম, বারাসাত প্রতিনিধি প্রদীপ রায় চৌধুরী, মানবাধিকার খবরের কলকাতাস্থ আইন উপদষ্টা রাজীব মুখার্জি, নিলোৎপল মৈত্র প্রমুখ।
মানবাধিকার খবরঃ মোঃ রবিউল ইসলাম
|